ধান ক্ষেত
ঔষধিগুণ সম্পন্ন ব্লাক রাইস ছিল তৎকালীন চীনের রাজা-বাদশাদের খাবার। যা প্রজাদের চাষ করা বা খাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। তাই এই ধান বা চাল ছিল দুস্প্রাপ্য।
সম্প্রতি সৈয়দপুর উপজেলার নিয়ামতপুর দেওয়ানিপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম বাবু (৩৬) নামে এক কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে এ ধান চাষ করেও সফলতা পেয়েছেন।
মাত্র ২২ শতক জমিতে এ ধান চাষ করে কৃষিতে আশার আলো দেখছেন। কারণ এ চালের বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৮ শত টাকা। কৌতুহুল মেটাতে ওই এলাকার কৃষক থেকে বিভিন্ন পেশাজীবিরা তার ধান গাছ দেখতে ক্ষেতে ভিড় করছেন। এ ধানগাছ প্রথম সবুজ ছিল। এখন ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই কালো হতে শুরু করেছে।
এই ধান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল। এমন একটি ধান এ জনপদের মাটিতে চাষ করতে পেরে আনন্দের কমতি নেই কৃষক শফিকুল ইসলাম বাবুর। শফিকুল ইসলাম জানান, ‘প্রথমে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন দেখে এ ধান সম্পর্কে জানতে পারি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর চট্রগ্রাম থেকে বীজ এনে বপন করি। সেখানে ৫০০ গ্রাম ধান এক হাজার টাকা নেয়। তবে এ ধানের ফলন ভালো। অল্পতেই অধিক ফলন পাওয়ায় লাভের আশা করছেন এ ধান চাষে। কারণ বর্তমান বাজারে এ ধানের চালের মূল্য প্রায় ৮ শত টাকা কেজি।
সূত্রমতে, এ ধান বা কালো চাল অনেক এলাকায় বেগুনি চাল নামে পরিচিত। এটি ধানের এক ধরনের বিশেষ প্রজাতি। এ ধান বিভিন্ন প্রকারের। এর মধ্যে কয়েকটি বেশ আঠালো বা চটচটে চাল উৎপাদন করে। বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে ইন্দোনেশীয় কালো চাল, ফিলিপাইন বালাতিনা চাল ও থাই জুঁই (জেসমিন) কালো চাল রয়েছে।
মণিপুরে এই কালো চাল চক-হাও নামে পরিচিত। ওই অঞ্চলে কালো চাল থেকে বিভিন্ন পদের মিষ্টান্ন তৈরি করা যায়। যা উৎসব ও অন্যন্য অনুষ্ঠানে ভোজনে পরিবেশন করা হয়। এ দেশে এটি কলো ধানের চাল নামে পরিচিত এবং পোলাও বা পায়েস ভিত্তিক মিষ্টান্ন তৈরি করতে ব্যবহার হয়। এর খোসা অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ। শস্য দানায় আঁশের পরিমাণ বাদামি চালের সমপরিমাণ এবং এর স্বাদও বাদামি চালের মত।
কালো চাল সিদ্ধের পর গাঢ় বেগুনি হয়ে যায়। এর বেগুনি বর্ণের জন্য মূলত দায়ী অ্যান্থোসায়ানিন উপাদান। যা অন্যান্য রঙের চালের তুলনায় ওজনে বেশি। এটি জাউ, মিষ্টান্ন, চিরাচরিত চীনা কালো চালের পিঠা, রুটি এবং নুডলস তৈরি করা যায়। এর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। ফাইবার বেশি থাকায় এ চালের ভাত শরীরে ধীরে গ্লুকোজ তৈরি করে। এতে শর্করা নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব কার্যকর।
এছাড়া আমিষ, ভিটামিন, জিংক, খনিজ পদার্থসহ অন্য উপাদানগুলো সাধারণ চালের চেয়ে তিনগুণ বেশি রয়েছে। এছাড়া ত্বক পরিষ্কার করে ও শরীর হতে দূষিত পদার্থ বের করে শরীরকে ফুরফুরে রাখে। এ ধানের চালের ফাইবার হার্টকে সুস্থ্য রাখে ও স্নায়ুরোগ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।
সৈয়দপুর কৃষি অফিসের উদ্ভিদ কর্মকর্তা সুনিল কুমার দাস বলেন, এটি পুষ্টি ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ ধান। এ ধান চাষাবাদে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি। তবে বীজের দাম বেশি ও চারা না পাওয়া সত্ত্বেও প্রতি স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ কম। সাত প্রজাতীর এ ধান হয়ে থাকে। এখানে শুরু হলেও কুমিল্লা, নওগাঁ, চট্টগ্রাম ও ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন জেলায় এ কালো চালের ধান চাষ হচ্ছে। প্রতি বছর আবাদের পরিমাণ বাড়ছে। এর চাষ ছড়িয়ে পরলে কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে কালো ধান।
এসআর