ইয়াবা
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় মাদকের নেশায় দিন দিন জড়িয়ে পড়ছে যুবসমাজ। এমনকি স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা জড়িয়ে যাচ্ছে মাদকের নেশায়। হাত বাড়ালে পাওয়া যাচ্ছে পছন্দসই মাদক। পাড়া-মহল্লায় মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে।
প্রকাশ্যে চলছে মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়। মাদকের নেশায় ডুবে থাকছে বাকেরগঞ্জের উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর হাজারো মানুষ। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা, গাঁজা ও বাংলামদ। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে এখানে মাদক বিক্রেতার পাশাপাশি ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে। এখানকার মাদবসেবীদের কাছে ‘‘ইয়াবা’’ এখন হট কেকের মতো। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেদারসে চলছে ইয়াবা বেচাকেনা।
থানা পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মাদক পাচার ও বিক্রি বন্ধে তেমন কোন কার্যকারী উদ্যোগ নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়িত্ব নিয়ে নানান রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে। মাদকের সহজলভ্যতা, অপেক্ষাকৃত কম দাম এবং থানা পুলিশী ঝুঁকি কম থাকায় বিক্রেতা ও সেবনকারীরা ইয়াবা গাঁজার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব্য। তবে ইয়াবা এবং গাঁজার চাহিদা বাকেরগঞ্জে বেশি বলে এক অনুসন্ধানে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদকের ব্যবসা করছে। এসব মাদক বিক্রির তালিকায় প্রভাবশালী পরিবারের সন্তানেরা জড়িত আছে বলে জানান তারা। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা চলে আসার কারণেই গোটা উপজেলা জুড়ে এখন মাদকে সয়লাব হয়ে আছে।
প্রতিনিয়ত বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা এবং এসব মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে গ্রাম অঞ্চলের স্কুল, কলেজের তরুণ ছাত্ররাও। সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলো মাদক প্রতিরোধ ও মাদক ব্যবহারের কুফল নিয়ে প্রচার প্রচারণা নেই চোখে পড়ার মত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন খুচরা মাদক ব্যাবসায়ির সাথে কথা বলে জানা যায়, বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে।
তাছাড়া মাদকের ব্যবসায় লগ্নি আছে বেশ কয়েকজনের। মূলত প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির টাকায় কেনা হয় মাদক। আর ডেলিভারী ম্যানের সাহায্যে মাদক বিক্রি হয় বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিন গড়ে কয়েক লাখ টাকার মাদক বিক্রি হয় উপজেলা শহর এলাকায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাকেরগঞ্জ মাদকদ্রব্য বেশিরভাগ আসে ঢাকা থেকে নৌপথে ও পরিবহনে। এছাড়াও বরিশাল শহরের কয়েকজন মাদকের গডফাদার তাদের ডিলার নিয়োজিত রেখে তাদের মাধ্যমে বাকেরগঞ্জের ১৪ টি ইউনিয়নে মাদক পৌঁছে দেয়। গত দুই বছরে চিহ্নিত কয়েকজন মাদক ব্যাবসায়ি বরিশাল জেলা শহর ও পাশের জেলা পটুয়াখালী ও দুমকি উপজেলা থেকে ইয়াবা ক্রয় করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাতে গ্রেফতার হয়েছে। ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে কয়েকজন মাদক সম্রাট চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা এনে সিন্ডিকেট করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরবরাহ করে আসছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারাই ইয়াবার দিকেই ঝুঁকে রয়েছে। আর ‘ইয়াবা’র চেয়ে গাঁজা’র দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় গাঁজার দিকে নজর ও আকৃষ্ট মাদক সেবিদের। বাকেরগঞ্জ একাধিক স্থানে মাদক দ্রব্য বিক্রি হয় প্রকাশ্যে। বাকেরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড বিআইপি কলোনি, মল্লিক মার্কেট এলাকা, পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ড, পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ড, পৌর এলাকার ৫ নং ওয়ার্ড, পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ড, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কালিগঞ্জ, বোয়ালিয়া,শ্যামপুর বাজার এলাকায় অহরহ মাদক বিক্রয় চলছে। পাদ্রীশিবপুর ইউনিয়নের খ্রিস্টান পাড়া বাকেরগঞ্জ টু বরগুনা সড়কের পাশে একাধিক মুদি দোকানে ও সড়কের দুই পাশের বসত বাড়িতে বাংলামদের কারখানায় মদ তৈরি করে যুগের পর যুগ প্রকাশ্যে বিক্রি করে আসছে।
পাদ্রীশিবপুর নিউমার্কেট, বিসমিল্লা বাজার, রঘুনাথপুর একাধিক স্থানে মাদক বিক্রয় চলছে। ভরপাশা ইউনিয়নের হাতাকাঠি, দাদুর হাট সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয় মাদক। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে মাদক বিক্রি হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেকেই পুলিশী ঝাঁমেলা এড়াতে ভ্রাম্যমাণ থেকে মাদক বিক্রি করে আসছে।
সুত্র মতে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত বাকেরগঞ্জে মাদক বিরোধী অভিযানে ১৩২ টি মাদক মামলা হয়। বিভিন্ন সময় র্যাব-ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় মাদক ব্যাবসায়িরা।
গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে গেলেও কিছুদিন পর জামিনে বের হয়ে তারা একই পথে হাটছে। ঘুরে ফিরে মাদক ব্যাবসায়িদের তালিকায় তারাই রয়েছেন। ১৩২ টি মাদক মামলার মধ্যে থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতারের সংখ্যা তেমন দেখা যায়নি। এর মধ্যে ১৬ টি মাদক মামলা হয়েছে পৌর এলাকায়। বাকি মামলাগুলো হয়েছে ১৪ টি ইউনিয়ন থেকে। চিহ্নিত কয়েকজন মাদক ব্যাবসায়ি ইয়াবা সহ ৩ /৪ বার গ্রেফতার হওয়ার পরেও এখনো মাদক ব্যাবসা করেই যাচ্ছে। প্রতিটি থানা ও গোয়েন্দা ইউনিটে রয়েছে পুলিশের সোর্স।
তথ্য সংগ্রহ ও অপরাধী ধরতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে কাজে লাগায় পুলিশ। সোর্সদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ। সোর্সদের মধ্যে অনেকেই আবার মাদক ব্যবসায়িদের সাথে সম্পর্ক গড়ে সুবিধা নিচ্ছে।সোর্সদের কারনে অনেক সময় প্রশাসনও পাচ্ছে না সঠিক তথ্য।
এমনকি মাদক বিরোধী অভিযানের তথ্য সোর্সদের মাধ্যমে আগাম পেয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ীরা। শীর্ষ ইয়াবা ও মাদক ব্যাবসায়িরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে নিজেদের রূপ পাল্টে নিয়েছেন প্রশাসনের নজর থেকে এরিয়ে যেতে।
পুলিশ এ পর্যন্ত চিহ্নিত কোন শীর্ষ ইয়াবা ও মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। দুয়েকজন কদাচিৎ ধরা পড়লেও দ্রুত জামিনে এসে আবারও দ্বিগুণ উৎসাহে মাদক কারবার শুরু করে। বাকেরগঞ্জ মাদকের ভয়াবহতা দিনকে দিন বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন রয়েছেন অভিভাবকেরা। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরে আইনের আওতায় আনার দাবী সচেতন বাকেরগঞ্জ বাসীর।
এমএস