কাঠের সাঁকো
কত এমপি আইলো গেলো আমাগো কপালে ব্রিজ হইলো না। সবাই ভোটের আগে কথা দিয়া যায়, কেউ আর কথা রাখলো না। এই ব্রিজটার জন্য কত যে কষ্ট করতে হয় আমাগো। দুইবার পইরা যাইয়া দুক্ষু (ব্যথা) পাইছি। মরার আগে যদি ব্রিজটা দেইখা যাইতে পারতাম। তাহলে মনে শান্তি পাইতাম। আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার খাটরা গ্রামের বৃদ্ধা রোজিনা বেগম (৭০)।
টাঙ্গাইলের বাসাইলে লাঙ্গুলিয়া নদীর উপর নির্মিত কাঠের সাঁকো এলাকাবাসীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। কিন্তু উপজেলার খাটরা গ্রামে কাঠের সাঁকোটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এর ফলে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছে। স্থানীয়দের দাবি, বহু প্রতিক্ষিত হলেও স্বাধীনতার ৫১ বছরেও এ নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের ফুলকি ও খাটরা, বল্লা, কাজিপুরসহ ৩০-৩৫টি গ্রামের মানুষের উপজেলা সদরে পৌঁছানোর একমাত্র রাস্তা এই কাঁঠের সাঁকো। এছাড়াও কাউলজানী বোর্ড বাজার এলাকায় সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়, কয়েকটি ব্যাংকের শাখা, লুৎফা-শান্তা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কাউলজানী নওশেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হাজারও শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এই কাঁঠের সাকোঁ দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতে হচ্ছে।
অপরদিকে কালিহাতী উপজেলার রামপুর, গান্ধিনা, তেজপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। প্রায় ১০-১২ বছর আগে নদীটির ওপর গ্রামবাসীরা কাঁঠের সাঁকোটি নির্মাণ করে। বিগত দিনে জনপ্রতিনিধিরা ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও এ পর্যন্ত এলাকাবাসীর ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।
সাঁকো দিয়ে কোন রকমে পায়ে হেটে পারাপার সম্ভব হলেও যানবাহন চলাচল করা একেবারেই কঠিন হয়ে পড়েছে। জেলা সদরে কোন রোগী নিয়ে গেলে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে হাসপাতালে নিতে হয়। এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষের। ফলে এ এলাকার মানুষের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে করে পণ্যে খরচ পড়ছে বেশি ও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।
স্থানীয় আব্দুল হাই সিকদার বলেন, কাঠের সাঁকো হওয়ার আগে আমাদের নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। এই সাঁকোটি প্রয়াত সংসদ সদস্য শওকত মোমেন শাহজাহান করে দিয়েছিলেন। তারপর আর কেউ খোঁজ নিতে আসে নাই। এখন এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই সরকারে কাছে আমাদের দাবি আমরা এখানে একটি ব্রিজ চাই।
গৃহিনী শেফালি বেগম বলেন, ব্রিজটা না হওয়ায় আমাদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের ছেলে মেয়েরা যাতায়াত করতে পারে না। ব্রিজ হলে আমাদের চলাচলে সুবিধা হতো। সরকারের কাছে দাবি আমরা একটি ব্রিজ চাই। খাটরা গ্রামের রমেশ চন্দ্র সরকার বলেন, অনেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। আমরা অনেক দিন ধরে একটি ব্রিজের স্বপ্ন দেখছি কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে গেল। কৃষক শাওন মিয়া বলেন, দেশের কত জায়গায় কত উন্নয়ন হয়। কিন্তু আমাদের এলাকায় এই ব্রিজটি নির্মাণ আর হলো না। সরকারের কাছে আমাদের একটা দাবি আমরা এখানে একটি ব্রিজ চাই।
এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ব্রিজটি না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি গ্রামের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। আশা করছি দ্রুতই এই ব্রিজটি হয়ে যাবে। এই ব্রিজটি করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আব্দুল জলিল জানান, খাটরা গ্রামের লোকজন ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল করে। ওই স্থানে স্থায়ীভাবে একটি ব্রিজ হওয়া দরকার। বড় একটি ব্রিজের প্রস্তাব করেছি। অতিগুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজটি করছি। দ্রুতই দরপত্র আহবান করা হবে। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে এই ব্রিজের উপর দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারবে।
টিএস