
কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে
আর মাত্র সাত দিন বাকি। কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ নভেম্বর রামুতে এসে উদ্বোধন করবেন দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ওই দিন দেশের রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে জেনে অত্যন্ত খুশি সৈকত রানীর লোকজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর খুলে দেওয়া হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ।
জানা যায়, নান্দনিক নির্মাণশৈলীর বিশ্বমানের চোখ ধাঁধানো আইকনিক রেলস্টেশন ইতোমধ্যে নির্মাণ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের অল্প সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু“ হবে এই রেলপথে। এ রকম সুন্দর ও নান্দনিক আইকনিক রেলস্টেশন বিশ্বে আর কোথাও নেই। এটা দেখে অন্যান্য দেশেও এ রকম আইকনিক ভবন নির্মাণ করবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গেলো কয়েক বছর ধরে বিশ্বমানের আইকনিক রেলস্টেশনের অ্যানিমেশন দেখেছে দেশবাসী। কিন্তু এখন সেই আইকনিক রেলস্টেশন পুরোপুরি দৃশ্যমান। এটি ফলো করে বিশ্বের অন্য দেশগুলোও আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণকাজে হাত দিতে পারে বলে বলেছেন এডিবির কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ১১ নভেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে উদ্বোধন করবেন কক্সবাজারবাসীর বহু কাক্সিক্ষত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন। এর পর তিনি মহেশখালীতে যাবেন। দুপুরে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সকল ধরনের প্রস্তুতি শুরু“ হয়ে গেছে। এবারের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। নতুন যুগের সূচনার অপেক্ষায় পর্যটন নগরী কক্সবাজার। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজারে ট্রেন যাবে এখন শুধু অপেক্ষা। সমুদ্র দর্শনে যাওয়ার পথে প্রথমেই যাত্রীরা সামুদ্রিক একটা আবহ পাবে কক্সবাজারে নির্মিত দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনে এসে।
কেবল আসা-যাওয়ার জন্যই নয় এই স্টেশন, দেওয়া হয়েছে বহুমাত্রিক রূপ। এখন চোখ ধাঁধানো আইকনিক স্টেশনটি দৃশ্যমান। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আইকনিক রেলস্টেশনটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বমানের সব সরঞ্জাম। নানা জটিলতা পেরিয়ে পরিপূর্ণতা পেয়েছে ভবনটি। আর আইকনিক রেলস্টেশন দেখে সবাই মুগ্ধ।
সূত্র জানায়, সমুদ্র সৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা এলাকায় ২৯ একর জমিতে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই দৃষ্টিনন্দন স্টেশন। আইকনিক এ স্টেশনটি নির্মাণে চীন, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পুরো প্রকল্পটিতে ছয় শতাধিক লোক কাজ করছে। ৪ বছরের বেশি শ্রমে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি দৃশ্যমান। এখন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন এই প্রত্যাশা করছেন সকলে। ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ। যা টট্রলিযোগে পরিদর্শনও করেছেন রেলমন্ত্রী। আর প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর অল্প কিছুদিনের মধ্যে এই রেলপথে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু“ হবে।
সূত্র আরও জানায়, কক্সবাজারবাসির দীর্ঘদিনের দাবি এই রেলপথ এখন বাস্তব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় আগামী ১১ নভেম্বর রেল আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন পর্যটন শহরের বাসিন্দারা। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, রেল চালু হলে পর্যটক যাতায়াত সহজ হওয়ার পাশাপাশি স্বল্প সময়ে ও কম খরচে কৃষিপণ্য, মাছ, লবণ পরিবহন করা যাবে। এতে কক্সবাজারের পর্যটনসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
আইকনিক রেলস্টেশনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে আইকনিক রেল স্টেশনটি। আইকনিক ভবনটি নির্মাণ অত্যন্ত জটিল ছিল। যেমন স্টিলগুলো দেখা যাচ্ছে, এই স্টিলগুলোর যত দাম, এটা তৈরি করতে তার চেয়ে চারগুণ বেশি টাকা ব্যয় হয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা টাকার দিকে তাকাইনি, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও সহযোগিতা করেছে। কক্সবাজারে নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশনটি দেখে মুগ্ধ এডিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন এই প্রত্যাশায় আছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের একমাত্র বিশ্বমানের দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। এটি শুধু স্টেশন নয়, পরিপূর্ণ একটি কমপ্লেক্স।
