পদ্মা-যমুনা বিধৌত পলল ভূমি ও চলনবিলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে উত্তরাঞ্চলের সুপ্রাচীন জেলা পাবনা
পদ্মা-যমুনা বিধৌত পলল ভূমি ও চলনবিলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে উত্তরাঞ্চলের সুপ্রাচীন জেলা পাবনা। জেলায় সংসদীয় আসন পাঁচটি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, প্রার্থীদের তৎপরতা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিএনপির সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা দীর্ঘদিন হাত গুটিয়ে থেকে বর্তমানে আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বসে নেই। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে গ্রামে গ্রামে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, উঠান বৈঠক, সভা-সমাবেশসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়ে মাঠ দখলে রেখেছেন।
হাট-বাজারের চায়ের দোকানে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে জমজমাট আলোচনা-সমালোচনা। সাধারণ ভোটাররা সম্ভাব্য প্রার্থীদের আচার-আচরণ, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠেছেন। বর্তমান এমপির সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মিলিয়ে দেখছেন তারা। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে অন্তর্কলহ ততই তীব্র হচ্ছে। পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগ আমলে দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেও দলীয় কোন্দলে তার সুফল ঘরে তুলতে পারবে কি না সে নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। বিএনপিও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত। বিএনপি নির্বাচনে গেলে মনোনয়ন ঘিরে দলে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একাধিক বিএনপি নেতা। তবে সব আসনেই আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করেন দুদলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দিয়ে প্রার্থী মনোনয়নের ওপরই নির্ভর করছে বড় দুই দলের জয়-পরাজয়। পাঁচটি আসনেই গত দুই টার্মে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন।
পাবনা-১ (সাঁথিয়া ও বেড়ার আংশিক) ॥ যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বাড়ি সাঁথিয়ায় হওয়ায় এ উপজেলায় জামায়াতের অবস্থান খুবই শক্ত। তাই জামায়াত সর্বশক্তি দিয়ে এ আসনটি দখলে নিতে মরিয়া হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন। আগামী নির্বাচন কেন্দ্র করে বেশ আগে থেকেই আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের অনুসারী নিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের লিফলেট বিতরণ, সভা-সমাবেশে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি ব্যানার, ফেস্টুন ও সামাজিক মাধ্যমে দোয়া কামনায় তাদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বেশ তৎপরতা চালাচ্ছেন। তিনি নিয়মিত সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। শামসুল হক টুকু টানা তিনবার সংসদ সদস্য হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করায় সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করতে সমর্থ হয়েছেন বলে তার অনুসারীরা দাবি করেছেন। তিনি এ আসনে জামায়াতের প্রভাব বলয় অনেকটাই খর্ব করতে সমর্থ হয়েছেন বলেও দাবি তাদের। এবারও শামসুল হক টুকু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় আরও আছেন সাঁথিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার, সাবেক রেল সচিব, মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এম সেলিম রেজা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য অধ্যাপক আব্দুল আওয়াল। এ আসনে বিএনপিরও শক্ত অবস্থান রয়েছে। ভোটে অংশ নিলে বিএনপির মনোনয়ন চাইতে পারেন সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব.) মনজুর কাদের। এ আসনে দীর্ঘকাল জোটপ্রার্থী দেওয়ায় বিএনপির মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি, এ আসনে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়ার।
বিএনপির প্রার্থী তালিকায় আরও আছেন বেড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ফজলুর রহমান ফকির, বেড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম ওরফে ভিপি ইসলাম, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিআইপি ইউনুস আলী। সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এখন পর্যন্ত নীরব রয়েছেন। নির্বাচনের মাঠ সবার জন্য সমান হলে তিনি নির্বাচন করবেন। বেড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির ডা. আব্দুল বাছেত খানকে জামায়াত আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
আসনটিতে জামায়াতের ভোটব্যাংক ছাড়াও অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও বিএনপির ভোটব্যাংক রয়েছে। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিজয়ী হতে হবে। তা ছাড়াও শামসুল হক টুকুর সহোদর বেড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল বাতেন বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন। আব্দুল বাতেনের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধে তাদের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ। আব্দুল বাতেনও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
