সন্তানসহ হাবিবা খাতুন
হাবিবা খাতুন, রাজারহাট পান্থা পাড়ায় তার বাড়ি। অভাবের সংসার তাদের। কিন্তু ছোট বেলা থেকে পড়াশুনায় খুব ভালো। পড়াশুনায় ভালো হলেও সংসারে অভাবের কারণে বাবা-মা তিন বছর আগে একপ্রকার জোড় করে কুড়িগ্রাম শহরের হরিকেশ মুনসী পাড়ায় যুবক লিয়াকত আলী লিটনের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ে হলেও পড়াশুনা বাদ দিতে চায়নি হাবিবা। পরে জোড় করে পড়াশুনা করতে চাইলে এখানেই বাঁধ সাধে স্বামী ও তার পরিবার।
জানা যায়, শুরুর দিকে সংসার ভালো চললেও কিছুদিন পর তার স্বামী তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এ নিয়ে স্বামী লিটন ও শশুড় বাড়ীর লোকজন প্রায় শারিরীক ও মানুষিক অত্যাচার করতো। এরই মাঝে হাবিবা একটি কন্যা সন্তানের মা হয়। স্বামী ও শশুড়বাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সন্তান নিয়ে পালিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন তিনি। বাড়ীতে এসে আবার পড়াশুনার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে। দিয়েছেনও এবার এইচএসসি পরীক্ষা। পাঁচটি পরীক্ষা দেবার পর হঠাৎ করে তার স্বামী এসে তার নানীর অসুস্থতার কথা বলে তাকে তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। সে যেন পরীক্ষা দিতে না পারে সেখানে একটি ঘরে তিন দিন আটকে রাখে। ঠিকমত খাবার পর্যন্ত দেওয়া হতোনা তাকে।
আরও জানা যায়, খবর শুনে তার মা রোকসানা বেগম মেয়েকে উদ্ধার করে আনতে যায়। এ কারণে তার জামাই এবং তার পরিবারের লোকজন তাকে লাঞ্চিত করে। তবুও পরীক্ষা দেয়ার জন্য অনুরোধ করে জামাইয়ের কাছে। কোনো উপায় না পেয়ে রোকসানা বেগম বাধ্য হয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় অভিযোগ করে।তাৎক্ষণিকভাবে সদর থানার পুলিশ জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে দ্রত তাকে উদ্ধার করে উলিপুর পাঁচপীর ডিগ্রী কলেজে নিয়ে যায় এবং প্রহারায় পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করে। পরীক্ষা শেষে হাবিবা খাতুনকে তার বাড়ীতে পৌঁছে দেয়। এ সময় পুলিশ হাবিবার স্বামী লিয়াকত আলী লিটন, তার ননদ তসলিমা আকতার ও দুলাভাই সাজ্জাদ হোসেনকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
মেধাবী হাবিবা খাতুন বলেন, ছোটবেলা থেকে পড়াশুনা করতে আমার ভালো লাগে। নিয়মিত পড়াশুনা করি। অভাবের কারণে বাবা-মা আমাকে অল্প বয়সে বিয়ে দেয়। স্বামীর বাড়িতে এসে প্রাইভেটে পরীক্ষা দেই। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। এতে বাঁধা দেয় স্বামী লিটন ও শশুর বাড়ির লোকজন। বিয়ের পর থেকে তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। গরীব ঘরের মানুষ বলেই বাবা-মা এ টাকা দিতে পারেনি। এতে দিনের পর দিন উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন।
তার মা রোকসানা বেগম জানান, ছোটবেলা থেকে তার মেয়ে খুব মেধাবী। শুধু পড়াশুনা করতে চায়। এটাই অপরাধ। তার জামাই লিটন পড়াশুনা করতে দিবেনা এবং তিন লাখ টাকা যৌতুক দিতে হবে। এ কারণে প্রায় অত্যাচার করতো হাবিবাকে। এমনকি পরীক্ষার সময় তিনদিন আটকিয়ে রেখে ছিল যাতে পরীক্ষা দিতে না পারে। পুলিশের পাহারায় পরীক্ষা দিয়েছিল। তিনি অপরাধীদের শাস্তি দাবি করেন।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহারিয়ার জানান, মেধাবী হাবিবা খাতুনকে উদ্ধার করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। তার স্বামী লিটন ও তার পরিবার যৌতুকের কারণে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন করায় কুড়িগ্রাম থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
এমএইচ