ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে দুইশো বছরের পুরনো বাড়ি 

জাহাঙ্গীর আলম ,সেনবাগ ,নোয়াখালী

প্রকাশিত: ১৩:২৪, ১৬ মার্চ ২০২৪

কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে দুইশো বছরের পুরনো বাড়ি 

জমিদার বাড়ি। ছবি: জনকণ্ঠ 

কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ৭নং মোহাম্মদপুর ইউপির মোহাম্মদপুর গ্রামের দুইশ বছরে পুরনো কল্যান্দীর রামেন্দ্র রায় চৌধুরী ও কাঙালী রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়িটি। ২০ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই জমিদার বাড়িটি থেকে পর্যায়ক্রমে তারা ১৯টি তালুকের অধিকারি থাকলেও আজ তারা বিলীন। 

 প্রজা শাসনের পাশাপাশি জনকল্যাণ শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা ও ধর্ম পালনের জন্য একে একে প্রতিষ্ঠা করেন মোহাম্মদপুর রামেন্দ্র মডেল হাই স্কুল, কল্যান্দী হরিহর চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি, কল্যান্দী হরি মন্দির, দোল মন্দির, তুলসী মন্দির, নাট মন্দির, হিন্দু মিলন মন্দির, কল্যান্দি সর্বজনীন পূজা মন্দির, শাহাজীর হাট, শাহাজীরহাট মসজিদ, কল্যান্দি বাজার, বৈরাগির হাট নোয়াখালী পুরাতন শহরে রামেন্দ্র প্রেস, দাগনভূঁইয়ার বোলগাঁও চন্দ্র মন্দির  প্রতিষ্ঠা করেন তারা। এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে সুনাম অর্জন করায় ব্রিটিশ সরকার তাঁদেরকে রায় বাহাদুর উপাধি দিয়েছিলেন। 

১৯৫১/৫২সালের দিকে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত শেষের দিকেও তারা এলাকায় ছিলেন প্রচণ্ড প্রতাবশালী। ৭১’র মুক্তিযোদ্ধের সময় তারা জীবন রক্ষায় বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেলে তখন তাদের জমিদার বাড়ি থেকে বসতঘর ও ভবনের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে দরজা জানালা খুলে লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।  

জমিদারের বংশধরদের অনেকেই মারা গেছে আবার  =অনেকে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে স্থায়ীভাবে বাস করছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে জীবন রক্ষায় দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাবার সময় জমিদার হেমচন্দ্র তাদের সম্পত্তি দেখভারে জন্য ওই স্থানীয় চেয়ারম্যান ওহিদুর রহমানকে পাওয়ার অব এটর্নি দিয়ে ভারতে চলে যায়। এরপর তিনি আর বাংলাদেশে না ফেরায় ওই বাড়ির একটি অংশসহ ও বিপুল সম্পত্তির বেদখল হয়ে গেছে।

কল্যান্দি জমিদারের বংশধর দ্বীনেশ রায় চৌধুরী (৮৭) তাঁর ভাই পুলেকশ্বর রায় চৌধুরী (৭০) স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন দ্বীনেশ রায় চৌধুরীর দুই সন্তান তমাল রায় চৌধুরী, মেয়ে দিপু রায় চৌধুরী এবং পুলেকশ্বরায় চৌধুরীর স্ত্রী চিত্রা রায় চৌধুরীর ছেলে রাতুল রায় চৌধুরী।

জানা গেছে ,রাম নারায়ন চৌধুরীর  ছিলো দুই ছেলে রামেন্দ্র রায় চৌধুরী ও কাঙ্গালী রায় চৌধুরী। এদিকে কাঙ্গালী রায় চৌধুরীর ছিলো একমাত্র ছেলে কৃঞ্চ কুমার রায় চৌধুরী। কৃঞ্চ কুমার রায় চৌধুরীর তিন ছেলে হেম চন্দ্র রায় চৌধুরী, হরেন্দ্র রায় চৌধুরী, ও হরিহর রায় চৌধুরী। 

