ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

নরসিংদীর ৪টি আসনে তীব্র লড়াই হবে নৌকা ও ঈগলের মধ্যে

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

নরসিংদীর ৪টি আসনে তীব্র লড়াই হবে নৌকা ও ঈগলের মধ্যে

নরসিংদীর ৫টি আসনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক নির্বাচন হবে ৪ টিতে।  

প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকে নরসিংদীতে সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনের মাঠ। আওয়ামীলীগ, স্বতন্ত্র, তৃনমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন দলের মনোনীত প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়েও প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন অবিরত। 

শুধু পোস্টার ও মাইক বাজিয়ে প্রচারণায় সীমাবদ্ধ নেই প্রার্থীরা। প্রচার চালাচ্ছেন অনলাইন প্লাটফর্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমেও। নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানতে বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও ইউটিউবে আপলোড করছে এবং কোন এলাকায় কখন গণসংযোগ করছেন সেটাও প্রার্থী ও সমর্থকরা অনলাইনে পোস্ট দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি করা বিভিন্ন গান দিয়েও চলছে প্রচার প্রচারণা।  এবার নরসিংদীর ৫টি আসনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক নির্বাচন হবে ৪ টিতে।  

আরও পড়ুন : বিজয়ের পথে এগিয়ে মতিয়া চৌধুরী 

নরসিংদী-১ (সদর) আসন: এ আসনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা ও ঈগলের মধ্যে। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি লেঃ কর্ণেল (অবঃ) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু (বীর প্রতিক) এর সাথে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঈগল প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ কামরুজ্জামানের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল এক সময় এমপি নজরুল ইসলাম এর সাথে থেকে নরসিংদীর রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এমপির আশ্রয় প্রশ্রয়ে থেকে এবং নিহত মেয়র লোকমান হোসেন এর সমর্থকদের সহানুভূতিতে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। এরই মধ্যে তিনি গড়ে তুলেন নিজস্ব বলয়। এক সময় এমপি নজরুল এর সাথে তার মনমালিন্য শুরু হয়। ফলে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এক অংশে নজরুল ইসলাম হিরু এবং অপর দিকে কামরুজ্জামান কামরুল নরসিংদীর আওয়ামী রাজনীতির দুই মেরুতে অবস্থান নেয়। 

এ আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর মূল কারণ হচ্ছে নরসিংদী জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি জিএম তালেব হোসেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি লেঃ কর্ণেল (অবঃ) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম পক্ষে এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ কামরুজ্জামান এর পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুল। এ আসনে নজরুল ইসলাম হিরু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুজ্জামান ছাড়াও তৃনমূল বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট,  ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি সহ মোট ৮জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। 

নরসিংদী-২ (পলাশ) আসন: এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান এমপি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। এখানে তার বিরুদ্ধে বিকল্প শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। ডামি প্রার্থী হিসেবে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী পাঁচদোনা স্যারকেজিগুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাসুম বিল্লাহ (ঈগল) সহ ৪জন। এখানে আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের জয় প্রায় নিশ্চিত বলেই ধারনা সকলের। 

নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই আসনে মোট ৭ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও আওয়ামী লীগের নৌকার  প্রার্থী  ফজলে রাব্বি খানের সাথে সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) আলহাজ¦ সিরাজুল ইসলাম মোল্লার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে। সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রবিউল আউয়াল খান কিরন এর ছেলে এবং শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান টানা ২৫ বছর যাবৎ আমৃত্যু শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হারুন অর রশিদ খানের ভাতিজা ফজলে রাব্বি খান। এলাকাবাসীর অত্যন্ত জনপ্রিয় নিবেদিত প্রাণ রবিউস আউয়াল খান কিরন ও তার চাচা হারুন অর রশিদ খান দলীয় কোন্দলের কারণে দুজনেই খুনের শিকার হন। এ দিক বিবেচনায় এলাকার সাধারণ ভোটাররা আবেগে তাকে ভোট দিতে পারেন। 

অপর দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। তার মাঠ অনেকটাই গোছানো। তাছাড়া এলাকায় তার রয়েছে ব্যাপক পরিচিত। কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ভোটারদের কাছে রয়েছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দল নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন। 

নরসিংদী-৪ (মনোহরদী-বেলাব) আসনে ৪ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমান এমপি শিল্পমন্ত্রী এড. নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও মনোহরদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র  প্রার্থী মোঃ সাইফুল ইসলাম খান বীরুর মধ্যে তীব্র লড়াই হবে। বীরু সাবেক সেনা প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী লেঃ জেনারেল (অব:) নূরউদ্দিন খান এর ভাতিজা। তবে বিগত সময় এমপি ও মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এ কারণে এ আসনে নৌকার বিজয়ের সম্ভাবনা বেশী। 

নরসিংদী-৫ (রায়পুরা) আসনে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এখানে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে নৌকার লড়াইয়ের মূল কারণ হিসেবে রয়েছে দলীয় কোন্দল ও লোভ। এক সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান নৌকার প্রর্থী রাজিউদ্দিন আহমেদ এর আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে থেকেই রাজনীতি করতেন। তার গুরু রাজিউদ্দিন। মিজানুর রহমানকে প্রথমে রায়পুরা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন রাজু। এরই ধারাবাহিকতায় তার মধ্যে আরো বড় পদ পাওয়ার লোভ জন্মায়। আর এ লোভের কারণে তিনি ছিটকে পড়েন রাজুর আশ্রয় থেকে। এ কারণেই মূলত এবারের নির্বাচনে গুরুর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন মিজানুর রহমান। 

নরসিংদী জেলার ৫টি আসনের মধ্যে এ আসনটি সর্ববৃহৎ। ২৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত রায়পুরা উপজেলা। ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৫৫ হাজার ২৯৭ জন। এ আসনে নির্বাচনে জয় পরাজয়ের একটি বড় ভূমিকা রাখবে চরাঞ্চলের ভোটাররা। তাছাড়া ২৪ টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে উন্নয়নের ছোয়া লাগিয়েছেন বর্তমান এমপি রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। এ কারণে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। 

টিএস

×