ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে শেখ হাসিনার সরকার

নিজাম উদ্দিন হাজারী

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ২ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে শেখ হাসিনার সরকার

নিজাম উদ্দিন হাজারী।

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ। অটিজম হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। যেখানে শিশুদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ, সামাজিক কল্পনা ইত্যাদি ক্ষেত্রসমূহে বেশ সমস্যা লক্ষ করা যায়। 

অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালে ২ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ হিসেবে পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ১৯৯৯ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা পরে জেপিইউএফে পরিণত হয়। অটিজমসহ এনডিডি (নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার) আক্রান্তদের চিকিৎসাসহ যাবতীয় অধিকারের সুরক্ষা আইনের আওতায় আনতে ২০১৩ সালে ‘ডিজএবিলিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাক্ট’ ও ‘দ্য ন্যাশনাল নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার প্রটেকশন ট্রাস্ট অ্যাক্ট’ করা হয়। অটিজম আক্রান্ত শিশুদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে থেরাপিউটিক, কাউন্সিলিং ও অন্যান্য সেবা এবং সহায়ক উপকরণ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সবচেয়ে বেশি আন্তরিকতা লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহ প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষিত করছে আগের চেয়ে বেশি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩-তে অটিজম, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধিতা, দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা, বাক-প্রতিবন্ধিতা, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা, শ্রবণ প্রতিবিন্ধতা, শ্রবণ-দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধিতাসহ ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিগত, বিকাশগত, ইন্দ্রিয়গত ক্ষতিগ্রস্ততা এবং প্রতিকূলতার ভিন্নতা বিবেচনায়, প্রতিবন্ধিতার এ সব ধরন নির্ধারণ করা হয়েছে।

দেশের ৬৪টি জেলায় প্রতিবন্ধী সেবা ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে প্রতিবন্ধীরা সেবা গ্রহণ করছে। সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করে অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল সমস্যাজনিত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে অটিজম আক্রান্তদের শনাক্ত করে তাদের কাউন্সিলিং ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনস্টিটিউট ফর পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম’-এর মাধ্যমে উপজেলাপর্যায়ে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইসিডিডিআর,বির মাধ্যমে অটিস্টিক শিশুদের প্রাথমিক পরিচর্যাকারী হিসেবে মায়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অটিজম ও স্নায়ু-বিকাশজনিত সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করার জন্য বিশেষজ্ঞ গ্রুপের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের উপযোগী করে স্ক্রিনিং টুলস প্রণয়ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে আন্তরিকভাবে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল স্রোতে আনতে সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া কেউ কখনো প্রতিবন্ধীদের নিয়ে চিন্তা করেনি। তারা কোনো দিনও স্বপ্নও দেখেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার স্বপ্ন পূরণ করছেন, প্রতিবন্ধীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সারা বিশ্বে অটিস্টিক শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য ও একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী তিনি। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতাণ্ডসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য্য সংস্থা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুতুলকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকসের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের উদ্যোগেই ২০১১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের পর গড়ে ওঠে সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, সামাজিক মর্যাদা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সহায়তা দিতে অবকাঠামো গড়ে তোলে। প্রধানমন্ত্রীর কন্যার দেখাদেখি দেশের অনেক বিত্তবান এবং পরোপকারী মানুষ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের সহায়তায় এগিয়ে আসছেন; অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন এবং সেবা করছেন। প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, জনশক্তিতে পরিণত হচ্ছে।

প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি ও তাদের জন্য অবকাঠামোগত পরিবেশ নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিবন্ধী শিশুরা যাতে সাধারণ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিশতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিবিড় শিক্ষা গ্রহণের জন্য প্রত্যেক প্রতিবন্ধীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে অটিজম কর্নার। প্রতিবন্ধিতাণ্ডসম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে।

লেখক: সংসদ সদস্য, ফেনী-২ (সদর) ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

 

এম হাসান

×