পাবনা-২ (সুজানগর-বেড়া অপর অংশ) ॥ এ আসনটিতে দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ। সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাবের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীনের কোন্দল দলকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। এ আসনের ১৪ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও একজন উপজেলা চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতির দিকে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির সাধারণ সম্পাদকের দিকে থাকায় ১৪ ইউপি চেয়ারম্যান ও এক উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার মুখ দেখাদেখি নেই।
সংসদ সদস্য সব উন্নয়ন প্রকল্প নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের না দিয়ে পছন্দের লোক দিয়ে করানোয় চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা এমপির ওপর ব্যাপক ক্ষুব্ধ। তারা আসনটিতে প্রার্থী বদলের দাবি তুলেছেন। সংসদ সদস্য দলীয় সভা ও সাংগঠনিক কর্মকা-ে পাঁচ বছরে একদিনের জন্যও অংশ না নেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যদিও সংসদ সদস্য ফিরোজ কবির দাবি করেছেন তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের যোগাযোগ না থাকলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৃঢ় আশাবাদ নিয়ে গণসংযোগ ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু।
তিনি নিয়মিত তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ান। রাকসুর সাবেক নেতা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক কামরুজ্জামান উজ্জ্বল গ্রামগঞ্জে দলীয় কর্মসূচিসহ সামাজিক কর্মকা-ে অংশ নিয়ে তৃণমূলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তিনি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় আরও রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি ড. মির্জা এমএ জলিল, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, রাকসুর সাবেক জিএস ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার জাহাঙ্গীর কবির রানা, সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সাবেক সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশিকুর রহমান সবুজ।
অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন তালিকায় আছেন সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট একেএম সেলিম রেজা হাবিব, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি আরশেদ আলম ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হালিম সাজ্জাদ। আসনটিতে সাবেক এমপি সেলিম রেজার তৃণমূলে বেশ শক্ত অবস্থান রয়েছে। আর কৃষিবিদ তুহিনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক। বিএনপিও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত।
সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম রেজা হাবিব ও তার অনুসারী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করায় বিভক্তি সুস্পষ্ট হয়েছে। তবে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নের ওপর নির্ভর করছে জয়-পরাজয় বলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান। তবে এ আসনে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন।
পাবনা-৩ আসন ॥ জেলার সবচেয়ে বড় আসন পাবনা-৩। চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার তিনটি পৌরসভা ও ২৩টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসন। চলনবিলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এ আসনে অবস্থিত। আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বেশ শক্ত অবস্থান রয়েছে। অন্য দুই উপজেলা মিলে যে ভোট, তার চেয়েও বেশি ভোট চাটমোহর উপজেলায়। ফলে চাটমোহরের ভোটাররাই এ আসনের ফলাফলের মূল নিয়ামক। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। আগামী নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি থাকলেও সাড়া নেই বিএনপির।
এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে অন্য দলগুলোর তেমন জনপ্রিয়তা নেই। এক্ষেত্রে এগিয়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা বিভিন্ন সভা, সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। কুশল বিনিময় করছেন নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. বাকী বিল্লাহ, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপকমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল আলীম, পাবনা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা শাহ আলম, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য উমেদা জাবীন সমাজী, কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায় উপ-কমিটির সদস্য মেজর জেনারেল (অব) ড. মো. ফসিউর রহমান, চাটমোহর পৌর মেয়র সাখাওয়াত হোসেন, ফরিদপুর উপজেলা সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান সরকার, ফরিদপুর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আলী আশরাফ কবির ও ফরিদপুর উপজেলার সাবেক সহসভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ, চাটমোহর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক, ফরিদপুর পৌর মেয়র খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেনÑ চাটমোহর বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি কেএম আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব পাবনা বার সমিতির সাবেক সভাপতি মাকসুদুর রহমান মাসুদ, চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাসাদুল ইসলাম হীরা, ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. বাকী বিল্লাহ, ভাঙ্গুড়া উপজেলার সাবেক আহ্বায়ক মো. রাজিবুল হাসান বাবু, ফরিদপুরের আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম বকুল। এ আসনে ও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। আগামী নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হলে দুদলের জন্যই তা বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা দেখছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তবে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তা দুদলের নেতাকর্মীরাই মনে করছেন।