ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১

তদবির ও ঘুষ ছাড়াই পুলিশের চাকুরি পেলেন ১২৯

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর

প্রকাশিত: ২০:০১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

তদবির ও ঘুষ ছাড়াই পুলিশের চাকুরি পেলেন ১২৯

পুলিশের চাকুরি

গাজীপুরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ (গৃহকর্মী) করেন মারিয়ালী গ্রামের সাথী আক্তার। একাজে প্রতিমাসে তিনি পান ৬-৭ হাজার টাকা। তার স্বামী অটোরিক্সা চালক। এ দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। 

স্বামী-স্ত্রী দু’জনের আয় রোজগারে চলে সংসার ও সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ। ওই দম্পতির মেয়ে যুথি আক্তার এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারে নি কলেজে। তাই সংসারের অভাব ঘোচাতে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকুরির জন্য আবেদন করেন যুথি। 

কোন প্রকার তদবির ও ঘুষ ছাড়াই যুথি পেয়ে যান সোনার হরিণের ন্যায় ওই সরকারী চাকুরি। যুথিসহ জেলায় এদফায় ১২৯জন নিয়োগ পেয়েছেন ওই পদে। এমন অভিব্যাক্তি প্রকাশ করেছেন যুথির মা সাথী আক্তার।

রবিবার ওই পদে নিয়োগ পরীক্ষার চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এ উপলক্ষ্যে জেলা পুলিশ লাইনস-এ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তাদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সানোয়ার হোসেন ও নন্দিতা মালাকারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। 

গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম জানান, গাজীপুরে কোন প্রকার তদবির ও ঘুষ ছাড়াই পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেলেন ১২৯ জন। তারা আন্তরিক প্রচেষ্টায় ও নিজেদের যোগ্যতার মাধ্যমে শুধুমাত্র সরকারি ফি ১২০ টাকা দিয়ে বদলে ফেলেছেন নিজেদের ভাগ্য। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার কারণে তারা অভুতপূর্ব সুযোগ পেয়েছেন দেশ সেবার। দেশ প্রেম, সততা, পেশাদারিত্ব ও সেবার মনোভাব নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দায়িত্ব পালনে কাজ করবে বলে আমি আশা করছি।

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোঃ সানোয়ার হোসেন জানান, ‘চাকুরি নয়, সেবা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এ বছর ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষা প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি টিআরসি পদে গাজীপুর জেলায় নিয়োগ কার্যক্রম শতভাগ মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। গাজীপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলমের আন্তরিকতা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে টিআরসি পদে নিয়োগ চুড়ান্ত হয়েছে।

তিনি আরো জানান, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে টিআরসি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে গাজীপুর জেলায় সাধারণ ও বিভিন্ন কোটায় মোট ৩ হাজার ৪৮৫ জন (নারী ও পুরুষ) চাকুরী প্রার্থী অনলাইনে আবেদন করেন। 

পরে ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম দিনের ইভেন্টে “শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র যাচাইকরণ” পরীক্ষায় ১ হাজার ৭৯৪ জন, ৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দিনের ইভেন্টে দৌড়, পুশআপ, লং জাম্প এবং হাই জাম্পসহ ফিজিক্যাল শারীরিক সহনশীলতা পরীক্ষায় (Physical Endurance Test)  ১ হাজার ২০১ জন এবং ১০ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দিনের ইভেন্টে (দৌড়, ড্র্যাগিং এবং রোপ ক্লাইম্বিং) পরীক্ষায় ৯২৭ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। 

পরবর্তীতে এসব উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ৯১৭ জন প্রার্থী ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। এ পরীক্ষায় ৩৮৫ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। তারা ২৩ ফেব্রুয়ারি মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে সর্বমোট ১২৯ জন প্রার্থী চ’ড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত ১২৯ জন টিআরসি’র মধ্যে ১১০ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী।

যুথি আক্তার চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, আমরা জানি সোনার হরিণ পাওয়ার মতোই সরকারি চাকুরি পাওয়া। সরকারী চাকুরী পেতে তদবির বা ঘুষের প্রয়োজন হয়। অথচ আমার বা আমার পরিবারের তা ছিল না। কিন্তু আশ্চার্যজনক হলেও ওই প্রবাদকে মিথ্যে প্রমাণিত করে শুধুমাত্র সরকারি ফি ১২০ টাকা জমা দিয়ে আমি সোনার হরিণ নামের সরকারি চাকুরি পেয়েছি। 

আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলমের আন্তরিকতা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে টিআরসি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কারণে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি। 
 

 

এমএস

×