আশ্রয়ণ প্রকল্প
ঢাকার ধামরাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্যক্তিদের দলিল কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে অন্য পরিবারের কাছে বিক্রির অভিযোগও আছে একটি চক্রটির বিরুদ্ধে।
ধামরাই উপজেলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ৬০০টি ঘর। যেগুলো এতোমধ্যে ভূমিহীন ও ঘরহীনদের মানুষের মাঝে বরাদ্দ করা হয়েছে। নির্মাণের কাজ চলছে আরো ১৮০টি ঘরের। প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
এর মধ্যে উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নে ৪২টি ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এতোপূর্বে ওই ইউনিয়নে ৭৮টি ঘর সুবিধাভোগীদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের তথ্য অনুসারে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর সোমভাগ ইউনিয়নের ঘর কয়েকমাস পূর্বে উদ্বোধন হয়। সেখানে টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন কিছু পরিবার। এছাড়া আরও কয়েকটি পরিবারকে ঘর দেওয়ার কথা বলে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক লাখ টাকা।
স্থানীয়রা আরো জানায়, এলাকার বালু ব্যবসায়ী দুলাল চক্রটির অন্যতম সদস্য সোহেলের মাধ্যমে ঘর প্রতি ২৫-৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। এছাড়া ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে এক বছর আগে অগ্রিম টাকা নিয়েছে তারা। সম্প্রতি প্রকল্পের ১০৭নং ঘরটি অন্য একটি পরিবারের কাছে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় এই চক্রটি।
অভিযুক্তরা হলেন, ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়ের দেপসাই গ্রামের আলতাফ ফকিরের ছেলে সোহেল রানা ও একই এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে দুলাল মিয়া ওরফে ড্রেজার দুলাল।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকা শরিফ (ছদ্ম নাম) নামের এক ব্যক্তি জানান, ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কয়েক দিন আগে একটি ঘর বুঝে পান তিনি। পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ প্রাপ্ত ১০৩নং ঘরটি খালি করার দায়িত্ব দেয় স্থানীয় দুলাল ও সোহেল। চুক্তি অনুযায়ী, ১০৩নং এর চাবি দুলালের কাছে বুঝিয়ে দেন তিনি।
একই অভিযোগ করেছেন আতা নামের আরও এক ব্যক্তি। তার দাবি, গত দুই বছর আগে ঘর বরাদ্দের কথা বলে ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়েছে সোহেল। তবে তার জন্য নির্ধারিত ঘর অন্য এক ব্যক্তির কাছে কাছে বিক্রি করে দেয়। মামলা ও হামলার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না।
স্বপন নামের আরও এক ভুক্তভোগী জানান, স্থানীয় সোহেল একটি কক্ষ ভাড়া কথা বলে দলিল নিয়ে যায়। পরে এক নারীর কাছে বিক্রি করে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দেয়। জানা যায়, ঘরটি ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে।
অভিযোগের বিষয়ে সোহেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকজন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। সে এই বিষয়ে কিছুই জানে না। বালু ব্যবসায়ী দুলালের সঙ্গে তার কি সর্ম্পক জানতে চাইলে সোহেল আরও বলেন, তার কাছে মাঝে মাঝে বিভিন্ন কাজের জন্য যাওয়া হয় এ ছাড়া কিছুই না।
টাকা নিয়ে ঘর বিক্রির বিষয়টিকে পুরোপুরি মিথ্যে দাবী করে দুলাল বলেন, আমি সরকারি প্রকল্পে বালু ও মাটি বরাট করি। সোমভাগেও আমি মাটি ফালাইছি টাকা পায়ছি কাজ শেষ। আমি কাউরে ঘর বিক্রি করি নাই।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, আমরা কয়েকটি ঘর বিক্রয়ের কথা জানতে পেরেছি। কয়েকটি ঘর উদ্ধার করা হয়েছে। প্রকৃত মালিক যদি অসহায় হয় তাদেরকে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মালিকানা পরিবর্তন শুধু মাত্র উত্তরাধিকারী সূত্রে পাবে বা কেউ মারা গেলে তার পরিবর্তে যাচাই বাছাই করে অসহায় ভূমিহীনদের কে দেওয়া হবে। এখানে বিক্রির কোন সুযোগ নেই। তারপর কিছু জায়গাতে এমন ঘটনা শুনেছি সেখানে যাচাই-বাছাই চলছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এসআর