ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

কেশবপুরে জোর করে জমি দখল করায় দুই পরিবার আড়াই মাস অবরুদ্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর, যশোর

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ১৪ নভেম্বর ২০২২

কেশবপুরে জোর করে জমি দখল করায় দুই পরিবার আড়াই মাস অবরুদ্ধ

দখলকৃত জমি

কেশবপুরের মঙ্গলকোট গ্রামে বসতভিটাসহ প্রায় দুই একর জমি জোর করে দখল করে নেওয়ায় দুইটি সংখ্যালঘু পরিবার প্রায় আড়াইমাস অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে। আদালতে মামলা চলাকালীন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই দখল কাজে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জমি দখলের সময় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করায় পুলিশ ঘটনা স্থলে গেলেও কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভুগি পরিবার দুটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছে। 

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের নন্দ দুলাল চক্রবর্তী (৬৫) ও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী (৬০) জন্মের পর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে তাদের পৈত্রিক বাড়িতে বসবাস করে আসছে। একই গ্রামের সাজ্জাত আলী গং ৩ সেপ্টেম্বর কেশবপুর থেকে ভাড়া করা দূর্বৃত্তদের সাথে নিয়ে তাদের পৈত্রিক বসতভিটার অংশসহ প্রায় ২ একর জমি দখল করে নিয়েছে। ফলে পরিবার দুটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। উক্ত সম্পত্তি নিয়ে প্রায় ৮ বছর যশোর আদালতে মামলা চলমান রয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

 আদালতে মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের ননী গোপাল চক্রবর্তী তার পরিবার পরিজন নিয়ে ১৯৬৫ সালে ভারতে যেয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। সেখানে তার বড় ছেলে দীপ্তি শেখর চক্রবর্তী  ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরী করে এবং ছোট ছেলে শশাঙ্ক শেখর চক্রবর্তী ভারতের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে। ফলে তাদের সমুদয় সম্পত্তি তার ভাই চিত্তরঞ্জন চক্রবর্তী ভোগদখল করতে থাকে। চিত্তরঞ্জন চক্রবর্তী মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে নন্দ দুলাল চক্রবর্তী ও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ওই জমির খাজনাদি পরিশোধ ও ভোগ দখল করে আসছে। পরবর্তীতে ননীগোপাল চক্রবর্তীর সম্পত্তি সরকারের ভিপি খ তফসিল ভুক্ত হলেও নন্দ দুলাল ও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ভোগ দখল করে আসছে। 

পরবর্তীতে সরকার খ তফসিলের জমি অবমুক্তির সুযোগ দিলে মঙ্গলকোট গ্রামের সাজ্জাত আলী অতি গোপনে ননীগোপাল চক্রবর্তীর ২ একর ৬১ শতক জমি অবমুক্ত করে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার সহযোগিতায় ০৭/০৮/২০১২ তারিখে ভারতীয় নাগরিক শশাঙ্ক শেখর চক্রবর্তী (ভারতীয় পাসপোর্ট নং- কে ৬২১৩৫২০) ও দীপ্তি শেখর চক্রবর্তীর নামে নামজারির কাজ সম্পন্ন করেন। যার নামজারি কেস নম্বর ১৯১/২০১২-১৩। এরপর ১৮/০২/২০১৩ তারিখে ভারতীয় নাগরিক শশাঙ্ক শেখর চক্রবর্তীর কাছ থেকে তার অংশের দাবি করে ১ একর ৩০ শতক জমি সাজ্জাদ আলী নিজের নামে আমমোক্তার দলিল (পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি) করে নেয়। এর দুই সপ্তাহ পর ০৪/০৩/২০১৩ তারিখে তিনি ওই জমি তার স্ত্রী তানিয়া বেগমের নামে হেবানামা করে অতিগোপনে নামজারির কাজ সম্পন্ন করেন। এ খবর জানাজানির এরপর নন্দ দুলাল চক্রবর্তী ০৪/০৪/২০১৩ তারিখে উপজেলা ভূমি অফিসে ১৫০ ধারায় মামলা করেন। যার নম্বর ৫৭। পরবর্তীতে শুনানির পর তৎকালীন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম সরকারি স্বার্থ বিদ্যমান থাকায় ১৯১ নং নামজারি কেসটি বাতিল করে মূল খতিয়ানে (খ তফসিল) ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়াও নন্দ দুলাল চক্রবর্তী যশোর আদালতে আরো একটি মামলা করেন। যার নং- ৪/১৪। আদালতে উক্ত কেস চলাকালে এবং ১৯১ নং নামজারি কেস বাতিল হওয়ার পরও সাজ্জাত আলীর স্ত্রী তানিয়া বেগমের নামের ওই সম্পত্তি তার ভাই আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ ও প্রতিবেশী ফজর আলী সহবিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করতে থাকেন। 