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) ॥ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ নানা কারণেই আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক সময়ের বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখলে। দলীয় কোন্দল চরমে থাকলেও আগামী নির্বাচনেও আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে হারানো আসন পুনরুদ্ধারে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা যার যার অবস্থান থেকে সভা সমাবেশ, গণসংযোগসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। তারা সরকার পতনের একদফা আন্দোলন নিয়ে মাঠে আছেন।
অনেকেই মনে করেন, নির্বাচনী কৌশল হিসেবে বিএনপি সরকার পতনের একদফা কর্মসূচি দিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করছেন। নির্বাচনী মাঠ প্রস্তুত করছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদার। বিএনপি নির্বাচনে গেলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান তারা। আবার জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অধ্যাপক আবু তালেব ম-লও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে তার অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
এই আসনে আওয়ামী লীগের ১৫ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় কোন্দল ও গ্রুপিংও চরমে। এদের প্রত্যেকেই মনোনয়ন পাওয়ার আশায় শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ, উন্নয়ন লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বার বার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, উপনির্বাচনে নির্বাচিত এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, সাবেক ছাত্রনেতা ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান রবিউল আলম বুদু, প্রয়াত ভূমিমন্ত্রীর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাকিবুর রহমান শরীফ কনক, মেয়ে মাহজেবিন শিরিন পিয়া, লন্ডনপ্রবাসী ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ, ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, ব্যারিস্টার সৈয়দ আলী জিরু ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল গোলাম মোস্তফা তারা।
পাবনা-৫ ॥ সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও পাবনা পৌর এলাকা নিয়ে পাবনা-৫ আসন। আগামী নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী গ্রামে গ্রামে সরকারের উন্নয়নের লিফলেট বিলি, উঠান বৈঠক সমাবেশসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে প্রার্থিতা জানান দিয়ে মাঠ ময়দান চষে বেড়ালেও বিএনপির প্রার্থীরা প্রকাশ্যে নেই। বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স নির্বাচিত হয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় ব্যাপক উন্নয়নসহ নানা কর্মকান্ডে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। তিনি এবারও দলীয় প্রার্থী হবেন বলে আশা করছেন।
তবে আসনটিতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দেওয়ায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মনে হতাশা দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছেলে মো.আরশাদ আদনান রনি এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা ঘোষণা করে মিটিং-মিছিল, সাংবাদিক সম্মেলন করার পর থেকে কোন্দল দিন দিন প্রকট হচ্ছে। আওয়ামী লীগ তিন ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, আওয়ামী লীগের কোন্দল ততই বাড়ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা হলেন সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহিন। বিএনপিতেও রয়েছে কোন্দল।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তিনি এ আসনের শক্তিশালী প্রার্থী। শ্রমিক নেতা হিসেবে বাস ও ট্রাক শ্রমিকের মধ্যে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে। তিনি যদি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হন তবে তার সঙ্গেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জমজমাট লড়াই হবে বলে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আরও আছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুর মোহাম্মদ মাসুম বগা। আসনটি বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি। তবে গোলাম ফারুক প্রিন্স নির্বাচিত হওয়ায় ভোটের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের ওপর নির্ভর করছে জয়-পরাজয়।
জাতীয় জাতীয় পার্টির প্রার্থী হচ্ছেন জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের খান কদর। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন আরিফ বিল্লাহ। জাসদের প্রার্থী হচ্ছেন জেলা জাসদের সভাপতি আমিরুল ইসলাম রাঙা আর ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন নির্বাচন করতে পারেন।