ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

লক্ষ্মীপুর জেলা

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নৌকার প্রার্থীরা

মহিউদ্দিন মুরাদ, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ০০:৫২, ৪ জানুয়ারি ২০২৪

জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নৌকার প্রার্থীরা

এক সময়ে বিএনপির দুর্গ বলে খ্যাত লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনই দীর্ঘদিন তাদের দখলে ছিল

এক সময়ে বিএনপির দুর্গ বলে খ্যাত লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনই দীর্ঘদিন তাদের দখলে ছিল। বর্তমানে চারটি আসনই আওয়ামী লীগের দখলে। বিএনপি সরকার পতন আন্দোলনে থাকলেও জাতীয় পার্টি, জাসদ, তৃণমূল বিএনপিসহ অন্যান্য দল নির্বাচনের মাঠে থেকে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোট গ্রহণের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী মাঠ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ভোটারদের মন জয় করতে কাকডাকা ভোরে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ছুটে যাচ্ছেন প্রার্থীরা।

গণসংযোগ, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, পথসভা করে অনেকে আগামীতে এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। নির্বাচন সামনে রেখে চায়ের স্টলে, হাটে-ঘাটে, বাজারে, যেখানে সাধারণ মানুষের আড্ডা বেশ জমে উঠেছে, সেখানেই এখন চলছে প্রার্থীদের নিয়ে ভোটের হিসাব-নিকাশ। ভোট দিতে পারবে কি না? বিগত দিনে কে কী কাজ করেছে? অর্থের উৎস, তৃণমূল মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছে কীনা ইত্যাদি।

সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আবার কেউ কেউ  বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে ত্যাগী বা দুঃসময়ের লোকদের  কোনো কোনো নেতা মনে রাখেন না। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর লক্ষ্মীপুরে চারটি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে উপনির্বাচনে একটি এবং ২০১৪ সালে দুটি আসন পেয়েছে। বিগত দিনে এ চারটি আসনই বিএনপি তাদের ঘাঁটি হিসেবে দাবি করলেও বর্তমানে সেই অবস্থান নেই দলটির।  
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট তথা ১৪ দলীয় জোট সরকার ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার ক্ষমতা থাকার সুবাদে এলাকায় রাস্তাঘাট, পুল কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দিরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মাতৃকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ দুই শতাধিক খাতে বিভিন্ন ভাতা প্রদান, কৃষি ভর্তুকি দানসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে।

পল্লি গ্রাম পর্যন্ত ডিজিটাল/অনলাইন সুবিধা দান, বিদ্যুতের ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে মানুষ এসব সুবিধা ভোগ করছে। এর মাঝে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঘুষ দুর্নীতি, সরকারি দপ্তরে মানুষের হয়রানি এবং বৈষম্যের কারণে এ জনপদের মানুষ নাভিশ্বাস ফেলছে। এর মাঝে মহাজোট সরকারের আমলে যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য উৎপাদন, বিদ্যুৎ সেক্টরে যে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে যা গত ৫০ বছরেও হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং অধিকাংশ জরাজীর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে। 
লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে ছয়জন প্রার্থী ॥ ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে এ আসন। আসনটির প্রার্থীরা বেশিরভাগই ঢাকা ও চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। নেতৃত্ব নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধাবিভক্তি। গত জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট ও মহান বিজয় দিবসে ভিন্ন ভিন্ন পৃথক স্থানে অনুষ্ঠান করতে দেখা গেছে দুটি গ্রুপকে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী।

এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত প্রার্থী ড. আনোয়ার হোসেন (নৌকা), তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সড়কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো, মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান ছাড়াও গত প্রায় পাঁচ বছরে তিনি এলাকায় প্রায় হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করিয়েছেন। আর প্রায় সাতশ কোটি টাকার কাজ চলমান এবং পাইপ লাইনে রয়েছে। এলাকার কাজের পাশাপাশি মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলেন এবং আছেন। নির্বাচনে তিনি বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচিত হলে তিনি তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়ন করবেন।

