ম্যাপে রাজশাহী
রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের তারিখ ঘোষনার পর এ অঞ্চলের জেলা ও উপজেলায় নাশকতার অভিযোগে অন্তত ৬৪ টি মামলা দায়ের হয়েছে। এসব মামলায় কেউ কেউ আগাম জামিন নিলেও অনেকে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এ অবস্থায় আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশে জমায়েত নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দাবি মামলা, গ্রেফতার কিংবা পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে বিএনপির সমাবেশ ব্যর্থ করা যাবে না।
বিএনপি নেতাদের দেওয়া তথ্য ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু রাজশাহীতেই বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ককটেল উদ্ধার ও বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে ১০ টি মামলা। এর বাইরে নওগাঁ, চাপাইববাবগঞ্জ, নাটোরসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় আরও ৫০টি মামলা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে। এসব মামলায় অন্তত আড়াই হাজার আসামি করা হয়েছে। মামলায় গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এসব নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সবমিলিয়ে রাজশাহীসহ বিভাগের আট জেলায় নতুন করে ৬৪টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠে আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আগুন সন্ত্রাসসহ কোনো ধরনের নাশকতা যেন করতে পারে নেতাকর্মীরা এ কারণে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগও। রাজশাহী মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা করা হচ্ছে প্রতিদিনই। সমাবেশের দিনও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নগরীর জিরোপয়েন্ট ও আলুপাট্টিতে অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিবেন দলের নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশদ্বারগুলোতে পুলিশি তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। সতর্ক রাখা হয়েছে পুলিশ। যেন কোনো ধরনের নাশকতা কেউ তৈরী করতে না পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই নগরী থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশে-পাশের জেলাগুলোতে বিএনপির প্রস্তুতি সভা চলছে। দলের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রস্তুতি সভাগুলোতেও নেতাকর্মীর উপস্থিত হচ্ছেন।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান আয়নাল বলেন, ‘গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি সভায় দুর্গাপুরে ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েকটি সমাবেশে নেতাকর্মী উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। এর পর গত তিন-চার দিনে প্রশাসন থেকে আমাদের কোনো সভা করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ ১৫০-১৬০ জন নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়ে এখনো বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে। সমাবেশ বা মিটিং-মিছিলে না যেতে হুমকি দিয়ে আসছে। দুর্গাপুরে গণসমাবেশ করায় সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফাকে গ্রেফতার করা হয়েছে পুরনো মামলায়। এ কারণে অনেক নেতাকর্মী ভয়ে রাতে বাড়িতেই থাকছেন না। তবে সমাবেশের তিন আগেই আমরা রাজশাহী শহরে গিয়ে অবস্থান নিব বলে জানান তিনি।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুও বলেন, ‘গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজশাহীসহ সাংগঠনিক ৯ জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারসহ হয়রানি করা হচ্ছে। তবে রাজশাহীর সমাবেশ হবে স্মরণকালের সর্বোচ্চ বড় সমাবেশ। সে লক্ষ্যে আমরা নানা প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহীর ৮ জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ বানচাল করতে নানা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এসব ষড়যন্ত্র করে বিএনপির গণজোয়ার থামানো যাবে না।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, গণসমাবেশের তিন আগেই বিএনপির নেতাকর্মীরা খাবার ও বিছানপত্রসহ পদ্মা পাড়ের মাদ্রাসা মাঠে উপস্থিত হতে শুরু করবেন। অনেকেই অবস্থান নিবেন পদ্মার ওপারে চরের বাড়িগুলোতে। তারা সমাবেশের দিন সকালে বা আগের দিন রাতে নৌকায় নদী পার হয়ে মাদ্রাসা মাঠে এসে জড়ো হবেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন বলেন, ‘২০১৪-১৫ সালে রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াত সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাসের যে জন্ম দিয়েছিল, সেটি আর করতে দেওয়া হবে না। গণসমাবেশের নামে তারা আবারও বিভিন্ন স্থানে ককটেল হামলা চালাচ্ছে। তাদের এসব অপতৎপরতা রুখে দিতে আমরাও প্রতিদিন মিটিং-মিছিল করছি। গণসমাবেশের দিনও আমরা দলীয় কার্যালের সমানেসহ নগরীর জিরোপয়েন্টে অবস্থান নিব। সমাবেশের নামে বিএনপিকে কোনোভাবেই নাশকতা করতে দেওয়া হবে না।
টিএস