ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

জয়পুরহাট জেলা

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে, বিএনপি আন্দোলনে

তপন কুমার খাঁ, জয়পুরহাট

প্রকাশিত: ০০:২১, ৭ নভেম্বর ২০২৩

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে, বিএনপি আন্দোলনে

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জয়পুরহাট

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জয়পুরহাটে ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী তৎপরতা। গ্রামে গ্রামে চলছে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। জেলার দুটি আসনেই গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় নানামুখী উন্নয়ন হওয়ায় সাধারণ মানুষ খুশি। বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বলে সরকারবিরোধী আন্দোলন করলেও নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায়, আর বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার।
জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা নিয়ে জয়পুরহাট-১ আসন।

আসনটিতে টানা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় জেলার সড়ক ও বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন নতুন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এতে এলাকাবাসীর সরকারের প্রতি আস্থা বেড়েছে। জয়পুরহাট-১ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সামসুল আলম দুদু ছাড়াও সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম সোলায়মান আলী, জেলা কমিটির সহসভাপতি, জয়পুরহাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ ম-ল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়পুরহাট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আব্বাস আলী মণ্ডলের ছেলে আরিফুর রহমান রকেট, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শহীদ মাহতাব উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র ও পাঁচবিবি সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সংগঠক হাবিবুর রহমান হাবিব। বর্তমান এমপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সদস্য সামছুল আলম দুদু বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় জয়পুরহাট ও পাঁচবিবির নানা উন্নয়নমুখী কর্মকা- সম্পন্ন করেছি এবং আরও উন্নয়ন কর্ম চলমান রয়েছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই দলের ঘরে বিজয়ের ফসল তুলে দেব।
নির্বাচনের মাঠে জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, জয়পুরহাট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও মেয়র, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান এখন বিএনপির প্রার্থী হিসাবে পরিচিত মুখ। তিনি গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের একটি বিরোধিতার কারনে তিনি নির্বাচন করতে পারেন নাই। এবার সরকারবিরোধী দলের চলমান আন্দোলনের বিজয়ে প্রার্থী হবেন এমন আশাবাদী তিনি। দলের জন্য অতীতে কাজ করেছেন। দল মনোনয়ন দিলে তিনি অবশ্যই নির্বাচিত করবেন। তিনি মাঠে এবং কর্মীদের নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি বিএনপির অতীত দিনের এই জেলায় উন্নয়নের বিষয়গুলো ভোটারদের কাছেও জানাচ্ছেন।

দলের অপর প্রার্থী হতে চান বিশিষ্ট শিল্পপতি জেলা বিএনপির প্রবীণ নেতা মমতাজ উদ্দিন ম-লের ছেলে জেলা বিএনপির সদস্য, জয়পুরহাট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মো. আনোয়ারুল হক। তিনি বিএনপির নানা কর্মকা-ে সক্রিয় রয়েছেন বলে জানান। দল নির্বাচন করলে তিনি প্রার্থী হতে চান। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মোজাহার আলী প্রধানের ছেলে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রানা প্রধান প্রার্থী হতে চান বলে জানান।
এদিকে গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) জেলা সম্পাদক তিতাস মোস্তফা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছেÑ এমন সিদ্ধান্ত আছে বলে তিনি জানান। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী একইভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন করছে। তাদের দাবি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। জেলা জামায়াতের আমীর ডা. ফজলুর রহমান বলেন, জামায়াত দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে না পারলে, স্বতন্ত্র হিসাবে অন্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি জানান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সুরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জয়পুরহাট-১ আসনে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
জয়পুরহাট-২ আসনটি আক্কেলপুর-কালাই-ক্ষেতলাল এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি নির্বাচনী এলাকা হিসাবে অনেক বড়, প্রার্থীদের দৌড়াতে হয় অনেক বেশি। বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই হেভিওয়েট প্রার্থী এই আসনে নির্বাচনে করে। ফলে এই আসনের গুরুত্ব জেলায় সকল ভোটারদের দৃষ্টি কাড়ে। দুই বড় দলের দুই সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদে হুইপ হিসাবে কর্ম অভিজ্ঞ। দুই দলের মধ্যে বিএনপির আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান ইতোপূর্বে বিএনপির আমলে হুইপ ছিলেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন হুইপ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসাবে অবস্থান নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ মাঠে সক্রিয় রয়েছে।

বিএনপি প্রকাশ্যে না থাকলেও মাঠে ময়দানে নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নির্বাচনী আবহ তৈরি করে চলেছে। যদিও বিএনপি বর্তমানে আওয়ামী লিগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না ঘোষণা দিয়ে প্রচার আন্দোলনে রয়েছে। জয়পুরহাট-২ আসনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান সংসদের হুইপ সাবেক ছাত্রনেতা আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি জানান, নির্বাচনী এলাকায় সড়ক যোগাযোগের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছি। মানুষ এখন গ্রাম আর শহর বুঝতে পারে না। গ্রামের কৃষক তার উৎপাদিত ফসল এখন শহরের বড় বড় বাজারে বিক্রয় করতে পারে।
সব মিলিয়ে জয়পুরহাট-২ সংসদীয় এলাকাসহ পাঁচবিবি এলাকায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।
গত একনেক সভায় জয়পুরহাটের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় পাঁচশ’ কোটি টাকার প্রকল্প গৃহীত হওয়ায় হুইপ স্বপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে দলের কাছে অবশ্যই প্রার্থিতা চাইব এবং নির্বাচিত হবো এই বিশ^াসও আমার রয়েছে।
এদিকে আওয়ামী লিগের অপর প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী (অবসর চৌধুরী) মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে কাজ করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, আমার পিতা প্রয়াত গোলাম রসুল চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে সংবাদপত্র বের করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। তার পিতা দীর্ঘদিন ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। গোলাম মাহফুজ চৌধুরী বলেন, আমি দলের কাছে প্রার্থিতা চাইব। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি বিজয়ের ফুল নৌকায় তুলে দেব।

এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নয় জানিয়ে বিএনপি আন্দোলনে থাকলেও এলাকায় বিএনপির অনেক নেতা মাঠ পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যাতায়াত শুরু করেছেন। সেসব অনুষ্ঠানে তারা কর্মীদের জানাচ্ছেন, দল নির্বাচন করলে প্রার্থী হবেন এবং জয়লাভও করবেন। এমন কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তাদের মধ্যে অন্যতম বিগত জাতীয় সংসদের বিএনপি দলীয় হুইপ প্রবীণ আইনজীবী বিএনপির দক্ষ নেতা আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, আমি আক্কেলপুর, কালাই, ক্ষেতলাল নির্বাচনী এলাকার মাটি-মানুষের হৃদয়ে আছি। এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি আমার সময়কালে। এই আসনে বিএনপির অপর একজন সাবেক সংসদ সদস্য হিসাবে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা জানান, এলাকার মানুষের সঙ্গে থেকে কাজ করি।

নির্বাচন ছাড়াও মানুষের নানা সমস্যায় তাদের কাছে থাকি। কর্মীদের মূল্যায়ন করি। এই আসনে বিএনপির অপর নেতা লায়ন সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ, আরিফ রানা দলীয় প্রার্থিতা চাইবেন যদি দল নির্বাচনে যায়। তারা জানান, এলাকাবাসীর ভালোবাসায় নির্বাচিত হব। আক্কেলপুর-কালাই-ক্ষেতলাল নির্বাচনী এলাকায় আরও কয়েকটি দল যথাক্রমে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি জাসদ, ইসলামী আন্দোলন নেতারা জানান, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

×