জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ
জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনটি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর এ আসনটি চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার বিএনপি, একবার কমিউনিস্ট পার্টি ও একবার জাতীয় পার্টি দখলে রেখেছে। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাতি থাকলেও বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে এ আসনে এবার দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের ডাক উঠেছে। এ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় ঐক্য ভেঙে পড়ায় এখানে দলীয় একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন। দলীয় কোন্দলের কারণে আসনটি একবার জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলেও কোনো সুবিধা পায়নি আওয়ামী লীগ।
জামালপুর-৪ আসনটি সরিষাবাড়ী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ আসনের মোট ভোটার ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪২ হাজার ৩৩৩ জন। আর নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৪ জন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ আসনের বর্তমান এমপি ডা. মুরাদ হাসান নিজের বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য দলীয়ভাবে কোণঠাসা হয়ে থাকলেও আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনটিতে সাবেক অধ্যক্ষ ও ঢাকা তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদের জনপ্রিয়তা এখন অনেক বেশি। এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ দিনরাত এলাকার উন্নয়নে কাজ করার পাশাপাশি ব্যাপক জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া এ আসন থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা চল্লিশ বছরের সভাপতি প্রয়াত আব্দুল মালেক এমপির ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান হেলাল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক নেতা আনিসুর রহমান এলিন মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যে এলাকায় আগাম জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
অপরদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাবেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত ব্যারিস্টার সালাম তালুকদারের ভাতিজা জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম। তিনি এ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হলেও এক মেয়াদে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও দুই মেয়াদে সরিষবাড়ী পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। আসছে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলেও এ আসনে বিএনপির একক মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম।
অন্যদিকে ২০১৪ সালে জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে (এরশাদ) আসন ছেড়ে দেওয়ার কারণে সেবার মনোনয়ন পাননি আওয়ামী লীগের ডা. মুরাদ হাসান। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় কোনো প্রার্থী ছিল না। জাতীয় পার্টির মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মামুনুর রশীদ জোয়ারদার। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মামুনুর রশিদ জোয়ারদার ও বিএনএফ প্রার্থী সাংবাদিক মোস্তফা বাবুলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। ওই নির্বাচনে বিএনএফ প্রার্থী সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল অল্প ভোটের ব্যবধানে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
তবে এবার মামুনুর রশিদ জোয়ারদারের নাম না শোনা গেলেও জাতীয় পার্টি থেকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির একক ও শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে তিনি এরই মধ্যে এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল বিএনএফ নির্বাচনে গেলে আসছে নির্বাচনে এই আসন থেকে এবারো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিমত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিতর্কিত কর্মকা- এবং তার নিজস্ব ক্যাডার ‘মুকুল বাহিনী’র অত্যাচার, নির্যাতনে খোদ দলীয় নেতাকর্মীরাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এসব কারণে আসছে নির্বাচনে ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলীয় নেতাকর্মীরা এ আসনে নতুন মুখ চাইছে। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হলেও দলীয় চরম কোন্দল ও দ্বিধাবিভক্তির কারণে দলের প্রার্থী বাছাইয়ে সামান্য ভুল হলে চরম মাসুল দিতে হতে পারে দলটিকে।
মনোনয়ন প্রসঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এলাকায় এখনো আমি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছি। আগামী নির্বাচনেও নৌকার বিজয় অর্জন করতে হলে অধিকাংশ দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আমার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। আগামী নির্বাচনেও আমি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইব।
সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা জনকণ্ঠকে বলেন, শুরু থেকেই ডা. মুরাদ হাসান এমপির ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা আসনটি জাতীয় পার্টির কাছে ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলকে উপেক্ষা করে ফের ডা. মুরাদ হাসানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু মুরাদ হাসান এবারো আগের চেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দেন এলাকায়।
তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকা-ে লিপ্ত থাকার অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই আসনে বিএনপির মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মী ডা. মুরাদ হাসানকে বয়কট করেছে। আমি প্রতিবারই এই আসনে মনোনয়ন চাই। এবারো চাইব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন না দিলেও আমি এই আসনে নৌকার বিজয়ের জন্য কাজ করে যাব।
সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য, তেজগাঁও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমি এ আসনে নৌকা প্রতীকের একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলীয় সকল কর্মকা- নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছি। দল আমাকে এবার কোনোভাবেই অবমূল্যায়ন করবে না বলে মনে করি। জামায়াত-শিবির-রাজাকার ও বিএনপির মনোনীত কোনো ব্যক্তি মনোনয়ন পেলে তাকে প্রতিহত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করব।
তিনি বলেন, এ আসনে বিএনপির মোকাবেলায় তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে দলীয় সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। মূল দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ তৃণমূলের শতকরা ৮০ ভাগ নেতাকর্মী আমার সঙ্গে আছে। দীর্ঘদিন ধরে আমি সরিষাবাড়ী এলাকার বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়াসহ গরিব-দুঃখী মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছি। সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সর্বস্তরের জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য নিয়মিত লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক, এলাকার মানুষের সেবা-সহায়তাসহ নানাভাবে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।
সরিষবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান এলিন জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে আমার সাধ্যমত দল পরিচালনাসহ এলাকার মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় সব সময় পাশে থাকি। ডা. মুরাদ হাসান এমপির বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে এ আসনে আওয়ামী লীগের ভোটের রাজনীতিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এবার এ আসনে প্রার্থী পরির্তনের ডাক দিয়েছে। আমি এ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন চাইব। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে এই জেলার উন্নয়নের রূপকার সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপির নির্দেশনায় উপজেলার সর্বস্তরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নৌকার বিজয় ঘরে তোলার চেষ্টা করব।
অন্যদিকে, জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি আসে তাহলে নির্বাচনে যাবে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় হাইকমা-ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। দল নির্বাচনে গেলে এই আসন থেকে আমি ধানের শীষ প্রতীকে একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেব।