ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

গ্লাডিওলাস চাষে সফল কৃষক সানু মিয়া 

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ 

প্রকাশিত: ১৬:৪৫, ৫ এপ্রিল ২০২৪

গ্লাডিওলাস চাষে সফল কৃষক সানু মিয়া 

নিজ বাগানে ফুল হাতে সানু মিয়া। ছবি: জনকণ্ঠ

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ভুলকোট গ্রাম। এ গ্রামের বাসিন্দা কৃষক সানু মিয়া। তিনি ১২ শতক জমিতে পলিশেডে ফগার ইরিগেশন ব্যবহার করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একই ক্ষেতে বছর জুড়ে ফুল ও সবজি চাষ করে সাড়া ফেলেছেন। নিরাপদ বিষমুক্ত ও রপ্তানিমুখী সবজি ও ফুল উৎপাদন করে তিনি বেশ সফল হয়েছেন। 

তার সফলতা দেখে অন্যান্য এলাকার কৃষক ফুল এবং সবজিচাষে পলিশেড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন। 
বর্তমানে পলিশেড হাউজ থেকে ফুল তুলতে ও বাজারজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। বিভিন্ন স্থানে এই ফুল বিক্রি করা হচ্ছে। ফুলের চাহিদা রয়েছে অনেক। তার দেখাদেখি এ অঞ্চলের আরও অনেক কৃষক পলিশেডে ফুল ও সবজি চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন।

পলিশেড হাউজ এমন একটি পদ্ধতি যেখানে দীর্ঘমেয়াদী ফুল চাষ করা যায়। শীতের ফুল গরমে ও গরমের ফুল শীতে চাষাবাদ করা যায়। পলিশেড হাউজে ফুল চাষ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ফুলের পাশাপাশি বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে এই হাউজে। এখন আর জমি পতিত পড়ে থাকতে হবে না। পলিশেড হাউজে সারা বছরই চাষাবাদ করা হচ্ছে ফুল ও ফসলের। 

কৃষক মোঃ সানু মিয়া জানান, উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার  শামিমুল হক শামীমের সার্বিক সহযোগীতায় সরকারীভাবে তিনি পলিশেড পেয়েছেন। এখানে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পলিশেড হাউজে চাষ হচ্ছে জারবেরা, গ্লাডিওলাস ও তরমুজ,  রঙিন বাঁধাকপি, ওলকপি, বারি বেগুন, কাঁচা মরিচ। ফুলগুলো মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানের ফুল বিক্রির দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। শেডে উৎপাদিত সবজি নিজের চাহিদা পূরণ করে বাকীগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। 

কৃষক সানু মিয়া বলেন, পলিশেড হাউজে চাষাবাদ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিরাপদ থাকা যাচ্ছে। বৃষ্টির মধ্যে উন্নতমানের টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি চাষাবাদ করা যায়। এতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক সময় ফসল চাষাবাদের পর জমি ফাঁকা থাকতো। তখন কোনো কিছু চাষাবাদ করতে পারিনি। কিন্তু পলিশেড আসার পর এখন আর জমি পতিত থাকে না। এই সমটায় বিভিন্ন ফুল চাষের উদ্যোগ নেই। এ বছর ফুলের বাম্পার ফলন হয়েছে।

উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শামিমুল হক শামীম জানান, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ভুলকোটে পলিশেড হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। এই হাউজের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন উচ্চমূল্যের ফসল ও ফুলগুলো চাষাবাদ করা। আবার শীতকালীন ফুল ও ফসল গ্রীষ্মকালীন সময়ে চাষ করা যায়। পলিশেড হাউজে আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অনেক সময় শৈত্যপ্রবাহ, খরা, অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টির কারণে উচ্চমূল্যের ফসলগুলো চাষাবাদ করতে সমস্যা হয়। কিন্তু পলিশেড হাউজে এই সমস্যা থাকবে না। আগাম ফসল এখানে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এতে কৃষক মোঃ সানু মিয়া ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, এই পলিশেড হাউজ অনেক উন্নতমানের, যার কারণে  বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকরা এসে দেখে যাচ্ছে অতিবৃষ্টিতেও সবজি ও ফুলের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। রোদে তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতি গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভুলকোটে পলিশেড হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। এমন হাউজে ফুল ও সবজি চাষ উপজেলায় এই প্রথম। পলিশেড হাউজে দীর্ঘমেয়াদী ফুল চাষ করা যায়। চাষাবাদ করা যায় শীতের ফুল গরমে ও গরমের ফুল শীতে। এটি খুব লাভজনক ব্যবসা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এসআর

×