এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ফাইল ফটো
সাভারে হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ এক নারীর লাশ আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) সকালে জানাজানি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে বীর মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা এবং ওই নারীর প্রায় ৯০ হাজার টাকা বিল মওকুফ করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গত রাতে সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা লেহাজ উদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরবর্তীতে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বকেয়া বিলের জন্য আজ সকাল পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার লাশটি আটকে রাখে। যদিও পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উনার মোট বিলের ৩৫ হাজার টাকা মওকুফ করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লেহাজ উদ্দিনের ছেলে শেখ ফরিদ বলেন, আমার বাবা গেল রাত ১২টার দিকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে বিল বকেয়া থাকায় উপজেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানালে তাদের হস্তক্ষেপে বুধবার সকাল ১১টার দিকে লাশ নিয়ে আসি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে আমাদের ৩৫ হাজার টাকা বিল মওকুফ করে।
অন্যদিকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকার বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সী হ্যাপি নামে এক প্রসূতি নারী সিজারিয়ান অপারেশনের পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে ৯০ হাজার টাকা বকেয়া বিলের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নারীর মরদেহ আটকে রাখেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
মৃতের ভাই জুবায়ের আহমদ বলেন, ৩১ ডিসেম্বর রাতে প্রসব ব্যাথা উঠলে আমার বোন হ্যাপিকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। পরবর্তীতে তার সিজারিয়ান অপারেশনের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় হ্যাপি মৃত শিশু জন্ম দিয়েছেন।
এদিকে হ্যাপির অবস্থা আশংকাজনক জানিয়ে হ্যাপিকে ওই রাতেই আইসিউতে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। এদিন সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে জানানো হয় হ্যাপি মারা গেছে। পরবর্তীতে হ্যাপির মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর আমরা তার লাশ নিতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৯০ হাজার টাকা বকেয়া বিল দেখিয়ে তার লাশ আটকে রাখে।
আমরা গরীব, তারপরও একটা সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য আমরা হ্যাপির চিকিৎসা বাবদ ৯০ হাজার টাকার ওপরে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করি। ৯০ হাজার টাকা আমরা যোগাড় করতে পারছিলাম না বিধায় তারা লাশটি আটকে রাখে। পরে সাংবাদিক এবং মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের একজন সদস্যকে জানানোর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে লাশ ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে জানতে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আনোয়ারুল কাদের নাজিম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বলেন, কারো লাশই বকেয়া বিলের জন্য আটকে রাখা হয়নি, ফাইল কম্পলিট করতে কিছুটা সময় লেগেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল সাহাবুদ্দিন খান বলেন, বকেয়া বিলের জন্য কোনো মৃত ব্যক্তির লাশ আটকে রাখতে পারে না কোনো হাসপাতাল। এক্ষেত্রে কেউ যদি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করে তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআর