গাছে গাছে সূর্য্যমুখী ফুল। দোল খাচ্ছে বাতাসে। ছবি: জনকণ্ঠ
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কৃষকেরা বিকল্প চাষের দিকে ঝুঁকছেন। চলতি রবি মৌসুমে বিভিন্ন ডাল, সবজি চাষের সাথে তেলবীজ সূর্য্যমুখীর চাষে আগ্রহ বেড়েছে তাদের।
বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে এখন কেবল হলুদের সমারোহ। সবুজ গাছের ডগায় হলুদ সূর্য্যমুখী ফুল দোল খাচ্ছে বাতাসে। সৌন্দর্যের এই সূর্যমুখী ফুলেই রয়েছে বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা। মাঠজুড়ে সূর্য্যমুখীর হলদে আভায় বিমোহিত দর্শনার্থীরাও।
আরও পড়ুন : সহকর্মীদের হাতে বেকারি শ্রমিক খুন
গোবিন্দগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে সূর্যমুখীর আবাদ। ধান, ভুট্টা, বাদাম, আলু ও টমেটোর মতো অর্থকরী ফসল হিসেবে সরকার সূর্যমুখী চাষে উৎসাহ দিচ্ছেন। এ কারণে সূর্যমুখী চাষও বাড়াচ্ছেন চাষিরা। তাই বাড়ছে সৌন্দর্যে ভরা আর অর্থকরী তৈলবীজ সূর্য্যমুখী চাষের এলাকা।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ি, রাজাহার, পৌরসভার কিছু এলাকাসহ এবার বেশ কিছু জমিতে চাষ হয়েছে সূর্য্যমুখীর। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গাইবান্ধার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখীর চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় এটা খুব লাভজনক। এ বছর কৃষি পুনর্বাসন প্রণোদনার আওতায় জেলায় ৫৬০ জন কৃষককে বিনামূল্যে দুই কেজি করে সূর্যমুখীর বীজ এবং ২৫ কেজি করে সার বিতরণ করা হয়।
এ বছর জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ৭৬ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। এ থেকে ১৬০ মেট্রিক টন সূর্যমুখী তেলের বীজ পাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য প্রায় কোটি টাকা। গত বছর গাইবান্ধায় ৭৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। উৎপাদন সুবিধা ও বাজারদর বিবেচনায় বর্তমানে অনেক কৃষকই সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের বাগদা এলাকার কৃষক মো. মনসুর আলী জানান, তিনি চলতি বছর ৩ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। আগে এসব জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করতেন। এবারই প্রথম কৃষি বিভাগের সহায়তায় সূর্যমুখী ফুল চাষ করছেন। ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশ গাছে ফুল ফুটেছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শ্যামল কুমার বর্মণ জানান, ডিসেম্বর মাস থেকে কৃষকরা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের বীজ রোপন শুরু করেন। রোপনের দুই মাস পর গাছে ফুল ফুটে। ফোটার পর ফুল পরিপক্ক হতে সময় লাগে আরও অন্তত ১৫দিন। আগামী এপ্রিল মাস থেকেই কৃষকরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে শুরু করবেন।সম্প্রতি কাটাবাড়ি ইউনিয়নের বাগদা বাজারের কাছের সরেজমিন কয়েকটি সূর্যমুখী ফুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানগুলোতে দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করছেন। এসব দর্শনার্থীদের জন্য কিছুটা বিড়ম্বনায়ও পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। অনেক দর্শনার্থী বাগান থেকে ফুল ছিঁড়ে ক্ষতি করছেন ফসলের।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ বলেন, কৃষকদের সূর্যমুখী ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ দেয়া হয়েছে। বীজ রোপনের পর থেকে আমরা নিয়মিত তদারকিও করছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলনও ভালো হবে। বীজ আহরণ এবং তেল উৎপাদন এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এসআর