ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১

চলনবিলে বিলুপ্তির পথে কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক

রফিকুল ইসলাম রনি, চাটমোহর (পাবনা)

প্রকাশিত: ১১:২৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩; আপডেট: ১২:০২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

চলনবিলে বিলুপ্তির পথে কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক

শামুক, কাঁকড়া

বর্তমান সময়ে খাল, বিল, ডোবা, নালা ও পুকুরসহ নানা রকম প্রতিকুল পরিবেশের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে জীববৈচিত্র। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের আমিষের চাহিদা মেটানো কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক প্রায় বিলুপ্তির পথে। ফলে এই সব ক্ষুদ্র নৃ- জনগোষ্ঠী আমিষের অভাবে পুষ্টিহীনতায় পড়ছে।

কিছু অসাধু চক্র নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংসে মেতে উঠেছে। সরকারী খাল, বিল, ডোবা নালা গুলো প্রভাবশালীদের দখল চলে যাচ্ছে। প্রভাবশালীরা এ গুলো দখল করে ভরাট করে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ পুকুর খনন করে বাণিজিকভাবে মাছ চাষ করছে। এতে করে কাঁকড়া, শামুক ও ঝিনুকের আশ্রায়স্থল হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও জমিতে কিটনাশক ব্যবহারের ফলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের খাদ্য কাঁকড়া, শামুক ও ঝিনুক প্রায় বিলুপ্তির পথে।

জানা গেছে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে আমিষের চাহিদা মেটাতো কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে আমিষের চাহিদা মেটাতো। এটি তাদের জনপ্রিয় খাবার হিসেবে প্রায় প্রতিদিনই খেত। আদিকাল থেকেই বিভিন্ন খাল, বিল, ডোবা, নালা ও পুকুর থেকে এসব খাবার আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত তারা। প্রকৃতি দিত তাদের খাদ্যের জোগান। 

বর্তমানে নানা প্রতিকুলতার কারণে পানি উৎসের স্তর কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন আর পানি উৎসের সংকটের কারণে বিপন্ন হচ্ছে কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, বিভিন্ন পোকামাকড় আর অনেক প্রজাতির মাছ ও প্রাকৃতিক শাকসবজি।

চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল বাঘলবাড়ি গ্রামে বসবাসরত কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা তাদের খাদ্যের জোগান করত খাল, বিল, ডোবা, নালা ও পুকুর থেকে। বর্তমানে কিছু অসাধু চক্র এ গুলো দখল করে নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংসে মেতে উঠেছে। পানি থেকে পাওয়া যেত কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, কুচিয়া বিভিন্ন পোকামাকড় আর অনেক প্রজাতির মাছ ও প্রাকৃতিক শাকসবজি। এগুলো নির্বিচারে ধ্বংসের কারণে তাদের নিত্যদিনের খাদ্যাভ্যাস বিলুপ্তির পথে। 

আদিবাসী ছাত্র পরিষদ পাবনা শাখার আহবায়ক অপুর্ব কুমার সিং বলেন, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, কুচিয়া প্রজননের সময় অসাধু মৎস্য শিকারীরা চায়না দুয়ারী সহ বিভিন্ন প্রকৃতির জাল দিয়ে মাছ ধরার সাথে এগুলো ধ্বংস করছে। এতে আমিষ জাতীয় খাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগন। এখন থেকে এ গুলো রক্ষা না করলে ভবিষ্যতে আমিষ জাতীয় খাদ্য-সংকটের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে যাবে। 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সাবেক সভাপতি রাম প্রসাদ মাহাত বলেন, সরকারী ডোবা নালা ও পুকুর গুলো লিজ দেওয়ায় কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক ও কুচিয়া প্রায় বিলুপ্তির হয়ে যাচ্ছে। আমাদের (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) নিত্যদিনের খাদ্যের তালিকার মধ্যে রয়েছে কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, কুচিয়া বিভিন্ন পোকামাকড় আর শাকসবজি। কিন্তু বর্তমানে প্রকৃতি থেকে উৎসারিত এসব জিনিস (খাদ্য) হারিয়ে যাচ্ছে। 

এতে করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিত্যদিনের খাদ্যের তালিকা থেকে বাদ পড়ছে আমিষ জাতীয় খাদ্য। তাই আমাদের দাবি অচিরেই তাদের খাদ্যের স্থল গুলো রক্ষা করা সহ বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ, শামুক ও ঝিনুকের প্রজনন বৃদ্ধি করে এবং কৃত্রিমভাবে শামুক ও ঝিনুকের চাষাবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। 

এসআর

×