ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

বরিশাল সিটি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ

প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সেবা প্রদানের অঙ্গীকার

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল 

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও সেবা প্রদানের অঙ্গীকার

দায়িত্ব গ্রহণ

সীমাহীন বিড়ম্বনা, প্রতিকূল পরিস্থিতিসহ নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চম পরিষদের মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত।

নগরবাসীকে সুষ্ঠু সেবা প্রদানের মাধ্যমে নতুন বরিশাল গড়ার অঙ্গিকার, জয় হোক শেখ হাসিনার স্লোগান নিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করা নতুন মেয়র সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। 

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নগর ভবনের সামনের ফজলুল হক অ্যাভিনিউ সড়কের অস্থায়ী মঞ্চে অভিষেক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী। অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রতিমন্ত্রী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, নবনির্বাচিত কাউন্সিলরগণ ও সুধী সমাবেশের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মবান্ধব স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে পঞ্চম পরিষদের দায়িত্বগ্রহণ করা নব নির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত তার বক্তব্যে বলেছেন, আপনাদের সকলের সহযোগিতায় বরিশাল নগরীকে একটি সুন্দর শহর উপহার দেওয়া হবে। সেজন্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করতে হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বিভাগকে উন্নয়ন করতে ব্যাপক আন্তরিক।

তিনি আরও বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনে প্রশাসনিক কাঠামো একেবারেই নেই। যেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে আপনারা হতাশ ও নিরাশ হবেন না। ইনশআল্লাহ আপনাদের সকলের সহযোগিতায় এ থেকে উত্তরণ ঘটবে। বরিশালবাসীর ওপরে তিনশ’ কোটি টাকার ওপরে দেনা রয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, আমি শুধুমাত্র বরিশাল সিটি করপোরেশনে ১২ কোটি টাকা পেয়েছি।

মেয়র আরও বলেছেন, একটি সঠিক জবাবদিহিতার মধ্যে বরিশাল সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হবে। এখানে কোন ধরেনের বৈষম্যমূলক কিংবা হিংসামূলক কিছু ঘটবে না। যারা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ রয়েছেন, তাদের অনুরোধ করবো, আপনারা নতুনভাবে নিষ্ঠার সাথে কাজ করবেন। মানুষের সেবা প্রদান করবেন এবং আপনাদের দায়িত্বের কোন অবহেলা করবেন না।
মেয়র বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন দেশকে সোনার বাংলা বানাতে।  

সেই লক্ষ্য নিয়ে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি একটি অনুন্নত দেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করেছেন। আমারও ইচ্ছা এই বরিশাল নগরীকে একটি সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো। কিন্তু সেটি করতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আগুন সন্ত্রাসীদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে হবে। দেশ থেকে জঙ্গীবাদ মুক্ত করতে হবে, সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, দুঃখের সাথে উল্লেখ করতে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে সামিল হলেও বরিশাল নগরী রয়েছে অনেক পিছিয়ে। বরিশালবাসীর সেই দুঃখ দুর্দশার কথা অনুধাবন করে আমার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্ব মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী বরিশাল নগরীর উন্নয়নের জন্য ৭৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। বরিশালবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। 

মেয়র বলেন, বরিশালের মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে, যে দায়িত্ব দিয়েছে। তা সঠিকভাবে পালন করার অঙ্গিকার করছি। সকলের সহযোগিতায় আমি নতুন বরিশাল গড়তে চাই। আমি প্রতিহংসায় বিশ্বাস করিনা।

অভিষেক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ, সংরক্ষিত সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হাফিজ মল্লিক, মেয়রের সহধর্মিনী লুনা আব্দুল্লাহ, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট তালুকদার ইউনুস, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বিপিএম, জেলা পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বিপিএম, র‌্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।

অনুষ্ঠানে বরিশাল নগরী ছাড়াও জেলা ও উপজেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সিটি করপোরেশনের নতুন পরিষদের কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। যাদের অংশগ্রহনে ফজলুল হক অ্যাভিনিউ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

অভিষেক অনুষ্ঠান শেষে সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত নগর ভবনের মেয়র কক্ষে গিয়ে তার নিজ আসনে বসেন। এসময় বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমা আক্তারের দেওয়া দায়িত্বভার গ্রহন করার রেজিষ্ট্রি খাতায় মেয়র স্বাক্ষর করে দোয়া-মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। পরে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম প্রথমে মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতকে মিষ্টি মুখ করিয়েছেন।
 

 

এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×