দুর্ভোগ
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার দশানী নদীতে সেতু না থাকায় বকশীগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্তমানে ওই দুই উপজেলার বাসিন্দরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়া নৌকায় নদী পার হতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা সেখানে জরুরিভিত্তিতে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও ইসলামপুর দুটি পাশাপাশি উপজেলা। দুই উপজেলায় প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক লোকের বসবাস। যোগাযোগ, ব্যবসা, শিক্ষা ও কৃষিকাজসহ নানা কাজে দুই উপজেলায় বহু মানুষ এই দশানী নদী পথে যাতায়াত করে থাকেন। ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদী বকশীগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার মানচিত্রকে দ্বিখন্ডিত করেছে। বর্তমান সরকারের আমলে ব্রহ্মপুত্র নদে একাধিক সেতু নির্মাণ হয়েছে।
বকশীগঞ্জ শহর থেকে এলজিইডির একটি পাকা রাস্তাও দশানী নদীর পূর্বপার পর্যন্ত সংযুক্ত হয়েছে। অপরদিকে ইসলামপুর উপজেলা শহর থেকে এলজিইডির একাধিক পাকা রাস্তা দশানী নদীর পশ্চিমপারে সংযুক্ত হয়েছে। রাস্তা পাকা হওয়ায় বকশীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে বিভিন্ন পরিবহনযোগে দশানী নদীর পূর্বপার পর্যন্ত যাতায়াত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একই কারণে ইসলামপুর উপজেলা শহর থেকে দশানী নদীর পশ্চিমপাড় পর্যন্ত যাতায়াত সহজ হয়েছে। কিন্তু দশানী নদীতে সেতু না থাকায় দুই পারের লোকজনকেই নদী পারাপারের জন্য খেয়া নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয়। বকশীগঞ্জ উপজেলায় স্থল বন্দর ও পর্যটন কেন্দ্রসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
অপরদিকে ইসলামপুর উপজেলায় ট্রেন সুবিধাসহ নানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই নানা জরুরি প্রয়োজনে প্রতিদিন দুই উপজেলায় হাজার হাজার মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী প্রতিদিন বকশীগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলায় যাতায়াত করে থাকে। কোন উপায় না পেয়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ লোকজন প্রতিদিন জীবনের ঝুকিঁ নিয়ে খেয়া নৌকায় পারাপার হওয়ার পাশাপাশি নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
অন্য দিকে বকশীগঞ্জ উপজেলা জামালপুর জেলার অর্ন্তভুক্ত হলেও বকশীগঞ্জ উপজেলার লোকজন জামালপুর জেলা শহরের সাথে সার্বিক যোগাযোগের বিষয়ে প্রতিবেশী শেরপুর জেলার ভূ-খন্ড হয়ে যাতায়াত করে থাকে। নিজ জেলার সড়ক দিয়ে জামালপুর জেলা শহরে যাতায়াত করতে না পেরে বকশীগঞ্জ উপজেলার লক্ষাধিক লোকজন জরুরি প্রয়োজনে ১০ কিলোমিটার অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে জামালপুর জেলা শহরে যাতায়াত করতে হয়।
বকশীগঞ্জ উপজেলার লোকজনকে জরুরি প্রয়োজনে শেরপুর জেলার ভূ-খন্ড হয়ে নিজ জেলা জামালপুর শহরে যাতায়াতে বিভিন্ন সময়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। বিশেষ করে পরিবহন সেক্টরে শেরপুর জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয়।
অতিরিক্ত টাকা ও সময় অপচয় করার পরেও প্রতিদিন হয়রানির শিকার হন জামালপুর জেলার পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও সাধারণ জনগণ। কিন্তু দশানী নদীর ওপর নতুন টুপকারচর গয়নাঘাট স্থানে একটি সেতু নির্মাণ হলে জামালপুর জেলা শহরে যাতায়াতের জন্য ২০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে আসবে। নিজ জেলার সড়ক ব্যবহার করে সহজেই বকশীগঞ্জ উপজেলার লোকজন নিজ জেলা শহরে যাতায়াত করতে পারবে।
অর্থ, সময় ও হয়রানির পরিমাণও কমবে। দুই উপজেলার সড়ক যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জরুরি সেবাসহ নানা সেবামূলক কাজের পরিধি অনেকগুণে বেড়ে যাবে। বিভিন্ন ব্যবসার উন্নয়ন ঘটবে। পাল্টে যাবে অর্থনেতিক চিত্র। বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক জনান, দশানী নদীতে সেতু নির্মালের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটি অনুমোদনও হয়েছে।
চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় দশানী নদীতে সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ ব্যাপারে এলজিইডির বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামছুল হক জনকণ্ঠকে জানান, দশানী নদীর ওপর গয়নাঘাট স্থানে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা যাবে।
এমএস