ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

শহিদ মুক্তিযোদ্ধার কবরের ফলকে জীবিত মা ‘মৃত’

সংবাদদাতা, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ২০:১৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ২০:১৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২

শহিদ মুক্তিযোদ্ধার কবরের ফলকে জীবিত মা ‘মৃত’

ছেলের কবরের পাশে প্রতিদিন গিয়ে বসে থাকেন আছিরন বেগম

১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁর বীরত্বগাঁথা এখনও সবার মুখে মুখে আলোচিত নাম শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল করিম। মুক্তিযুদ্ধকালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দুর্গম কালাসোনার চরে সম্মুখযুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানী সেনাকে হত্যার পর তিনি শহিদ হন। সহযোদ্ধারা তাঁকে সেই চরেই দাফন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর চরের নাম পাল্টে সেখানে করা হয় নতুন ইউনিয়ন ‘ফজলুপুর ইউনিয়ন’। গত দু’বছর আগে সরকারিভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। ফজলুল করিমের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার  মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের পুনতাইড় গ্রামের বাড়িতে সম্প্রতি একটি প্রতীকি কবর স্থাপন সম্পন্ন  হয়। তাঁর দৃষ্টিহীন মা আছিরন বেগম (৯৪) ছেলের  কবরের পাশে প্রতিদিন গিয়ে বসে থাকেন।  কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে সেই কবরের নামফলকে সেই মাকেই মৃত ঘোষনা করা হয়েছে। বিজয়ের একান্ন বছরে গাইবান্ধা জেলায় হাতেগোণা বেঁচে থাকাদের  অন্যতম শহিদমাতার খবর নিতে গিয়ে ফলকে দেখা যায় এই চিত্র।  বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়।  

পারিবারিকসূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধের শেষভাগে ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কালাসোনার চরে সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হন পুনতাইড় গ্রামের কলেজছাত্র ফজলুল করিম। পরবর্তীতে সরকারি অনুদানসহ নানাধরণের  সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন  শহিদমাতা আছিরন বেগম। সরকারীভাবে সেই চরটিকে স্বাধীনতার পর ফজলুপুর ইউনিয়ন নামে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সেখানকার কবরও যমুনার তীব্র ভাঙ্গণে বিলীন হয়ে গেছে।

তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এই অদ্ভুত কান্ড। ভুলেভরা  নামফলকে লেখা আছে “শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার সমাধি, নাম : শহীদ ফজলুল করিম, পিতার নাম : মৃত্যুঃ দেলোয়ার হোসেন, মাতার নাম : মৃত্যুঃ আছিরন বেগম, গ্রাম : পুনতাইড়, পোস্ট : মহিমাগঞ্জ, উপজেলা : গোবিন্দগঞ্জ, জেলা : গাইবান্ধা। সেক্টর নং- ১১, গেজেট নং- ৩৯১, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

শহিদ ফজলুল করিমের ছোট ভাই আমিরুল ইসলাম জানান, দৃষ্টি শক্তি হারানো নবতিপর মা এখনও প্রতিদিন এই প্রতীকি কবরের কাছে বসে থাকেন। ছুঁয়ে দেখেন প্রিয় সন্তানের প্রতীকি কবরের বেষ্টনী। কিন্তু  মা এখনও জানেন না কবরের ফলকে তাকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে। তাঁকে জানানও হয় নি। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, দীর্ঘসময় নিয়ে এই প্রতীকি সমাধি নির্মাণ করা হয়। কবর নির্মাণের কাজ শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বড় কর্মকর্তারা আসেন নি। তাই তিনি অসংখ্য ভুলে ভরা ফলকে মায়ের নামের আগে মৃত লেখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু পাত্তা পান নি।

গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ইউনিট কমান্ডার ও শহিদ ফজলু’র সহযোদ্ধা মাহমুদুল হক শাহাজাদা বলেন, এই নাম ফলক তৈরী করে  শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও তার মা’কে অমর্যাদা করা হয়েছে। যারা এটি করেছেন তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সম্মান করেন না। 

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ হোসেন জনকন্ঠকে মোবাইল ফোনে জানান,  শহিদ মুক্তিযোদ্ধার কবরে ভুল তথ্য লেখার বিষয়টি জানা ছিলোনা। দু’বছর আগে যারা এটি করেন তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।  প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে খুব দ্রুত এটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। 

 

এমএম

সম্পর্কিত বিষয়:

×