এছাড়াও ননী গোপাল চক্রবর্তীর স্ত্রী বীণাপাণি চক্রবর্তী ভারতে মারা যাওয়ার পর মঙ্গলকোট মৌজার আরো সাড়ে ৫০ শতক জমি তার ছেলে ভারতীয় নাগরিক শশাঙ্ক শেখর চক্রবর্তীর স্বত্ত্ব দখলিকার দাবি করে ৩০/১০/২০১৮ তারিখে সাজ্জাত আলী তার নিজের নামে নোটারি পাবলিকে এফিডেভিটের মাধ্যমে অফেরৎযোগ্য আমমোক্তারনামা করে নেয়। পরবর্তীতে তিনি মঙ্গলকোট ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা সাইফুল কবিরের সহযোগিতায় ওই জমি নামজারি করে নিছার আলীসহ একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়। ফলে গত ৩ সেপ্টেম্বর কেশবপুর থেকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিক্রি করা ওইসব জমি তাদের দখলে দেওয়ায় শতাধিক বছর ধরে বসবাস করা দুটি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

নন্দ দুলাল চক্রবর্তী বলেন, ওই জমি ছাড়াও আমাদের নামে আর এস রেকর্ডকৃত ৮১১ নং খতিয়ানের ৩৭ শতক নিষ্কন্টক জমি সাজ্জাত আলীর বডিগার্ড জিয়ার, ইব্রাহিম ও মহির জোর করে দখল করে খাচ্ছে। ৩ সেপ্টেম্বর কেশবপুর থেকে সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে জমি দখলের সময় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করার পর কেশবপুর থানার দারোগা আবুবকর ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু আমাদের কোন সহযোগিতা না করে তাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করে চলে যায়।

মঙ্গলকোট উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা সাইফুল কবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ১৯১ নং বাতিল হওয়ার পর সাজ্জাত আলী আদালতের একটি রায় নিয়ে এসে জমি নামজারি করেন। এর বিরুদ্ধেও নন্দ দুলাল ১৫০ ধারায় সম্প্রতি কেস করেন যা চলমান রয়েছে। কেস চলাকালে জমি বেচাকেনা বৈধ নয় বলে তিনি জানান। কেশবপুর থানার উপপরিদর্শক আবুবকর সিদ্দিক জানান, ৯৯৯ জরুরী সেবার মাধ্যমে তথ্য পেয়ে ঘটনাস্থলে যেয়ে দখল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কেউ মামলা না করায় আর খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি। 

এ ব্যাপারে মঙ্গলকোট গ্রামের সাজ্জাত আলী সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জমির সকল কাগজপত্র বৈধ। তাই জমি নিয়ে যা কিছু করা হচ্ছে সবই বৈধ। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। জমি জবর দখলের বিষয় ইউএনও দেখে না। অভিযোগ দিয়েছে কিনা সেটা অফিসের নথি দেখে জানতে হবে বলে তিনি জানান।

টিএস

×