নৌকা প্রতীকের ড. আনোয়ার খান আরও বলেন, দলের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। আমাদের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। জনগণ উন্নয়ন চায়। আমি অনেক উন্নয়ন করেছি। সে হিসাবে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। প্রচার, জনসমর্থনে এবং সবদিক থেকে নৌকা এগিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম রুহুল আমিন। 
অপরদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন (ঈগল)। নানা নাটকীয়তার পর পবন নির্বাচনে মাঠে রয়েছেন। ভোটাররা জানিয়েছেন, নৌকার সঙ্গে ঈগলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
জাতীয় পার্টি থেকে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান মাহমুদ (লাঙ্গল)। তিনি বলেন, রামগঞ্জ্ েজাতীয় পার্টির বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের কোনো বদনাম নেই। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে শতভাগ আশাবাদী। অপরদিকে জাতীয় পার্টির মাহমুদও  কাউকে ছাড় দেবেন না বলে জানিয়েছেন। স্বতন্ত্র এম এ গোফরান (কেটলি), তিনি এরশাদ সরকার আমলের সাবেক সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট থেকে নিয়াজ মাখদুম ফারুকী (মোমবাতি) ও ন্যাশনাল পিপল্স পার্টি থেকে মোবারক হোসেন (আম)।

ইসলামী ফ্রন্টের মাখদুম ফারুকী বলেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ইসলামী ফ্রন্টের বিকল্প নেই। তার দল মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। ভোটাররা জানিয়েছেন, নৌকা, ঈগল এবং লাঙ্গল ব্যতীত অপর প্রার্থীদের প্রচার তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। 

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসন ॥ নারকেল সুপারি আর ধান ও সয়াবিনে ভরপুর এ আসনটি। অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, রায়পুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত আসনটি। এ আসনে চারটি আসনের মধ্যে সর্বাধিক ১৩ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন (নৌকা)। নৌকার প্রার্থী নয়ন বলেন, আমার চার বছরে কয়েকশ কোটি টাকার কাজ করেছি।

সারাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র চারশ ১৭টি গভীর নলকূপ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে সরবরাহ করেছি। যা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। এ আসনে নৌকা ছাড়া অন্য বিকল্প প্রার্থীর চিন্তা করছে না। এ আসনে নূরউদ্দিনের বিজয়টা অনেকটা নিশ্চিত বলে তাঁর কর্মীরা দাবি করেন।
আ’লীগ দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিনা ইসলাম (ঈগল পাখি)। তিনি হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য এবং কথিত মানব পাচার মামলায় তিনি কুয়েত কারাগারে আটক শহিদ ইসলাম পাপুলের সহধর্মিণী। সেলিনা বর্তমানে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য। বাছাই পর্বে রিটার্নিং অফিসার তার মনোনয়নপত্র স্থগিত করার পর উচ্চাদালত থেকে মনোনয়নের বৈধতা পেয়ে শেষ সময়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। তিনি বলেন, তার লোকজনকে প্রতিপক্ষের লোকেরা বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। প্রচারে বাধাগ্রস্ত করছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শেষ সময়ে ভোটযুদ্ধে নামলেও এলাকায় তাঁদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হলে তিনি বিজয়ী হবেন বলে শতভাগ আশাবাদী। জাতীয় পার্টির বোরহান উদ্দিন আহমেদ মিঠু (লাঙ্গল), তিনি ব্যাপকভাবে এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, সবার বদনাম থাকলেও জাতীয় পার্টির কোনো বদনাম নেই। একইসঙ্গে জাতীয় পার্টির জনসমর্থন রয়েছে ব্যাপক। সুন্দর নিরপেক্ষভাবে ভোট হলে তিনি বিজয়ী হবেন এটা তার দৃঢ় বিশ^াস।
এ ছাড়াও ভোট প্রার্থনায় জনগণের দুয়ারে-দুয়ারে ছুটে যাচ্ছেন জাসদের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আমীর হোসেন (মশাল), তৃণমূল বিএনপির আব্দুল্যাহ আল মাসুদ (পাট), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির জহির হোসেন (একতারা), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. মোরশেদ আলম (চেয়ার)। বাংলাদেশ কংগ্রেস জোটের মো. মনসুর রহমান (ডাব), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. শরীফুল ইসলাম (মোমবাতি), মুক্তিজোটের মো. ইমাম উদ্দিন সুমন (ছড়ি), নৌকার প্রার্থী নুরউদ্দিন চৌধুরীর অপর প্রতিদ্বন্দ্বী তারই সহধর্মিণী স্বতন্ত্র প্রার্থী রুবিনা ইয়াছমিন লুবনা চৌধুরী (তরমুজ)।

