বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। ছবি: জনকণ্ঠ।
জমি থেকে সময়মতো পানি নেমে গিয়ে চাষের উপযোগী হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। বপণ মৌসুম শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ আগেই বিগত মৌসুমের চেয়ে চারগুণ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন চাষীরা।
গত বছর উপজেলায় এক হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হলেও এবার তা প্রায় আট হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছর ৫ হাজার ৫০০ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় সরিষা চাষের এই উদ্যোগকে ‘অকল্পনীয় বিপ্লব’ বলে অভিহিত করছেন চাষি ও কৃষি বিভাগ। দিগন্তবিস্তারী হলুদ বর্ণের সরিষাফুলে ভরে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ প্রান্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মহিমাগঞ্জ, কোচাশহর ও শিবপুর ইউনিয়নের বিশাল অংশ জুড়ে অবস্থিত নল্লিরবিলসহ উপজেলার প্রায় সর্বত্রই এবার ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে সরিষার চাষ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণের পাশাপশি চাষিদের চোখে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন আর নিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতছানি দেয়া এই ফসলের আবাদে ঝুঁকে পড়ছেন চাষিরা। অনেক ক্ষেতে সরিষার ফুল ও ফল দেখা দিলেও চাষিরা এখনও প্রতিদিনই নতুন নতুন জমিতে বপণ করছে সরিষার বীজ।
চাষিরা জানিয়েছেন, সংসারের প্রয়োজনীয় ভোজ্যতেলের জোগানের পাশাপাশি লাভজনক বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন তারা।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরই উপজেলায় সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় পাঁচ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির। গত বছর এখানকার নল্লিরবিলসহ বিভিন্ন এলাকায় এক হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিল। কিন্তু এ বছর বর্ষা মৌসুমে উপজেলার কোথাও বন্যা না আসায় মাটির রস কম ছিল। এ কারণে এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই সরিষা চাষের উপযুক্ত হয়ে যায় এখানকার জমি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তাই বিপুল উদ্যোমে সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকরা। সরিষার বীজ বপণের এখনও দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও ইতোমধ্যেই সাত হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ সম্পন্ন করেছেন চাষিরা। আগামী দুই সপ্তাহে এ চাষের পরিমান আট হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মহিমাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জিয়াউল হক জানান, প্রতি বছরই এই এলাকায় সরিষার চাষ করা হলেও এবার তা ব্যাপক আকারে শুরু হয়েছে। তেমন কোনো রাসায়নিক সার না দিয়েই সরিষা চাষ করা যায়। বরং সরিষার শুকনো পাতা আর ফুল জমিতে ঝড়ে পড়ে বাড়তি জৈব সারের জোগান দেয় বোরোধান চাষের জন্য। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবছর অনেক নিচু জমিতেও সরিষার চাষ করা হচ্ছে।
পুনতাইড় গ্রামের সরিষাচাষি আমজাদ হোসেন জানান, মৌসুমের প্রথম দিকে বপণ করা অধিকাংশ জমির সরিষা গাছে আশাতীত ফুল ও ফল এসেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার বাম্পার উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ জানান, সরিষা চাষে চাষীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের কারণে এই উপজেলায় এবার একটি অকল্পনীয় বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত সরিষা বাড়তি আয়ের পাশাপাশি দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।