ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

র‌্যাবের অভিযান

যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামি গ্রেপ্তার

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর 

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ২ জানুয়ারি ২০২৩; আপডেট: ১৮:৫৫, ২ জানুয়ারি ২০২৩

যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামি গ্রেপ্তার

কারাদন্ড ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক দুই আসামি 

দীর্ঘ দুই যুগ ধরে পলাতক ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত একজন আসামি এবং দীর্ঘ একযুগ ধরে পলাতক নিজ পাঁচমাস বয়সি শিশু সন্তানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১৪। 

রবিবার ২ জানুয়ারী ২০২২) পৃথক স্থান থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সোমবার সকালে র‌্যাবের জামালপুর ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের কম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার আশিক উজ্জামান। র‌্যাব সূত্র জানায়, দীর্ঘ দুই যুগ ধরে পলাতক যাবজ্জীবন কারাদন্ড-প্রাপ্ত আসামি মো. ইসমাইল হোসেন ওরফে ইসরাফিল শেরপুর জেলার শেরপুর সদর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। 

ইসমাইল হোসেন তার মামা শ্বশুর টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার টেংরি গ্রামের মো. আনসার আলীর ছেলে ওয়াহেদ আলীর সহায়তায় ১৯৯৮ সালের ৭ জুলাই বিকেলে প্রতিবেশী এক ভিক্ষুককন্যাকে অপহরণ করেন। তারা ভিকটিমকে বেবিটেক্সিতে করে শেরপুরে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার দু’মাস পর ১ সেপ্টেম্বর ভিকটিমের মা বাদী হয়ে তার মেয়েকে জোরপূর্বক অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগে মধুপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২ জুলাই টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন বিশেষ আদালতের বিচারক আসামি ইসমাইল হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড করে মামলাটির রায় দেন। 

অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনার পর থেকেই আসামি ইসমাইল হোসেন দীর্ঘ দুই যুগ ধরে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন পরিচয়ে শ্রমিক ও দিনমজুর পেশায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছিলেন। র‌্যাবের একটি আভিযানিক দল রবিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার কুসুমপুর মোড় থেকে আসামি ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি ইসমাইল হোসেন ভিকটিমকে অপহরণ ও ধর্ষণের সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাকে মধুপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। 

অপর ঘটনাটি ঘটে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার নতুন টুপকারচর গ্রামে। ওই গ্রামের দরিদ্র উজির আলীর মেয়ে রোজিনা বেগম ও শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার দুধনই গজারিকুড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে মো. মোস্তফা দুজনই ঢাকায় পোশাককর্মী ছিলেন। ২০০৭ সালে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পরও তারা কিছুদিন পোশাক কারখানায় চাকরি করার পর অন্ত:সত্বা স্ত্রী রোজিনাকে নিয়ে ঢাকা থেকে বকশীগঞ্জে চলে আসেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে মো. মোস্তফা ২০১১ সালের ২০ মে বিকেলে স্ত্রী রোজিনাকে নির্যাতন করেন। 

একপর্যায়ে মোস্তফা তার পাঁচমাস বয়সের ছেলে আসিফকে দুই পা ধরে ঢেকির সাথে বেশ কয়েকবার আছাড় দিলে শিশু আসিফ ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ সময় প্রতিবেশীরা পাষন্ড-মোস্তফাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। একই সাথে এ ঘটনায় রোজিনা বেগম বাদী হয়ে তার স্বামী মোস্তফাকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের কিছুদিন পর মোস্তফা আদালত থেকে জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ওই মামলাটির রায়ে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জামালপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত পলাতক আসামি মো. মোস্তফাকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন।

 র‌্যাব জানায়, র‌্যাবের একটি আভিযানিক দল রবিবার বিকেলে ঢাকার খিলগাঁও থানার নন্দিপাড়া হাজিবাড়ি এলাকা থেকে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামি মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করেছে। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মোস্তফা স্ত্রীকে নির্যাতন ও তার শিশু সন্তানকে হত্যার সত্যতা স্বীকার করেছেন। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ আত্মগোপনে থাকায় অবস্থায় মোস্তফা নিজেকে কুদ্দুছ, রজব আলী এবং ইয়াসিন আলী সজিব পরিচয়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অটোচালিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বকশীগঞ্জ থানার মামলা সূত্রে আসামি মোস্তফাকে শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।  
 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×