ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় মোখা

বরগুনায় বৃষ্টি ও বাতাসের গতি আরও বাড়ার আভাস 

নিজস্ব সংবাদদাতা, বরগুনা 

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ১৪ মে ২০২৩

বরগুনায় বৃষ্টি ও বাতাসের গতি আরও বাড়ার আভাস 

মোখার প্রভাবে বৃষ্টি

উপকূলীয় জেলা বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব শুরু হয়েছে। বেশকিছু এলাকায় গুঁড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি ও বাতাসের গতি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

রোববার (১৪ মে) সকাল থেকে উপকূলীয় জেলা বরগুনার ৬ উপজেলার বেশকিছু এলাকায় গুঁড়ি গুড়ি বৃষ্টি হতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে বিষখালী ও বুড়িশ্বর নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।

নদী ভাঙন অব্যাহত

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে রোববার (১৪ মে) সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি; জেলার বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। পানি বাড়ার আশঙ্কায় বেড়িবাঁধের বাইরে ও চর অঞ্চলের জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরগুনার বেতাগী এবং বামনা উপজেলা ছাড়া জেলার বাকি চার উপজেলায় সিপিপির মোট ৮ হাজার ৪৬০ জন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৩০০ জন, জাগনারীর ১৫০ জন, ব্র্যাকের ৩৫৫ জন, রোভার স্কাউটের ৩৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক তৎপর রয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২২টি পোল্ডারে ৮০৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৩ কিলোমিটার বাঁধ নদীতে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলায় ১ কিলো ২৫ মিটার, আমতলীতে ১২০ মিটার, তালতলীতে ৫৪০ মিটার, পাথরঘাটায় ৫৮৫ মিটার, বামনা উপজেলায় ৩৪০ মিটার, বেতাগীতে ১৯০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে নদীতে বিলীনের মুখে রয়েছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু সৈয়দ জোবায়দুল আলম বলেন, কৃষকদের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার সর্তকর্তামূলক তথ্য মাঠে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক কর্মস্থলে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি আবহাওয়া সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য ও পরামর্শের জন্য বাংলাদেশ কৃষি আবহাওয়া তথ্য সেবা (বামিস) পোর্টাল অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলার পালের বালিয়াতলীর বাসিন্দা মনির বলেন, প্রতিবছর বন্যা আসলেই আমরা ঝুকির মধ্যে থাকি। পায়রার ভাঙনে ভাঙতে ভাঙতে আমাদের বাড়ির ও মসজিদের পাশে চলে এসেছে। নদীর অব্যাহত  ভাঙেনর কারণে আমরা নি:স্ব প্রায়। যতবার ভাঙে ততবার আমার নতুন বাড়ি ঘর নির্মাণ করি। যেকোনো সময় নদীতে ভেঙে বিলীন হতে পারে। মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। মোখার কারনে আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি।

একই  এলাকার  বাসিন্দা ইদ্রিস বলেন,  নদী ভাঙ্গনে আমাদের জমিজমা যা ছিল সব নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমরা বাঁধ না থাকার কষ্টে আছি। মোখার প্রভাবে এখন কতো খানি ক্ষতি হয় কে জানে। 

বঙ্গোপসাগের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে উপকুলে ভারিবৃষ্টি ও উচ্চ জলোচ্ছাসের আশঙ্কায় বরগুনা কৃষকরা আধা-পাকা বোরো ধান ও রবি ফলস ঘরে তুলছেন। অপরিপক্ক ফসল  ঘরে তোলার কারণে কৃষকরা লাভবান হবে না বলে জানিয়েছেন। 

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব    বলেন ,  জেলায়  প্রায় তিন  কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ আছে । স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে জলোচ্ছাসে বেশি পানি হলে বেরিবাঁধ প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি কিছু কিছু জায়গায় ভেঙে যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে আমরা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। 

বরগুনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে বরগুনা জেলার প্রায় চার লাখ মানুষের জন্য ৬৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ২৫ মেট্রিক টন চাল, ১ হাজার কার্টন শুকনা খাবার, ৭০০ প্যাকেট বিস্কুট, ১৯০ বান টিন হাতে আছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে বরগুনার পাথরঘাটা এবং তালতলী উপজেলার সব ইউনিয়ন, বেতাগী উপজেলার এক তৃতীয়াংশ ও সদর উপজেলার বদরখালী, ৭ নম্বর ঢলুয়া, আয়লা পতাকাটা ও ফুলঝুড়ি ইউনিয়নে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  
এর আগে ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় বরগুনা জেলায় বেড়িবাঁধের বাইরে ও চরাঞ্চলের এলাকাগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে জেলার প্রায় দুই শতাধিক মানুষ মারা যায়।
 
 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×