গ্রামবাসীর কুমির পাহারা
ফরিদপুরে সদর উপজেলার চরে গ্রামবাসীর মধ্যে কুমির আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। প্রায় আধা কিলোমিটার একটি জলাধারে একটি কুমির আছে বলে লাল নিশান চিহ্ন দিয়েছে বনবিভাগ। জলাধারের পাশে পাহারায় বসানো হয়েছে গ্রাম পুলিশ। এছাড়া, আতংকিত গ্রামবাসী কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে জলাধারটি পাহারা দিচ্ছে।
শনিবার (২২ অক্টোবর) উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের মনসুরাবাদ গ্রামে এক গৃহবধূকে কামড়ে আহত করে একটি কুমির। এরপর থেকেই ওই গ্রামবাসীর মধ্যে কুমির আতংক বিরাজ করে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিরটি গৃহবধূ পারুলী বেগমকে(৫৫) কামড়িয়ে আহত করার পর বাড়ির পাশে একটি বড় জলাশয়ে আশ্রয় নেয়। আহত পারুলী বেগম বর্তমানে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার ডান হাতে ও পায়ে কুমিড়ের কামড়ের ক্ষত রয়েছে।
পারুলী বেগমের স্বামী রাজ্জাক শেখ জানিয়েছেন, ফজরের আজান যখন দিয়েছে ওই সময় তার স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়েছিলেন টয়লেটে যাবেন বলে। হঠাৎ স্ত্রীর চিৎকার শুনতে পেয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হন তিনি।
আমার স্ত্রী যেটা বলেছে, সে মুরগির দাপাদাপি আর ডাক শুনে প্রথমে হাঁস-মুরগির খোপের দিকে এগিয়ে যায়। শিয়াল ঠেকাতে সেখানে জাল দেয়া ছিল। সে প্রথমে মনে করেছে জালে হয়ত গরুর বাছুর বা কিছু আটকে গেছে। জাল তুলতেই পায়ে কামড় দিয়ে তাকে ফেলে দিয়েছে। তারপর পা কামড়ে ধরে টান দিয়েছে।
আমি চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি সে মাটিতে পড়ে আছে। টর্চলাইট মেরে দেখি পায়ের কাছে কুমির। আমি হাতে বাঁশ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরপরই ভিটা থেকে পঞ্চাশ হাত দুরে সেটা পানিতে নেমে গেল। কুমিরটাকে সবমিলিয়ে ছয় হাতের মতো হবে বলে মনে হয়েছে।
ওই গ্রামের কৃষক রোকন উদ্দিন বলেন, ওই জলাধারটির আশপাশ দিয়েও চলাচল করতে ভয় করছে। কয়েকটি ভাগে ভাগ করে গ্রামের সবাই মিলে পাহারার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। কুমিরটি না ধরা পর্যন্ত ভয় যাচ্ছে না।
আরেক বাসিন্দা রুমেল খান বলেন, ঘটনার পর থেকেই গ্রামের সবার মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। গত দুইদিনেও কুমিরটির খোঁজ মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে ওই জলাশয়ের পানিতেই কুমিরটি আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয় নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন(ইউপি) পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, গত ২০২১ সালে এই সময়ের দিকে ওই এলাকায় একটি কুমির দেখা যায়। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় কুমিরটি ধরার পরে বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কুমিরের কামড়ে গৃহবধূ আহত হওয়ার পর থেকে মনসুরাবাদ গ্রামের মানুষজন কুমির আতংকিত। নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় চৌকিদারদের পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানার পরই জলাধারটির চারপাশে লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জলাধারটিতে কচুরিপানা রয়েছে। কুমিরটি সেখানেও লুকিয়ে থাকতে পারে। এ জন্য গ্রামের বাসিন্দাদের জলাধারটিতে নামতে নিষেধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী বলেন, আহত ওই নারীর হাত-পায়ের কামড়ের ক্ষত দেখে কুমিরের কামড়ের মতোই মনে হয়েছে। এ ব্যাপারে আতংকিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সূত্র: বিবিসি ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যম
এসআর