রয়েছে তারকামানের হোটেল, লকার, শপিংমল, রেস্তোরাঁসহ বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা। সারাদেশের সঙ্গে পর্যটননগরীর রেল যোগাযোগ স্থাপন কক্সবাজারবাসির দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পর্যটন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আর মাত্র ৭ দিন বাকি। আট দিনের মাথায় উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন। এর পরই পর্যটননগরী কক্সবাজারে ট্রেন ছুটে আসবে। এতে সাশ্রয়ীমূল্যে পর্যটকরা ছুটে আসবে পর্যটননগরী কক্সবাজারে। কক্সবাজারে দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন বাড়বে। বিশেষ করে, আইকনিক স্টেশনটি কথা না বললেই নয়। আইকনিক রেলস্টেশনটি চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। আশা করি, অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনবে এই রেলপথ।
কী বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ॥ দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক মো. সবুক্তগীন বলেন, আগামী ৭ নভেম্বর রেলমন্ত্রী মহোদয়সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ট্রায়াল হবে চট্টগ্রাম নগরী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত। ১২ নভেম্বর উদ্বোধনের কথা থাকলেও তা একদিন এগিয়ে ১১ নভেম্বর হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার আসবেন। ওখানে সুধী সমাবেশ হবে, আইকনিক স্টেশন দেখবেন এবং ট্রেনে করেও একটি অংশ তিনি পরিদর্শন করবেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আমরা মাস দুয়েক পর ৮০ কিলোমিটার গতিতে চালাব।
এখন আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগলেও পরে তা দুই ঘণ্টায় করতে চাই। কালুরঘাট সেতুর কাজ আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে শেষ করার চেষ্টা চলছে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শুক্রবার সেখানে ট্রায়াল হবে। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী রেলপথটাও ডুয়েল গেজ হবে। সেটাও ১২০ কিলোমিটার গতিতে করব। এ প্রকল্পের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম এটা একটা নতুন জেলাকে যুক্ত করল (কক্সবাজার জেলা)। দ্বিতীয়ত, এটা পর্যটন নগরীকে যুক্ত করল। পরে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গেও যুক্ত হবে। ভবিষ্যতে ওখানে রেল কানেক্টিভিটি হবে।
পরিবেশ রক্ষায় ৭ লাখ গাছ ॥ শুরু থেকে এ প্রকল্পে যুক্ত আছেন অতিরিক্ত পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী। তিনি জানান, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, করোনাসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এ প্রকল্প রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে। বনের মধ্যে লাইনটি হয়েছে। গাছ কাটা পড়েছিল। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, যাতে পরিবেশ বিপর্যয় না হয়, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের ৭ লাখ গাছ রোপনের সিদ্ধান্ত আছে। ইতোমধ্যে ৫ লাখ গাছ লাগানো হয়েছে। কিছু কিছু গাছ অনেক বড় হয়েছে, গাছের ফলও এসেছে। আন্ডারপাস এবং ওভারপাস এশিয়ার মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে। আমাদের মিশন-ভিশন সুন্দরভাবে নিরাপদে কক্সবাজারকে রেলপথের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যুক্ত করা। সকলের সহযোগিতা চাই, যাতে এ রেলপথের ব্যাপারে সবাই আন্তরিক থাকে। যাতে কেউ ফিটিংস নষ্ট না করে, রেলে ঢিল না ছোড়ে।
চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী ডুয়েল গেজ রেলপথ ॥ এদিকে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী রেলপথ ডুয়েল গেজ করা হবে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। যার ব্যয় দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের চাইতেও বেশি। বিদ্যমান ৪৭ কিলোমিটারের মিটার গেজ রেলপথ রয়েছে এ রুটে। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটের সঙ্গে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলরুটকে যুক্ত করতে করা হবে কানেক্টিং কার্ভ। যার ফলে প্রস্তাবিত রেলপথের দাঁড়াবে ৫২ কিলোমিটারে। যার ফলে নতুন এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০৩ একর জমি অধিগ্রহণ, প্রায় ১১৯টি ছোট বড় ব্রিজ পুনর্নির্মাণ, নতুন করে দুটি রেলওয়ে স্টেশন এবং সিগন্যালিংসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। মূলত চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেললাইনকে পুরোদমে সক্রিয় করতে ১০৭ কিলোমিটার ট্র্যাক ডুয়েল গেজ করা হবে। এডিবি ঋণ সহায়তা ও সরকারের নিজস্ব তহবিল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।