ভবন নির্মাণের অভিযোগ
জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের জমি বেদখলের অভিযোগ উঠেছে। আজ এ সংবাদ লেখার আগ পর্যন্ত, প্রায় সপ্তাহকাল ধরে একটি প্রভাবশালী মহল তাদের ক্রয়কৃত জমি দাবি করে বেদখল প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা (তহশীলদার) রেজাউল করিমের চোখের সামনে বেদখল করা জমিতে পাকাভবন নির্মাণের কাজ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, নাকের ডগার ওপরে থাকা ভূমি অফিসের সরকারি জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে, অপরদিকে রহস্যজনক কারণে ওই জমি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তিরা সহায়হীনের মতো নির্বিকার রয়েছেন। সরেজমিনে গিয়ে একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে দেখা যায়, রাজমিস্ত্রি, লেবার-সহ ঘটনাস্থলে ৪/৫জন লোক রয়েছেন।
এছাড়া সেখানে কাজ চলাকালীন তানিয়া বেগম নামে এক নারীর নেতৃত্বে ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। তার কাছে উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদকর্মীদের সাথে অসংলগ্ন আচরণ করেছেন। সংবাদকর্মী, সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কেউ দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে সরেজমিনে গেলে ওই বিশেষভঙ্গির ব্যবহার করা হয়।
সূত্রের দাবী, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বিশেষ একটি মহল জমি বেদখল বাস্তবায়ন করতে এই বিশেষকৌশল অবলম্বন করছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ভূমি অফিসের জমিতে তানিয়া বেগম নিজেই ভবন নির্মাণ করছেন। তিনি জানান, ভরপাশা ইউনিয়নের কানকী-কৃষ্ণকাঠী গ্রামের মৃত হায়দার আলী তার শশুর। তার দাবী, কালীগঞ্জের লতিফ মিয়া ওরফে লতিফ মাস্টারের নিকট হতে তার শশুর দীর্ঘদিন আগে ৩৫ শতাংশ জমি ক্রয় করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তানিয়া বেগমের দাবীকৃত জমিতে একতলা একটি পাকাভবন রয়েছে। ওই ভবনের প্রবেশপথ ভূমি অফিসের জমির মধ্যে। এবিষয়ে তানিয়া জানান, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রিয়াজ জমি পরিমাপ করে তাদের বুঝিয়ে দেয়ার পরই তারা দ্বিতীয় পাকাভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।
তিনি আরো বলেন তহশীলদার রেজাউল করিম কোনোপ্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ভূমি অফিসের পিছনদিকের জমি একটি বিশেষমহলকে দিয়েছেন। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এই কর্মকর্তা নিজের অপকর্ম ঢাকতে আমাদের ক্রয়কৃত জমি ভূমি অফিসের দাবী করে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন।
সার্ভেয়ার রিয়াজের কাছে তানিয়ার বেগমের দাবী সম্পর্কে জানতে চাইলে, তিনি এড়িয়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে বলেন, ঘটনাস্থলে কানুনগো আফজাল হোসেন গিয়েছেন। তাই এ ঘটনার বিষয় তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কনুনগো আফজাল হোসেন জানান, তিনি সরেজমিনে গিয়েছেন এবং সার্ভেয়ার রিয়াজ জমি পরিমাপ করে দেখেছেন পুরনো নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশের রাস্তাটি ভূমি অফিসের। এছাড়াও এখন যে নতুন ভবনটির নির্মাণ কাজ চলছে তার মধ্যেও ভূমি অফিসের প্রায় দুই ফুট জমি রয়েছে। ভূমি অফিসের জমি বেদখল করে পাকাভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গড়িমসি করে বলেন- এসিল্যান্ড স্যারের সাথে কথা বলেন।
পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ভবন নির্মাণ কাজের শুরুতেই এসিল্যান্ড স্যার তাদের অফিসে ডেকে বলেছেন- ‘কর্তৃপক্ষ জমির মালিকানা নির্ধারণ না করা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ কিংবা অন্য যেকোনো অপতৎপরতা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুজর মোঃ ইজাজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি জমিতে ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
অপরদিকে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুজর মোঃ ইজাজুল হক এর নির্দেশ অমান্য করে প্রভাবশালী মহল ভবন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। সরকারি জমি রক্ষায় পাকাভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ না করায় জনমনে নানা প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চলছে কানাঘুষা।
ভূমি অফিসের জমি রক্ষার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের রহস্যঘেরা উদাসীনতা এবং প্রভাবশালী মহলের বেপরোয়া কর্মকান্ডে মানুষের মধ্যে সন্দেহ সংশয় এবং নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
এমএস