মংলা বন্দর বন্ধ
ঝূর্নিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে বাগেরহাটসহ উপকূল জুড়ে সোমবার ভোর থেকে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির গতিবেগ সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তা-ঘাট-বাজার সব ফাঁকা, প্রায় জনশুণ্য হয়ে পড়েছে।
এ অঞ্চলের সকল নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে। এ জেলার তিনটি পৌরসভাসহ নিম্নাঞ্চলের কমপক্ষে ১’শ গ্রাম ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। ভরা আমাবশ্যার গোনে ‘সিত্রাং’ এগিয়ে আসায় জলোচ্ছাসে জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কায় নদীসংলগ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। মোংলা সমুদ্র বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকাকে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।
আবহাওয়া খুব দুর্যোগপূর্ণ হওয়ায় মোংলা বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহণের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব (বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ) কালাচাঁদ সিংহ জনকণ্ঠকে সোমবার দুপুরে (২৪ অক্টোবর) জানিয়েছেন । তিনি বলেন, সকাল ১০টায় জরুরি বৈঠক শেষে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এরই মধ্যে বিদেশী জাহাজসহ সবে নৌযানকে সতর্কতাবস্থায় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে¡ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জেলা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্টিত হয়েছে। সভা শেষে জেলা প্রশাসক জনকণ্ঠকে বলেন, এ জেলায় প্রাথমিকভাবে ৩৪৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। সমন্বিত উদ্যোগে মাইকিং করে ঝূকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়ন কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ২৯৮ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মোংলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক শিহাব কবির বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টির সাথে সাথে ঝড়ো বাতাস বইছে। ঘূর্নিঝড় সিত্রাং আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মোংলা সমুদ্র বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকাকে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এদিন সোমবার) ভোর ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত মোংলায় ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর মোংলা বন্দরসহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বইছে বলে মোংলা আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানিয়েছেন।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় সকল বনজীবীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বনবিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়িগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন ।
এদিকে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদে নিতে সকল প্রকার কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলার স্টাফ অফিসার (অপারেশন) লেঃ কমান্ডার মোঃ মহিউদ্দিন জামান। বঙ্গোপসাগর ও বিভিন্ন নদ-নদীতে থাকা নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হচ্ছে। উপকূলে ঝুকির মধ্যে থাকা বাসিন্দাদের প্রয়োজনে কোস্টগার্ডের বেজ ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহর বুনিয়া এলাকার হামিদুর রহমান বলেন, সিত্রাং যদি সিডরের মত রূপ নেয়, তাহলে আমাদের খুব ক্ষতি হবে। নদীবেষ্টিত আমাদের এই ইউনিয়নকে ঝড় জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য কোনো বাঁধও নেই। জলোচ্ছ্বাস হলে অনেক জানমালের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে আমন ও রবিশস্যের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
রামপাল, মোংলা, কচুয়া, শরণখোলা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ প্রায় অনুরূপ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সুন্দবনসংলগ্ন শরণখোলার সাউথখালী এলাকার গনি হওলাদার জানান, সমূদ্রে ফুঁসে উঠেছে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে।
টিএস