ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

কুষ্টিয়া জেলা

স্বতন্ত্রই নৌকার হুমকি

এমএ রকিব, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

স্বতন্ত্রই নৌকার হুমকি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ মোট ৩১ প্রার্থী প্রতীক বরাদ্ধ নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এদের মধ্যে দুইজন রয়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থী। এরা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এখানে ‘নৌকা’র চার মাঝির জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ট্রাক’ ও ‘ঈগল’ প্রতীকের চার স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি ভোটের লড়াই হবে মূলত নৌকার প্রার্থী বনাম স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যেই।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) ॥ এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট আ কা ম সরওয়ার জাহানের বিপরীতে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ নয় প্রার্থী। এদের মধ্যে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন ট্রাক মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ রেজাউল হক চৌধুরী। ভোটাররা বলছেন, ‘তিনি একজন সম্ভাবনাময় প্রার্থী। অনেক আগে থেকে তিনি মাঠ গুছিয়ে রেখেছেন।’ রেজাউল হক ২০১৪ সালে এমপি নির্বাচিত হন। তাকে নিয়ে বেশ টেনশনে পড়েছেন নৌকার প্রার্থী। অপরদিকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অ্যাডভোকেট আ কা ম সরওয়ার জাহান আসনটিতে এমপি নির্বাচিত হন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ এ আসনে মোট ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  

কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) ॥ হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান এমপি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ‘নৌকা মার্কা’ নিয়ে এ আসনে নির্বাচন করছেন। তার বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ সাত প্রার্থী। এদের মধ্যে হাসানুল হক ইনুকে রীতিমতো কাঁপন ধরিয়েছেন ‘ট্রাক প্রতীক’-এর স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মো. কামারুল আরেফিন। তিনি মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য পদত্যাগকারী। স্থানীয় ভোটারা বলছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আসনটিতে শরিক দল জাসদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিবাদ চলে আসছে। এবার সুযোগ এসেছে ব্যালটের মাধ্যমে প্রতিশোধ নেওয়ার।  কামারুল আরেফিন এ আসনে একজন সম্ভাবনাময় প্রার্থী। তার বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত’। মোট আট প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন এ আসনে। 
কুষ্টিয়া-৩ (কুষ্টিয়া সদর) ॥ আসনটিতে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন ‘নৌকা মার্কা’র মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কুষ্টিয়া সদর আসনের বর্তমান এমপি। তার বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ চার প্রার্থী। যদিও গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে হানিফের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। কিন্তু এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আভাস মিলছে। এ আসনে হানিফের জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তরুণ নেতা ঈগল প্রতীকের মো. পারভেজ আনোয়ার। তিনি কুষ্টিয়া পৌরসভার পাঁচবারের নির্বাচিত মেয়র আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আনোয়ার আলীর ছেলে।

তবে মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর কুষ্টিয়ায় ব্যাপক উন্নয়নকাজ করেছেন। এসব উন্নয়ন কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে হানিফ দলীয় নেতাকর্মীসহ এলাকায় মানুষের কাছে ‘উন্নয়নের রূপকার’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীসহ ভোটারদের ধারণা, ‘এই উন্নয়নের ওপর ভর করেই নির্বিঘেœ নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যাবেন মাহবুব-উল আলম হানিফ।’ আসনটিতে মোট পাঁচ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) ॥ এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ‘নৌকা’র প্রার্থী বর্তমান এমপি ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। তার বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ সাত প্রার্থী। চরম গৃহবিবাদে জর্জরিত আওয়ামী লীগের এ আসনটিতে শেষ পর্যন্ত নৌকার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্র্থী আবদুর রউফ। তিনি ‘ট্রাক মার্কা’ প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন। শেষ পর্যন্ত এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি ভোটের লড়াই হতে পারে নৌকা ও স্বতন্ত্র ট্রাকের মধ্যে। এমপি সেলিম আলতাফ জর্জ বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সাবেক এমপি শহীদ গোলাম কিবরিয়ার নাতি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি এমপি হন।

সেলিম আলতাফ বলেন, ‘তৃতীয় প্রজম্মের এমপি আমি। এর আগে আমার দাদা গোলাম কিবরিয়া, বড় চাচা ও চাচি সংসদ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে আমি সংসদ সদস্য। দাদা গোলাম কিবরিয়া ১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর আততায়ীর গুলিতে নির্মমভাবে খুন হন। দেশ স্বাধীনের পর দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে আমরা তিন প্রজম্ম এমপি থাকার কারণে এই অঞ্চলের মাটি ও মানুষের সঙ্গে যে সম্পৃক্ততা তৈরি হয়েছে, এটিই আমাদের মূল শক্তি ও মূল প্রেরণা।’ অপরদিকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে এমপি হন আবদুর রউফ। এখানে আট প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।

×