একই জমিতে তিন ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে। ছবি: জনকণ্ঠ।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে গতানুগতিক চাষ বাদ দিয়ে লাভজনক বাণিজ্যিক ফসল আবাদের নতুন নতুন শস্যবিন্যাসে চাষ করেন গফরগাঁও উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকরা। আগাছা দমন ও আর্দ্রতা ধরে রাখতে কৃষকরা ব্যবহার করছেন বিভিন্ন পদ্ধতি। করেছেন ভুট্টা, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, করলা, লাল শাক ও মুলা চাষবাদ।
এবার উপজেলার দুই হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ হেক্টর জমিতে একসঙ্গে তিনটি লাভজনক ফসল আবাদ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলা প্রশিক্ষিত বেশ কয়েকজন কৃষক।
সরেজমিনে ফসলের মাঠে দেখা যায়, একই জমিতে তিনটি ফসল করেছেন চরআলগী ইউনিয়নের গোলাম রব, তফাজ্জল হোসেন, ফজলু মিয়া, টাংগাব ইউনিয়নের দুলাল উদ্দিন, জহুর আলীসহ বেশ কয়েকজন কৃষক। একই জমিতে তিন ফসলী আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
গোলাম রব, ফজলু মিয়া বলেন, ‘জমিতে একই ফসল আবাদ না করে বিভিন্ন রকমের ফসল আবাদ করছি। একটা জমিতে যেমন আছে লাউ, আবার অন্য জমিতে মাসকলাই, আলু, বেগুন। আর ২৫ শতক জমিতে আবাদ করেছি একসঙ্গে তিন ফসল। মোবাইল ফোনে ইউটিউওবে কৃষি বায়োস্কোপের ভিডিওতে দেখে একাই সঙ্গে তিন ফসল আবাদ করা দেখি।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এই বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে ও নিজে ঝুঁকি নিয়ে করলা, ক্ষীরা, মুলা আবাদ শুরু করি। প্রথমে মনে হচ্ছিল তিনটি ফসল একসঙ্গে হবে না, এখন দেখছি সবগুলোই ভালো হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০/৬৫ হাজার টাকার ক্ষীরা ও মুলা বিক্রি করা হয়ে গেছে আরও বিক্রি হবে। ৫০-৬০ মণ একাঙ্গী পাওয়া গেলে দুই হাজার টাকা মণ হিসেবে সেখান থেকে এক লাখ টাকার বেশি আসবে। আশা করছি পুরা শীত মৌসুমে আরো লাখ টাকার ক্ষীরা ও মুলা বিক্রি করতে পারব।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, যেখানে একাধিক ফসল একই জমিতে একই সময়ে চাষ করা হয়। ফলে জমির সর্বোত্তম ব্যবহার যেমন নিশ্চিত হয় তেমনি কম খরচে একাধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি জমি থেকে অধিক আয় করা সম্ভব হয়। আবাদি কৃষি জমি দিন দিন কমছে কিন্তু খাদ্য চাহিদা বাড়ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে একই জমি থেকে অধিক ফসল উৎপাদন করার কৌশল উদ্ভাবন করাটা সময়ের দাবি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে, এক ইঞ্চি আবাদি জমিও যেন পতিত না থাকে। সেই নির্দেশনার সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হওয়ার চেষ্টা করছি আমরা এই মিশ্র ফসল চাষের মাধ্যমে। বিগত কয়েকবছর ধরে আমরা কৃষকপর্যায়ে লাভজনক ফসল আবাদের কৌশলগত বিষয় নিয়ে কাজ করছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবিদুর রহমান বলেন, ‘চরাঞ্চলের কৃষকরা খুবই পরিশ্রমী। উনাদেরকে একটু পরামর্শ দিলেই মনে হয় এই উপজেলা অনাবাদি জমি থাকবে না। পর্যায়ক্রমে সকল অনাবাদি জমি আবাদি জমিতে পরিণত হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সবসময় আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে বিনা মূল্যে সার বীজ ও সবজি বীজ বিতরণ করে আসছি। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছে।
এমএইচ