যুদ্ধ জাহাজ
ঘূর্ণিঝড় মোখা'র কারণে নিরাপদ আশ্রয়ে মোংলা বন্দর জেটিতে নৌ বাহিনী ও কোস্টগার্ডের চারটি যুদ্ধ জাহাজ নোঙ্গর করেছে। মোংলা বন্দরের সাত ও আট নম্বর জেটিতে গতকাল শুক্রবার রাতে জাহাজ চারটি নোঙ্গর করে। জাহাজগুলো হলো- নৌ বাহিনীর ‘বি এন এস বঙ্গবন্ধু’ ও ‘বি এন এস স্বাধীনতা’ এবং কোস্টগার্ডের ‘তাজউদ্দিন’ ও ‘সৈয়দ নজরুল’ জাহাজ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শাহিন মজিদ জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে জাহাজগুলো নোঙ্গর করেছে। দুর্যোগ কেটে গেলে পুনরায় এসব জাহাজ তাদের গন্তব্যে ফিরে যাবে। মোখা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে নিজস্ব সতর্ক সংকেত এলার্ট-২ জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া, বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) দুপুর পর্যন্ত বন্দরে অবস্থানরত কয়েকটি জাহাজ থেকে পন্য খালাসও হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মাদ শাহীন মজিদ।
তিনি বলেন, ‘বন্দরে নিজস্ব সতর্ক সংকেত এলার্ট-২ জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্দরে থাকা জাহাজগুলেকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে। গতকাল থেকেই লাইটার জাহাজগুলো নিরাপদ স্থানে যেতে শুরু করেছে। দুপুর পর্যন্ত বন্দরে অবস্থানরত কয়েকটি জাহাজ থেকে পন্য খালাস হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্দর এলাকায় এই মুহুর্তে সাতটি বিদেশি জাহাজ এবং ১১টি দেশি জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজ ও জাহাজের পাশে থাকা পণ্য নিতে আসা ছোট লাইটার, বার্জ ও কোস্টারগুলোকেও নিরপাদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে।’
বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বন্দরের একটি নিজস্ব সতর্ক সংকেত ব্যবস্থা রয়েছে। এটা সর্বোচ্চ চার পর্যন্ত উঠতে পারে। বর্তমানে বন্দরে ২ নম্বর এলার্ট চলছে। আমরা পরিস্থিতি পযবেক্ষণ করছি। সতর্ক সংকেত এ্যালার্ট-৩ এ পৌঁছালে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করা হবে।’
এদিকে মোখার প্রভাবে মোংলার পশুর নদী দিয়ে সুন্দরবনের করমজলসহ বিভিন্ন এলাকায় টুরিস্ট ট্রলার বন্ধ রয়েছে। মোখায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। ঘূর্ণিঝড় মোখা চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড মোংলা জোন কর্তৃপক্ষ।’
উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষার্থে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন এর কর্মকর্তা ও নাবিকদের ঘূর্ণিঝড় উপলক্ষে উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে নিয়োজিত করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ, সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন ঝুকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সাইক্লোন শেল্টারে নেওয়ার পাশাপাশি কোস্ট গার্ড স্টেশনে আশ্রয় প্রদান করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোস্ট গার্ডের সকল জাহাজ, বোট, স্টেশন, আউটপোষ্ট এবং ডিজাস্টার রিসপন্স এন্ড রেস্কিও টিম প্রস্তুত রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় অঞ্চলে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক সমন্বয়সাধনের জন্য বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন কর্তৃক বিশেষ কন্ট্রোলরুম- ০১৭৬৯৪৪৪৯৯৯ পরিচালনা করা হচ্ছে। উওর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকছি থেকে সাবধানে চলাচল করার নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। দুর্যোগকালীন ও দূর্যোগ পরবর্তী সময়ে যেকোন সংকটকালীন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও তথ্যের জন্য কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন এর অধিনস্থ সকল জাহাজ, স্টেশন এবং আউটপোষ্ট সমূহ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান (বিপিএএ) জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সকল ধরণের প্রস্তুত্তি গ্রহণ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জেলার ৪৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এমএইচ