অপরদিকে রামেন্দ্র রায় চৌধুরীর রায় চৌধুরীর ছিলা তিন ছেলে হরি প্রশন্ন রায় চৌধুরী, কৃঞ্চ প্রশন্ন রায় চৌধুরী ও কালী প্রশন্ন রায় চৌধুরী। এ দিকে হরি প্রশন্ন ও কালী প্রশন্ন ছিলো নিঃসন্তান। এদের মধ্যে কৃঞ্চ প্রশন্ন রায় চৌধুরীর ছিলো ৭ ছেলে তিন মেয়ে তারা হচ্ছে:  নরেশ রায় চৌধুরী,সুরেশ রায় চৌধুরী,দ্বিনেশ রায় চৌধুরী, অরুণ রায় চৌধুরী, কুমারেশ্বর রায় চৌধুরী, পুলেকেশ্বর রায় চৌধুরী ,মেয়ে দিপ্ত কনা চৌধুরী, সিন্ধু রায় চৌধুরী ও স্বপ্না রায় চৌধুরী।

এদের মধ্যে নরেশ,সুরেশ,অরুন,রামেন্দ্র, দিপ্ত মারা গেছে। এদের রামেন্দ্র রায় চৌধুরীর ছেলে দ্বীনেশ রায় চৌধুরী ,স্ত্রী চিত্রা রায় চৌধুরী, ছেলে তমাল রায় চৌধুরী, মেয়ে দিপু রায় চৌধুরীকে নিয়ে ও পুলেকেশ্বর রায় চৌধুরী তার স্ত্রী রতœা রায় চৌধুরী ছেলে রাতুল রায় চৌধুরীকে নিয়ে বর্তমানে এই বাড়িতে বসবাস করছেন। এছাড়া তাদের অপর ভাই কুমারেশ্বর রায় চৌধুরী ভারতে অবস্থান করছে।

জমিদার রামেন্দ্র রায় চৌধুরী বংশধর দ্বিনেশ রায় চৌধুরী জানান, একসময় তাদের প্রায় ২০ এর অধিক জায়গার ওপর তাদের সুরম্য অট্টালিকা ছিল, এখন তারা যে বাড়িতে বসবাস করে সেটি উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে তৈরি। এই বাড়িতে একটি কাছারি ঘর, দুটি দুইতলা থাকার ঘর আছে। এই কাছারি ঘরটিতে এখন আর বসবাসের অবস্থা নাই। একসময়  দূরদ‚রান্ত থেকে বিভিন্ন জমিদার এবং উচ্চবর্গীয় ব্যক্তিবর্গ এখানে আসতেন থাকতেন। কালের বিবর্তনে আজ তা সবই স্মৃতি।

জমিদার বাড়িটি লোহা,কাঠ ও ইট-চুন দিয়ে দো-তলা সুরুর্ম দুইটি বসতঘর নির্মান করা হয়েছিলো। বর্তমানে ভবন দুটির অধিকাংশ স্থানে ফাটল ধরে ইট-চুন সুরকী খুলে পড়েছে। ভবন দুইটিতে আগাছা পরগাছা জন্মনিয়ে বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। 

জমিদারদের বংশধর দ্বিনেশ চন্দ্র রায় চৌধুরীর ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, তাদের পূর্ব পুরুষরা কাঙ্গালী কাঙ্গারী রায চৌধুরীর নাতী  হরিহর রায চৌধুরী আত্মহত্যা করে মারাগেলে তার আত্মার শান্তি কামনায় তার  নামে এলাকার অসহায়, দুঃস্থদের চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো কল্যান্দী হরিহর চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি যার কার্যক্রম চলমান ছিলো ১৯৯০-৯১ সাল পর্যন্ত। 

একটি ঝড়ে ডিসপেনসারির ভবনের ছাল ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ভবনটির টিন-কাঠ সহ আসবাবপত্র একটি প্রভাবশালী নিয়ে যায়। বর্তমানে জায়গাটিও বেদখল বলে অভিযাগ করা হয়। 

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন আইনটিপাশ করার পর জমিদারদের ওয়ারিশরা তাদের সম্পত্তি ফিরে পেতে আদালতে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানির পর আদালত অনেকগুলো সম্পত্তি তাদের পক্ষে রায় ঘোষণা করেন। কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে আপিল করার পর তাদের পক্ষে রায় আটকে যায়। 

জমিদারদের জীবিত বংশধর দ্বীনেশ রায় চৌধুরী আক্ষেপ করে বলেন, তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় যেন স্ত্রী, সন্তানদের নিরাপদে বসবাস করতে পারে সেজন্য মামলাগুলোর শুনানির ব্যবস্থা করার জন্য সরকারে নিকট অনুরোধ জানান। 

 এসআর

×