তবে তিনি ডামি প্রার্থী হিসেবে স্বামী নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের ভোট নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফরহাদ মিয়া (হাত ঘড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম ফোরাম সভাপতি এফএম জশিম উদ্দিন (ট্রাক)। ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী নৌকার কিছু ভোট ক্ষতি করতে পারেন বলে ভোটাররা আশঙ্কা করছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থী নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এবং ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিনা ইসলামের সঙ্গে। 
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে ছয়জন প্রার্থী ॥ ২৭৬ লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর)। লক্ষ্মীপুর সদর ও চন্দ্রগঞ্জসহ দুটি থানা এবং একটি উপজেলা কৃষি ও ইলিশ সমৃদ্ধ এ আসনের অবস্থান। সংসদীয় আসনে খুনাখুনির জনপদ বর্তমানে লক্ষ্মীপুর সদর আসনটি অনেকটাই শান্ত। সারাদেশে আলোচিত এক সময়ের সন্ত্রাসী জনপদ এটি। সন্ত্রাস রোধে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ ও স্থানীয় পুলিশ-র‌্যাবসহ প্রশাসনের তৎপরতায় শান্তি ফিরে এসেছে। জেলার চারটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য সদর এ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত জেলার রাজনীতি এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। 
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৩ সদর আসনে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত গোলাম ফারুক পিংকু (নৌকা), দলের মনোনয়ন বঞ্চিত ঢাকাস্থ মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার (ট্রাক), জাতীয় পার্টির মো. রাকিব হোসেন (লাঙ্গল), ওয়ার্কার্স পার্টির মাহাবুবুল করিম টিপু (হাতুড়ি), তৃণমূল বিএনপির মো. নাইম হাসান (সোনালি আঁশ) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আবদুর রহিম (কাঁঠাল) প্রতীকের প্রার্থী ভোটযুদ্ধে মাঠে রয়েছেন। 
নৌকার প্রার্থী পিংকুু বলেন, এক সময় সন্ত্রাসের জনপদ ছিল লক্ষ্মীপুর। আওয়ামী লীগ সরকারই কঠোর হস্তক্ষেপ করে সন্ত্রাসী বাহিনী নির্মূল করে জনগণকে শান্তিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছে। গত ৪২ বছর যাবৎ দলের কর্মীদের পাশে ছিলাম। কর্মীদের দুঃসময়ে তাদের পাশে থেকে সেবা করেছি। তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছি। এখনো নিচ্ছি। আগামীতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, এলাকায় বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছি।

কর্মীরা অবশ্যই আমার মূল্যায়ন করবে। জনগণ নৌকাকে বিপুল ভোটে জয়ী করে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে। আমি এ ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, এখানে আ’লীগ বর্তমানে অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকর। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে তা প্রমাণ হবে।

দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র (ট্রাক) প্রতীকের প্রার্থী ঢাকাস্থ মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার বলেন, আমি আওয়ামী লীগের একজন আদর্শিক কর্মী হয়ে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কাছে যাচ্ছি। দলের হয়ে মানবিক সমাজ গঠনে জনগণের জন্য কল্যাণমুখী কাজ করেছি। সকল স্তরের মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দিতে পারব ইনশাআল্লাহ। নির্বাচনে হারলে বা জিতলে জনগণের পাশে আছি এবং থাকব।
এদিকে ভোটাররাও ধারণা করছেন নৌকার প্রার্থী গোলাম ফারুক পিংকু এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ এম এ সাত্তারের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হবে। তার সমর্থকরা জানান, ইতোমধ্যে ট্রাক মালামাল বোঝাই করে ফেলার অবস্থায় রয়েছে। ট্রাক পূর্ণ লোড হয়ে গেছে। নীরব ভোটাররা ট্রাকের পক্ষে সমর্থন দিয়েছে বলে অনেকে দাবি করছেন। এ ব্যাপারে তাকে সমর্থন দেওয়ার ফলে দলীয় পদ থেকে ইতোমধ্যে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে ইতোমধ্যে বহিষ্কারও করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে ছয়জন প্রার্থী ॥ ২৭৭ লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) সয়াবিন ও ইলিশ সমৃদ্ধ মেঘনা বেষ্টিত উপকূলীয় এ আসন। নদী ভাঙন কবলিত রামগতি ও কমলনগর দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। রাজনৈতিক ভিআইপি অধ্যুষিত এ এলাকায় রয়েছে ১৭টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা। লক্ষ্মীপুর-৪ আসন (রামগতি-কমলনগর) মেঘনা বেষ্টিত আসনে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন ছয়জন প্রার্থী। এদের মধ্যে রয়েছেন জাসদ (জাসদ ইনু) থেকে ১৪ দলীয় মহাজোটের মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য মোশারেফ হোসেন (নৌকা)।

আ’লীগ দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আ’লীগ সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল্লা আল মামুন (ঈগল)। আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা ইস্কান্দার মির্জা শামীম (ট্রাক)। সাবেক সংসদ সদস্য ও আ’লীগ নেতা আবদুল্লা আল মামুনের সহধর্মিণী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদা বেগম (তবলা), রামগতি ও কমলনগর নদী ভাঙন রোধ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়াান (রকেট) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. সোলাইমান (একতারা)।

এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট পালোয়ান বাছাই পর্বে মনোনয়ন স্থগিত হলে উচ্চাদালতে আপিল করে শেষ মুহূর্তে তাঁর বৈধতা ফিরে পান। এ প্রার্থীর একমাত্র দাবি মেঘনা ভাঙন থেকে মানুষের সহায়- সম্বল রক্ষা এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণ ত্বরান্বিত করা। 
প্রাথমিক পর্যায়ে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদুন নাহার লাইলীকে ১৭ ডিসেম্বর প্রত্যাহার করে নেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।  পরে মহাজোটের শরিক দল (জাসদ ইনু) মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেনকে কেন্দ্রীয় আ’লীগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে করে ভোটের মোড় নেয় অন্যদিকে। এ আসনে ভোটযুদ্ধে রয়েছেন ছয়জন প্রার্থী।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারেফ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা সরকার যে উন্নয়ন করেছে এলাকায় তা অব্যাহত রাখতে নৌকার বিকল্প নেই। বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি। এদিকে নৌকা প্রতীকের মহাজোট প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোশারেফ হোসেনের পক্ষে রামগতি উপজেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহেদ, রামগতি পৌর মেয়র মেজবাহ উদ্দিন মেজোসহ দলীয় নেতাকর্মীরা রাতদিন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ দলীয় কতিপয় নেতাকর্মী কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের দাবি, নৌকার বিকল্প নেই। রামগতিতে নৌকা বিজয়ী হবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র (ঈগল) প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার পারমিশন নিয়েই আমি ভোটযুদ্ধে নেমেছি। আশাকরি আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব। 
অপরদিকে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির সদস্য স্বতন্ত্র সাবেক ছাত্রনেতা (ট্রাক) প্রতীকের প্রার্থী ইস্কান্দার মির্জা শামীম বলেছেন, তাঁর জন্মস্থানের জন্য ইতোমধ্যে অনেক সেবামূলক কাজ করেছেন, মেঘনার ভাঙন রোধসহ ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে তিনি জড়িত রয়েছেন। তিনি নির্বাচিত হলে এলাকাকে একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলবেন। বেকারত্ব রোধে ইপিজেড নির্মাণে তিনি সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন।  তবে অন্য প্রার্থীদের প্রচার তেমন চোখে পড়ার মতো নয় বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।

×