ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘বৃক্ষ মানব’ থেকে ‘কালো মানবে’ পরিণত কিশোর

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ২৬ অক্টোবর ২০২২

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘বৃক্ষ মানব’ থেকে ‘কালো মানবে’ পরিণত কিশোর

‘কালো মানবে’ পরিণত হয়েছে রিপন দাস। ছবি: জনকণ্ঠ।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক মহেন্দ্র রাম দাসের ১৩ বছরের কিশোর ছেলে রিপন দাস ‘বৃক্ষ মানব’ থেকে এখন ‘কালো মানবে’ পরিণত হয়েছেন। 

জানা যায়, জন্মের তিন মাস পর থেকে হাত-পায়ে শেকড় গজানোর মতো বিরল এক জেনেটিক রোগে ভুগছিল রিপন দাস। যেটি পরবর্তীতে ট্রি-ম্যান বা ‘বৃক্ষ মানব’ সিনড্রোম বলে শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা।

রিপনের বাবা মহেন্দ্র রাম দাস বলেন, হাত-পায়ে শেকড় গজানোর মতো বিরল এক জেনেটিক রোগে ভুগছিল রিপন। পরে ২০১৬ সালে রিপনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা হয়। সেখানে রিপনের প্লাস্টিক সার্জারিসহ তিনটি অপারেশন করা হয়। পরে ১৮ সালের দিকে সুস্থ হলে রিপনকে বাড়িতে নিয়ে এসে আবার স্কুলে ভর্তি করা হয়। সে স্কুলে ভালো পড়াশোনা ও খেলাধুলা করত সহপাঠীদের সঙ্গে। কিন্তু গত দুই মাস আগে হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয় রিপন। তারপর থেকেই রিপনের শরীর ত্বক কালো হতে থাকে। কিন্তু টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করানো হয়নি।

রিপনের চিকিৎসার জন্য তার বাবা সমাজের সকলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। চিকিৎসা করালে হয়তো সে আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবে এবং স্কুলে যেতে পারবে বলে তার আশা।

রিপন দাস বলেন, আগে আমার হাত-পা গুলোতে শেকড় গজানোর মতো হয়ে গেছিল কিন্তু চিকিৎসা করার ফলে আমি সুস্থ হয়ে ওঠি। কিন্তু হঠাৎ করে আবার কিছুদিন থেকে আমার শরীরের ত্বক কালো হয়ে যায় ও হাত-পা আগের মত হয়ে যাচ্ছে। আমি সুস্থ হয়ে আবার আগের মতো স্কুলে যেতে চাই।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ফয়সাল আজম বলেন, রিপন বর্তমানে যে সমস্যায় ভুগছে সেটি হচ্ছে স্থানীয় কবিরাজের কাছে তেল নিয়ে ব্যবহার করার কারণে তার ড্রাগ রিঅ্যাকশন হয়েছে। সেই ড্রাগ রিঅ্যাকশনের সমস্যার জন্য তারা আমার কাছে আসেন। বর্তমানে তার ড্রাগ রিঅ্যাকশন চিকিৎসা চলছে। নিয়মিত চিকিৎসা চালালে সে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে চিকিৎসা করে বা প্লাস্টিক সার্জারি করলে সে হয়তো ভালো থাকবে। কিন্তু ১০০ ভাগ সুস্থ হয়ে উঠবে কি না তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সনাতন চন্দ্র রায় বলেন, মহেন্দ্র রাম দাসের নিজস্ব কোনো জমিজমা ও বসতভিটা নেই। অন্যের জায়গায় বসত করে ভ্যান চালিয়ে কোনো মতে সংসার চালান তিনি। তাই প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের গৃহের জন্য আবেদন করা হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই সে ঘর পাবে। কিন্তু তার ছেলের রিপন এক বিরল রোগে আক্রান্ত। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। তাই চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।

এমএইচ

সম্পর্কিত বিষয়:

×