ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী সুজন ওরফে মোঃ নিজামুল হক
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার আলীরটেক এলাকায় চাঞ্চল্যকর ১০ বছরের শিশু খাদিজা আক্তারকে গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী সুজন ওরফে মোঃ নিজামুল হক (৩৮)কে রাজধানী ঢাকার বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১। সুজন দীর্ঘ ১৯ বছর ছদ্মবেশ ধরে দেশে ও বিদেশী পালিয়ে ছিল।
রবিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে র্যাব-১১’র মিডিয়া অফিসার এএসপি মোঃ রিজওয়ান সাঈদ জিকু এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, ঘটনার পর পরেই সে দেশের বিভিন্ন জেলায় আত্বগোপন করে। দীর্ঘদিন পর সে নারায়ণগঞ্জে ফেরত এসে পরিচয় গোপন করে ২নং রেলগেট এলাকার একটি কাপড়ের দোকানে চাকুরী করা শুরু করে এবং এই পেশাকে গ্রেফতার এড়ানোর ঢাল হিসেবে বেছে নেয়। ইতোমধ্যে সে নিজের নাম এবং বয়স পরিবর্তন করে ২০১৪ সালে পাসপোর্ট ও ২০১৬ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করে। দীর্ঘদিন চাকুরী করে ২০১৭ সালে সে ইরাকে গমন করে এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশে ফেরত আসে। দেশে ফিরে সে জমি সংক্রান্ত ব্যবসায় জড়িত হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের মার্চ মাসে সে পুইরায় সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করলেও সুবিধা করতে না পেরে ৩ মাস পর দেশে ফেরত আসে। দেশে ফেরত এসে সে আত্বগোপনে অবস্থান করতে থাকে সুজন।
র্যাব জানায়, গত ১১ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সদর থানা হতে একটি অধিযাচনপত্রে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সাজাপ্রাপ্ত ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী সুজন ওরফে মোঃ নিজামুল হককে গ্রেফতারের জন্য র্যাব-১১ কে অনুরোধ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে বর্ণিত বিষয়ে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে র্যাব উক্ত আসামীকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। পরবর্তীতে র্যাব-১১ এর একটি গোয়েন্দা দল গোপন তথ্যের মাধ্যমে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামীর অবস্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে র্যাব সদর দফতরের সহযোগিতায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হয়। সে প্রতিনিয়ত অবস্থান পরিবর্তন করে এবং গ্রেফতার এড়াতে বিদেশ গমনের পরিকল্পনা করছিল। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ রবিবার রাতে রাজধানী ঢাকার বাড্ডা থানা এলাকা হতে মোঃ নিজামুল হক গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী তার অপরাধ সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানার আলীরটেক এলাকায় ১০ বছরের শিশু খাদিজা আক্তারকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। পরে শিশুটির লাশ সরিষা ক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। এই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে নিহতের ময়না তদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল মর্মে উল্লেখ করা হয়। পরে নারায়ণগঞ্জের বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত বিচার শেষে মামলার পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৮ সালের গত ১১ জুন চার আসামীকে গণধর্ষণের দায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করার আদেশ দেন। এই নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অন্য তিন আসামীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব-১১ এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
টিএস