ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখর রাঙামাটি

প্রকাশিত: ১৭:৩২, ১৩ এপ্রিল ২০২৪

ঈদের ছুটিতে পর্যটকের পদচারণায় মুখর রাঙামাটি

পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত

ঈদ ও নববর্ষের লম্বা ছুটিতে পর্যটকের ভিড়ে জমজমাট রাঙামাটি। শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে প্রকৃতির কোলে নিজেদের সপে দিতে হ্রদ পাহাড়ের শহর রাঙামাটিতে ছুটে এসেছেন হাজারো পর্যটক। বুকিং হয়ে গেছে শহরের প্রায় বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল। রাঙামাটি শহর এখন পর্যটকে মুখরিত। 

গতকাল শুক্রবার (১২ এপ্রিল) রাঙামাটিতে পর্যটকদের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও শনিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল থেকেই পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত পর্যটকদের গাড়ি শহরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। শহরের রিজার্ভ বাজার বাসস্ট্যান্ডে পর্যটকবাহী গাড়ির উপস্থিতি  দেখা যায়। অনেকে দলগতভাবে বাস নিয়ে আবার অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বেড়াতে এসেছেন রাঙামাটি।

রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্কসহ সব পর্যটন স্পটে রয়েছে পর্যটকের সরব পদচারণা। ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ খ্যাত ঝুলন্ত সেতু এখন পর্যটকের পদচারণায় মুখর। ঈদের লম্বা ছুটিতে রাঙামাটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঝুলন্ত সেতুতে ভিড় করেছেন পর্যটকরা। সেখান থেকে কাপ্তাই হ্রদে নৌ বিহারের জন্য বোট ভাড়া করে হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন তারা। অনেকেই দলবেঁধে আবার অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যান্ত্রিক শহরের কোলাহল ভেঙে নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মামুন-আয়েশা দম্পতি বলেন, ঈদ ও নববর্ষের ছুটি মিলিয়ে বেশ লম্বা একটা সময় ছুটি পাওয়া গেছে। তাই রাঙামাটি বেড়াতে আসলাম। আগে কখনো আসা হয়নি। প্রথমবার রাঙামাটির সৌন্দর্য দেখে সত্যিই মুগ্ধ আমরা।

ফেনী থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক তন্ময় দে বলেন, আমরা বন্ধুরা আজ ভোরে ফেনী থেকে বাইক নিয়ে রওনা দিয়ে চট্টগ্রাম হয়ে রাঙামাটি এসেছি। প্রথমেই ঝুলন্ত সেতু দেখতে আসলাম। এরপর আরও কয়েকটি স্পটে যাব। রাঙামাটি সত্যিই খুব সুন্দর।

পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে নৌ ভ্রমণ। তাই বেশিরভাগ পর্যটকই সকাল থেকে ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ছেন কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমণে। ঝুলন্ত সেতু পর্যটক ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট-বড় অনেকগুলো ট্যুরিস্ট বোট রয়েছে। পর্যটকরা বোট নিয়ে সুবলং ঝর্ণা, কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন।

রাঙামাটি ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন, ঈদ ও নববর্ষের ছুটির কথা মাথায় রেখে আমরা আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলাম। আমরা আশা করেছিলাম বিপুল পর্যটকের সমাগম হবে। পর্যটকরা এসেছেন, তবে আজ হয়তো আরও কিছু পর্যটক আসবেন। শুষ্ক মৌসুম হওয়াতে হ্রদের পানি কিছুটা কমেছে। তাও পর্যটকরা নৌ ভ্রমণে যাচ্ছেন, আমরা তাদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করেছি।

এদিকে ভিড় দেখা গেছে পলওয়েল পার্কেও। পার্কের গেইট থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত পর্যটকে ভরপুর। পর্যটকরা পার্কের ভেতরে থাকা বিভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা টয় ট্রেন ও দোলনাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পলওয়েল পার্কের মিনি ঝুলন্ত সেতুতেও কেউ কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছেন। হ্রদের শান্ত জল ও সবুজ প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত পর্যটকরা।

পলওয়েল পার্কে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. ঈসমাইল বলেন, রাঙামাটি আসার খুব ইচ্ছে ছিল, লম্বা ছুটি পাওয়াতে চলে এলাম। ঝুলন্ত সেতু দেখা শেষে এখানে আসলাম। এই জায়গাটিও খুব সুন্দর। বিশেষ করে লাভ পয়েন্টটি দেখার ইচ্ছে ছিল, সেটি দেখতে পেরে ভালো লাগছে।
 
পর্যটকদের উপস্থিতির কারণে বুকিং হয়ে গেছে শহরের প্রায় অধিকাংশ হোটেল মোটেলগুলো। যারা আগে বুকিং দিয়ে আসেননি তারা শহরে এসেই হোটেল বুকিং দিচ্ছেন। তাই গতকাল পর্যন্ত যেসকল হোটেল-মোটেলে কিছু রুম খালি ছিল সেগুলোও দ্রুত বুকিং হয়ে যাচ্ছে।

হোটেল মতি মহলের ব্যবস্থাপক চন্দন কুমার বর্মন বলেন, ঈদের ছুটিতে বেশ পর্যটক হবে সেটি আমরা ধারণা করেছিলাম। ঈদের আগেই আমাদের প্রায় ৫০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গিয়েছিল। এই মুহূর্তে আমাদের হোটেলে প্রায় শতভাগ বুকিং রয়েছে।

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, এই মুহূর্তে রাঙামাটিতে বেশ ভালো সংখ্যক পর্যটক অবস্থান করছেন। আমাদের হোটেল-মোটেল ও কটেজ মিলিয়ে শতভাগ বুকিং রয়েছে। আমরা আশা করছি আমাদের আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেটি পূরণ করতে পারব। 

তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী জেলা বান্দরবানের চলমান যে পরিস্থিতি তার প্রভাব রাঙামাটিতে নেই। এখানে সবাই নিরাপদে ভ্রমণ করছেন।

পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। ট্যুরিস্ট পুলিশ রাঙামাটি জোনের উপ-পরিদর্শক আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি গতকাল এবং আজ মিলিয়ে রাঙামাটিতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের ফোর্স মোতায়েন করা আছে। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করে যেতে পারেন সেই বিষয়ে আমরা তৎপর আছি। 

 

শহিদ

সম্পর্কিত বিষয়:

×