বর্ণিল সাজে অ্যাপ্রোচ রোড। ছবি: জনকণ্ঠ
জাতীয় গর্বের বঙ্গবন্ধু টানেলকে কেন্দ্র করে পাল্টে গেছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গাপ্রান্ত এবং দক্ষিণপ্রান্ত আনোয়ারা উপজেলার দৃশ্যপট। দিনের চেয়ে রাতের আলোকজ্বল টানেলের দু’প্রান্ত নজরকাড়া। টানেলের অভ্যন্তর দিয়ে যাত্রা যে কারও মনে সৃষ্টি করবে ভিন্ন অনুভূতি, যা নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এই টানেল। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দূরত্বের এ টানেল দেশের মধ্যে বিস্ময়কর একটি স্থাপনা।
২৮ অক্টোবর এ টানেলের বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন টানেল উদ্বোধন শেষে আনোয়ারা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে টানেলের দুপ্রান্তে সাজসাজ রব বিরাজ করছে। টানেল নিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে ইতোমধ্যে দুটি থিম সং প্রকাশ হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে থিম সং প্রকাশ হবে ২৮ অক্টোবর আনোয়ারায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভার মঞ্চ থেকে।
এদিকে, বর্ণিল সাজে সেজেছে পতেঙ্গাসহ টানেল সংলগ্ন বিভিন্ন সড়ক। একইভাবে সিটি আউটার রিং রোড থেকে শুরু করে পতেঙ্গা জংশন পর্যন্ত এবং শাহ আমানত সেতু থেকে আনোয়ারার কেইপিজেড পর্যন্ত সড়ক দ্বীপ এবং এপ্রোচ রোডে তোরণ, ব্যানারসহ নানা রঙের ফেস্টুনে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। একইভাবে রং লেগেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারখ্যাত শাহ আমানত সেতুতেও। এমন বর্ণিল সাজের কারণ , ইতিহাসে সাক্ষী হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন টানেল উদ্বোধন ও আনোয়ারায় জনসভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জুড়েই সাজসাজ রব। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সর্বস্তরের লোকজনের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর সড়ক এবং টানেল গোলচত্বর নানা রঙে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া কেইপিজেড মাঠে জনসভাকে ঘিরে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে কার্পেটিং এবং সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। পাশাপাশি নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের মাঝে চলছে উৎসবের আমেজ। চট্টগ্রামে বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু করে পতেঙ্গা টানেল প্রান্ত পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ সাজিয়ে তুলেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এছাড়া টানেল উদ্বোধন ঘিরে আলোকায়নে নতুনভাবে সেজেছে পুরো এলাকা। টানেল প্রান্ত বর্তমানে নতুন পর্যটন স্পট। প্রতিদিন বিকেল থেকেই রাত পর্যন্ত নগরীর বাসিন্দারা ভিড় করছেন পতেঙ্গা প্রান্তে।
টানেল প্রান্ত থেকে এয়ারপোর্ট সড়ক ধরে এগোলেই চট্টগ্রাম শহরকে অচেনা লাগে। অনেকের মন্তব্য, এ যেন ভিন দেশের উন্নত কোন শহর। টানেলের প্রবেশমুখে সুন্দর গোছানো চত্বর এবং পতেঙ্গা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন ও আলোকায়ন তৈরি করেছে ভিন্ন রকম মুগ্ধতা।
বঙ্গবন্ধুর ভার্টিক্যাল ম্যুরাল
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশে সড়ক মুখে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু ভার্টিক্যাল ম্যুরাল। কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের প্রবেশ মুখের গোলচত্বরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে নবনির্মিত ৩৩ ফুট উচ্চতা এবং ১৭ ফুট প্রস্থের এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছে ৫৭টি ধাতব পাইপ দিয়ে। ভাস্কর্যের পাদদেশে স্থাপিত বিশেষায়িত ফাইবার দিয়ে তৈরি ২৪ ফুট লম্বা ও ৩২ ফুট ব্যাসের একটি গোলচত্বরের মাঝে থাকা সাম্পানটি কর্ণফুলী নদীর ইতিহাস ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরে।
চসিকের অধীনে স্থাপিত এই ভার্টিক্যাল ম্যুরালটি দেখতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও লোকজন আসছে। বঙ্গবন্ধুর অমর স্মৃতির উদ্দেশ্যে দেশের প্রথম এই ভার্টিক্যাল ম্যুরালটি শিল্পরূপ পেয়েছে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষা চট্টগ্রাম বিমান বন্দরের প্রবেশ মুখের গোলচত্বরে। ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে টানেলের পাশাপাশি আরও ১৭টি প্রকল্পের মধ্যে এই ম্যুরালের উদ্বোধন করবেন।
দুইদিনব্যাপী টানেল উৎসব শুরু
বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে বুধ থেকে দু’দিনব্যাপী টানেল উৎসব শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেলে পতেঙ্গায় টানেল উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। টানেল উৎসবের উদ্যোক্তা মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক, নগর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি এবং চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি জানান, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথম টানেল কর্ণফুলীর তলদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করতে আসবেন ২৮ অক্টোবর। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে উৎসব মুখর করতে দুই দিনব্যাপী টানেল উৎসবের আয়োজন করেছি। টানেল উৎসবের ১ম দিনে বর্ণাঢ্য র্যালি, সাগরে লাল সবুজের আলোর মেলা, পিঠা উৎসব ও চাটগাঁইয়া সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন।
এসআর