নিহত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামানের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি।
রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত পুলিশ কনস্টেবল মো. মনিরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি শেরপুরের শ্রীবর্দীতে চলছে শোকের মাতম। মাত্র একদিন আগে ঈদের ছুটি শেষে বাড়ি থেকে অফিসে যোগদানের যাওয়ার পথে তার এমন নির্মম মৃত্যু পরিবারের স্বজনসহ কেউ মেনে নিতে পারছেন না। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার কুরুয়া তালুকদারবাড়ীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কাশেম তালুকদার ও মোরছেদা বেগম দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় মনিরুজ্জামান। তিনি দুই ছেলে সন্তানের জনক। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
জানা যায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মো. মনিরুজ্জামান ঈদের ছুটি শেষে শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটায় শেরপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। শনিবার ভোরে ঢাকায় নেমে ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টের সামনে হেঁটে যাওয়ার সময় তার উপর ছুরি নিয়ে হামলা চালায় ছিনতাইকারীরা। পরে নিহত মনিরুজ্জামানের লাশ উদ্ধার করে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
শনিবার বিকেলে নিহত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের শোকে মা মোরছেদা বেগম ও স্ত্রী রুমি বেগম আহাজারি করে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। আগামীকাল রবিবার সকাল ৯টায় নামাজে জানাজা শেষে বাড়ির সামনে কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।
মনিরুজ্জামানের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কাশেম তালুকদার বলেন, আমার ছেলে ২৩ বছর যাবত পুলিশে কর্মরত। ঈদের ছুটিতে সে বাড়ি এসেছিল। গতকাল রাতে একসাথে খাবার খেয়ে আমার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে সে ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে রওনা দেয়। সকালে শুনি সে আর নাই। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
মনিরুজ্জামানের মা মোরছেদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবাটারে যারা মারছে তাদের বিচার চাই। তার স্ত্রী ও দুইটা সন্তান আছে। খুব কষ্ট করে সে নতুন একটা হাফবিল্ডিং বাড়ি করছে। ওই বাড়িতেও সে উঠতে পারল না।
মনিরুজ্জামানের ভাই মো. রনি বলেন, আমার ভাই পুলিশে চাকুরী করতো। তেইশ বছর ধরে সততার সাথে সে কাজ করেছে। কাল রাতে ঈদ শেষ করে আমাদের সবার সাথে রাতের খাবার খেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলো ভাই। ভোরে খবর পেলাম ছিনতাইকারীরা আমার ভাইকে হত্যা করেছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
শ্রীবরর্দী উপজেলা চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যদি এভাবে মারা যায়, এটা কষ্টের বিষয়। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমার উপজেলার একজন সুযোগ্য পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর জন্য আমরা শোকাহত। আমরা চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। অপরাধীরা আইনের আওতায় আসুক।
এমএস