আজমত উল্লা খান।
পরিকল্পিত নগরায়ণ ও আধুনিক নগরী গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (গাউক) চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন আজমত উল্লা খান। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি নগরীর নলজানী এলাকার আমান্তা টাওয়ারস্থিত গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেন। এসময় গাউক এর কর্মকর্তা কর্মচারীরা সহ দলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা নব নিযুক্ত চেয়ারম্যানকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এর আগে তিনি সোমবার মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন।
বিকেলে তিনি তার অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুরে যেন অপরিকল্পিত এবং অনুমোদনবিহীন কোন ভবন বা স্থাপনা গড়ে না উঠতে পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া গাজীপুরে এরিয়া ডিটেইল প্ল্যান (ড্যাব) এর আওতাভূক্ত যেসব এলাকা রয়েছে সে বিষয়টিও আমাদের নজরে থাকবে। সিটি কর্পোরেশন এবং গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যেন একই প্রকল্প গ্রহণ না করে সেজন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশেন কি কি প্রকল্প ও পরিকল্পণা নিয়েছে তার একটি তালিকা চাওয়া হবে।
তিনি আরো জানান, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর যোগদানের আগেই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অর্গানোগ্রাম তৈরি করে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। যেখানে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ১০ বছরেও একটি অর্গানোগ্রাম তৈরী করতে পারে নি।
গত রবিবার (৪জুন) বিকেলে এড. মোঃ আজমত উল্লা খানকে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারী করে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়। ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২০ এর ধারা ৭(১) ও ৭(২) অনুযায়ী এ নিয়োগ দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয়ের (চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা) উপসচিব মোহা. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়- অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য তাঁকে এ নিয়োগ প্রদান করা হলো। এ নিয়োগের অন্যান্য শর্ত অনুমোদিত চুক্তিপত্র দিয়ে নির্ধারিত হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
গত ২৫ মে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (গাসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মেয়র পদে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীন ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক এড. আজমত উল্লা খানকে দলীয় মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্বাচনে দলীয় বিভাজন ও বিশ্বাসঘাতকদের কারণে নির্বাচনে হেরে যান তিনি। এ কারণে ১০ বছর ধরে পরিকল্পিত উন্নয়নবঞ্চিত গাজীপুরবাসী আর যাতে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য নগরবাসীকে কাঙ্খিত মানের সেবা নিশ্চিত করতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ১০দিনের মাথায় আজমত উল্লা খানকে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্রমবিকাশমান গাজীপুর শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকাকে একটি আধুনিক, সুপরিকল্পিত, শিল্প ও আকর্ষণীয় নগরী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন পাস হয়। ২০২২ সালের নবেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন নতুন এ সংস্থা গঠিত হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আদলে। ওই বছরের ২৩ নবেম্বর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হেমায়েত হোসেনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে সরকার। এর পাঁচদিন পর একজন উপসচিবকে সচিব নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে ‘গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
জানা গেছে, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধিভুক্ত এলাকা হচ্ছে রাজধানী ঘেঁষে তুরাগ নদের উত্তর পাশে ৩২৯.৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকা। নাগরিকদের উত্তম সেবাদানের লক্ষ্যে অধিক্ষেত্রকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের আটটি জোনের মধ্যে প্রতি দুটি জোন নিয়ে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একটি জোন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, জোন এক (টঙ্গী-পুবাইল), জোন দুই (গাছা-জয়দেবপুর), জোন তিন (কাউলতিয়া-বাসন) এবং জোন চার (কোনাবাড়ী-কাশিমপুর)।
এ বিষয়ে আজমত উল্লা খান বলেন, আমি সোমবার মন্ত্রণালয়ে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেছি। আমার সঙ্গে সরকারের চুক্তি সম্পাদন হয়ে গেছে।
আজমত উল্লা খানকে গাউকের চেয়ারম্যান নিয়োগ করার পর বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দেয়, তিনি দলীয় পদে থাকতে পারবেন কি না। এসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলীয় পদে থেকেই আমি গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করব।’
আজমত উল্লা আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২৮ মার্চ সাক্ষাৎ করার সময় তিনি আমাকে সান্তনা দিয়েছেন। আমার কারণে নির্বাচনে পরাজয় হয়েছে, এমনটি তিনি মনে করেন না। তিনি আমাকে বিশ্বাসঘাতকদের চিহ্নিত করে সৎ ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে দল পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তা সৎভাবে পালন করেছি। তিনি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি তা পবিত্র আমানত মনে করে সঠিকভাবে পালন করব।
রাজউকের সাবেক গাজীপুর জোনাল কার্যালয়টিকেই গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয় ঘোষণা করা হয়। জনবল না থাকায় রাজউকের জোনাল অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংযুক্ত করে যাত্রা শুরু করে নতুন প্রতিষ্ঠানটি। শুরু থেকেই সুষ্ঠু পরিকল্পনা, জনবল সংকট এবং দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে ঢিমেতালে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল নগরবাসী। এখন নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান যোগদান করায় তার মাধ্যমে কাঙ্খিত উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে নগরবাসী সহ সবাই।
প্রতিষ্ঠানটির সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এটি রাজউকের সাবেক জোনাল অফিস থাকার সময় কর্মরত সাত-আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে সেবা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জনবলের জন্য অনেক বিভাগ চালু করা যায় নি। নতুন চেয়ারম্যান আজমত উল্লা খান দীর্ঘদিন টঙ্গী পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তিনি একজন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ। তিনি নিশ্চয়ই নগর উন্নয়নে নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে নগরবাসী।
এমএস