পোকা আক্রান্ত পাট খেত
মেহেরপুরে পাটে পোকার আক্রমণে দিশেহারা চাষি। গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও চাষিরা পাটের আবাদ বেশি করেছেন। পাটের আবাদ বেশি হলেও ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর তাপপ্রবাহ ছিল বেশি, তারপরে নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ। তিরিং পোকা, আচা পোকার আক্রমণে উদ্বিগ্ন জেলার পাট চাষিরা। ফলে পাটের ফলন আশানুরূপ হবে না বলে মনে করছেন চাষিরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলা উজুলপুর গ্রামের পাট চাষি জিল্লুর রহমান বলেন, আমার দেড় বিঘা জমিতে পাট আছে। জমিতে বপনের পর থেকে প্রচন্ড তাপপ্রবাহের কারণে পাট ঠিকমতো বড় হয়নি। সেই সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে পোকার আক্রমণ। অন্য বছরে বিঘাপ্রতি ১০ থেকে ১২ মণ হারে ফলন হয়ে থাকে। এ বছর ৬-৮ মণের বেশি ফলন হবে না। আমরা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করছি, তার পরও পোকার আক্রমণ কমছে না।
ফতেপুর গ্রামের পাট চাষি জামাল হোসেন বলেন, এমনিতেই এ বছর পাটে খরচ বেশি, তারপরে আবার নিয়মিতভাবে পোকা মারার বিষ প্রয়োগ করতে হচ্ছে জমিতে, এতে আমাদের বাড়তি খরচ হচ্ছে। পাটে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো বিঘাপ্রতি খরচ হয়ে থাকে। এ বছরে এই টাকা উঠবে না আমাদের। তার পরও আমরা আবাদ করি। আবাদ না করেও কিছু করার নেই আমাদের। পাটে লাভের কিছুই থাকবে না আমাদের শুধুমাত্র জ্বালানি হিসেবে পাটখড়িই ব্যবহার করতে পারি আমরা।
সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের ভূমিহীন মাঠে হাসিবুল ইসলাম জমির পাট কাটছেন। তিনি বলেন, পাটের আঁশ এখনো পূর্ণতা পায়নি। পরিপক্বতা আসার আগে আমাদের কেটে ফেলতে হচ্ছে কারণ, পাট এমনিতেই বড় হয়নি তার পরে পোকার আক্রমণে পাট বড় হবে না, বরং বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে, তাই আগেভাগে জমির পাট কেটে ফেলছি।
কৃষক খেদের আলী আক্ষেপ করে বলেন, পাটকে আমরা সোনালি আঁশ বলে থাকি, সেই সোনালি আঁশ এবার অতিরিক্ত রোদের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু আমাদের মাঠে না এই মাঠকে মাঠ পুরোই জমির পাট বড় হয়নি, এতে ফলন হবে কি করে। আমাদের আসল টাকায় উঠবে না। জমির কন্টাক্ট দেব কিভাবে আর খাবই বা কি এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি আমরা।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, এই মুহূর্তে পাটের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এ বছর পাটের ভালো ফলন হবে এবং চাষিরা লাভবান হবেন।