ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

চট্টগ্রামে তিন আসনে চারজনের হলফনামা

প্রার্থীদের স্ত্রীরা অর্থবিত্তে শীর্ষে

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩

প্রার্থীদের স্ত্রীরা অর্থবিত্তে শীর্ষে

শামসুল হক চৌধুরী, মোতাহেরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ও মাহফুজুল ইসলাম

চট্টগ্রামের পটিয়া, সন্দ্বীপ এবং চন্দনাইশে সংসদীয় আসনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সম্পদের হলফনামা যেন স্বপ্নে দেখা রাজমহলের ন্যায়। অর্থবিত্তে একেকজন প্রার্থী অন্যজনকে ছাড়িয়ে গেছে। শুধু তাই নয় প্রার্থীর চেয়ে স্ত্রীর অর্থ-সম্পদের পরিমাণ গ-ির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না। প্রার্থীদের স্ত্রীর লাখ লাখ টাকার স্থাপনা আর কোটি টাকা মূল্যের রয়েছে কৃষি জমি ও বন্ড শেয়ার। বর্তমান এমপির পাশাপাশি অন্যান্য প্রার্থীদেরও সম্পত্তি ও আয় রীতিমতো ম্যাজিক্যাল পাওয়ারের মতো বাড়ছে।
চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে পটিয়া আসনে। এ আসনের বর্তমান এমপি সামশুল হক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী। আর দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। আওয়ামী লীগের এ প্রার্থীর কৃষিখাত ও দোকান ভাড়া থেকে তার আয়ের উৎস দেখালেও স্ত্রীর সম্পদ এবং অর্থের পরিমাণ বেশ উল্লেখ্যযোগ্য। অবশ্য ২০১৯ সালে উপজেলা  চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে তার বার্ষিক আয় ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। আর এবার হলফনামায় মোতাহেরুল তার বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছেন ১১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এবার তিনি কৃষিখাত থেকে ৫০ হাজার এবং বাড়ি ও এপার্টমেন্ট থেকে আয় ১০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন।

এর বাইরে অস্থাবর সম্পদে নিজের নামে নগদ ৩৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৯২ এবং স্ত্রীর নামে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও একটি নোহা গাড়ি থাকার তথ্য দিয়েছেন। নিজের ২১৮ দশমিক ৫০ শতক কৃষি জমি। স্ত্রীর নামে ১১ দশমিক ৫ একর জমি যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৫০ টাকা। আর নিজের অকৃষি জমি ৬০ শতক ৩ তলা বিশিষ্ট দালান, যার মূল্য ৭৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫শ’ এবং স্ত্রীর নামে ১ দশমিক ২৫ একর পাকা বাড়ি, যার মূল্য ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ’ টাকা। স্ত্রীর নামে ৯টি দোকান রয়েছে, যার আর্থিকমূল্য ২০ লাখ টাকা।
অপরদিকে চট্টগ্রাম ১২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরী হলফনামায় সম্পদের তথ্যও রীতিমতো তাক লাগানো। সম্পদ ও অর্থে ভরপুর এ প্রার্থী তার বাড়ি দোকান ও অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বার্ষিক আয় ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৪ এবং নির্ভরশীলদের ৪ লাখ ১৫ হাজার ৮শ’ টাকা উল্লেখ করেন। আর ব্যবসা থেকে নিজের আয় সাড়ে ৬ লাখ এবং নির্ভরশীলদের আয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে নিজের ৭ লাখ ৯৬ হাজার এবং নির্ভরশীলদের সঞ্চয়পত্র থেকে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৮শ’ এবং ব্যাংক থেকে সুদ বাবদ ১৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭১৮ টাকা। তিনি চাকরি থেকে ১১ লাখ ৪ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে ২৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা আয় করেন। এ প্রার্থীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ আছে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৬২৪ আর স্ত্রীর আছে ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৯৮৬ টাকা। 
নিজের কাছে মার্কিন ডলার থাকার তথ্যও দিয়েছেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে ৬১ লাখ এবং স্ত্রীর নামে ১০ লাখ ৫৮ হাজার এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার এবং পোস্টাল ও সেভিংসে টাকা থাকার তথ্য এবং একটি এক কোটি ৭৬ লাখ টাকা মূল্যের দুটি গাড়ি থাকার কথাও উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে চট্টগ্রাম ৩ সন্দ্বীপ আসনে বর্তমান এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ঢাকার পূর্বাচলে নিজের নামে ২৩ লাখ টাকা দামের একটি ছয় কাঠার ও একটি তিন কাঠার মোট দুটি প্লটের তথ্য। আর স্ত্রীর নামে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট ও একটি প্লট। মিতা বছরে বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং নির্ভরশীলরা ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেন। তিনি ব্যবসা থেকে নিজে ১৬ লাখ ৩৬ হাজার এবং নির্ভরশীলদের ১ লাখ ৯ হাজার এবং চাকরি থেকে নিজে ৮ লাখ ৪ হাজার এবং নির্ভরশীলরা ৮৮ হাজার টাকা আয় করেন। 
এদিকে চট্টগ্রাম ১৪ চন্দনাইশ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী তার হলফনামায় বাড়ি দোকান ভাড়া থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার, ব্যবসা থেকে ৬ লাখ ৩৬ হাজার এবং শেয়ার ও ব্যাংক আমানত থেকে ১১ লাখ ৬৩ হাজার এবং অন্যান্য খাত ও সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানীভাতাসহ ২৬ লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ টাকা আয়ের তথ্য দিয়েছেন। ৫২ লাখ টাকা বেশি তার বার্ষিক আয়। আর অস্থাবর সম্পদে নিজের নামে নগদ ১১ লাখ ৬৭ হাজার ২৯২ টাকা দেখালেও স্ত্রীর নামে নগদ ১০ লাখ ২৬ হাজার টাকা থাকার তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া বন্ড ও শেয়ারে নিজের ৩২ লাখ ১৫ হাজার এবং স্ত্রীর ৭৫ হাজার টাকা। নিজের নামে ব্যাংকে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। অন্যান্য অংশীদারী কারবারে নিজের ২৭ লাখ ১৬ হাজার এবং স্ত্রীর ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা রয়েছে।

×