ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

গরুচোর সন্দেহে ৫ জনকে পীরের রূটিপড়া খাইয়ে নির্যাতন

নিজস্ব সংবাদদাতা, গলাচিপা

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ৪ জানুয়ারি ২০২৩

গরুচোর সন্দেহে ৫ জনকে পীরের রূটিপড়া খাইয়ে নির্যাতন

গলাচিপা

গরু চোর ধরার জন্য প্রথমে কথিত পীরের কাছ থেকে আনা ডিম সিদ্ধ করা হয়। জোর করে খাওয়ানো হয় পীরের দেয়া রূটি পড়া। পরে চোর সন্দেহে পাঁচজনকে নদীর পাড়ে নিয়ে প্রত্যেকের মাথায় ১০১ কলস করে পানি ঢেলে প্রচন্ড শীতের সন্ধ্যায় গোসল করানো হয়। আর এতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই পাঁচজন রাইসমিলের শ্রমিক। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে চোর ধরার আয়োজকরা সরে পড়ে। পুলিশ অসুস্থদের হাসপাতালে ভর্তি করে দায় সারার চেষ্টা করে। কিন্তু ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গোটা এলাকায় তোলপাড় শুরু হলে  পুলিশের তৎপরতা বাড়ে। 

এদিকে, অসুস্থ ওই শ্রমিকরা এখনও হাসপাতাল বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। এরমধ্যে একজনের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় তাকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চোর ধরার নামে অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পৌর শহরের রতনপুর এলাকায়।  

ঘটনার শিকার অসুস্থ শ্রমিক, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, দিন কয়েক আগে পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কুদ্দুস পেয়াদারের গোয়াল থেকে পাঁচটি গরু চুরি হয়। এরপরই গরু চোরদের ধরার জন্য কয়েক প্রভাবশালী মাঠে নামে। তারা পীরের কাছ থেকে আনা ডিম গরম পানিতে ফুটিয়ে প্রথমে সিদ্ধ করে। এরপর রতনপুর এলাকার শাহজালাল অটো রাইসমিলের পাঁচ শ্রমিক রহিম খা (৬৫), বেল্লাল বিশ্বাস (৩০), আবু তালেব গাজী (৩৫), আলাউদ্দিন সরদার (৩৫) ও মোস্তফাকে (৫৫) কর্মস্থল থেকে ধরে এনে তাদের জোর করে কথিত পীরের দেয়া রূটি পড়া খেতে বাধ্য করা হয়। এতে তারা তাৎক্ষণিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা রূটিতে বিষ জাতীয় কিছু মেশানো ছিল। প্রভাবশালীরা এতেও ক্ষান্ত হয়নি। শ্রমিকদের কাছ থেকে চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাদেরকে রবিবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রচন্ড শীতের মধ্যে নদীর পাড়ে নিয়ে প্রত্যেকের মাথায় ১০১ কলস পানি ঢেলে গোসল করানো হয়। এতে তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

গলাচিপা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রহিম খা জানান, কথিত পীরের কাছ থেকে রুটিপড়া এনে চোর সন্দেহে তাকে জোর করে তা খাওয়ানো হয়। অন্যদেরও তা খেতে বাধ্য করা হয়। এতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর মাথায় পানি ঢেলে গোসল করানো হয়। শারীরিক নির্যাতন ও মারধরও করা হয়।

চিকিৎসাধীন আবু তালেব গাজী জানান, শত শত মানুষের চোখের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। কেউ প্রতিবাদ করেনি। তারা অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

আলাউদ্দিন সরদার জানান, সমাজে তাদের এখন মুখ দেখানোর উপায় নেই। তাদের সঙ্গে যে টাকা পয়সা ও মোবাইলফোন ছিল, তাও প্রভাবশালীরা নিয়ে গেছে।

চিকিৎসাধীনদের অসুস্থতা সম্পর্কে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী আবদুল মমিন বলেন, ‘প্রাথমিক লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে অসুস্থদের যে রূটি খাওয়ানো হয়েছে তাতে ফুডপয়জনিং হয়েছে। অর্থাৎ তাতে ধুতরা ফুলের বিষ জাতীয় কিছু মেশানো ছিল। আমরা পুলিশকে ওই রূটি সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার জন্য বলেছি। এছাড়া ওই অবস্থায় তাদের শরীরে পানি ঢালায় অসুস্থতা মারাত্মক আকার নিয়েছে। একজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বরিশাল পাঠানো হয়েছে।’

এদিকে, ঘটনার পর দু’দিন ধরে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়।
গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ শোনিত কুমার গায়েন আজ বুধবার দুপুরে জানান, এ ঘটনায় মামলা রেকর্ডের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।

 

এমএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

×