রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে বুধবার রাতে নিহত মো. গোলাম মোস্তাকিম শাহরিয়ারের মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তার মৃত্যু ছাদ থেকে পড়ে দুর্ঘটনা, নাকি আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্নের। রহস্যজনক কারণে তার লাশের ময়না তদন্তও হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে এখন ক্যাম্পাসে তার সহপাঠীদের মধ্যে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
শাহরিয়ারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেহেদি হাসানের দাবি, এটা কোনো আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা না। এটা ষড়যন্ত্র হতে পারে। মৃত্যু মানুষের হাতে নেই। কিন্তু সেটার কারণ জানাটা জরুরি।
গণমাধ্যমে এ নিয়ে অনেকে মুখ খুলতে না চাইলেও শাহরিয়ারের আরেক বন্ধু মিজানুর রহমান ধারণা করেছেন, এটি হয়ত দুর্ঘটনা। শাহরিয়ার আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল। একসঙ্গে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছি। সে আসলে আত্মহত্যা করার মতো ছেলে নয়।
শাহরিয়ারকে উদ্ধার করা ব্যক্তিদের একজন রাশেদুল ইসলাম। তিনি হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে দ্রæত রুম থেকে বের হয়ে দেখি, হলের নীচে টিউবওয়েলের শানের ওপর একজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন তার জ্ঞান ছিল না। সেখানে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। পরে আরও কয়েকজন মিলে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নির্মাণশ্রমিক নূর নবী বলেন, আমি নামাজ পড়তে হলে যাওয়ার সময় ওপর থেকে টি-শার্টের মতো কিছু একটা পড়তে দেখি। সেখানে গিয়ে দেখি একজন পড়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থায়। আমি চিৎকার করলে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা সবাই ছুটে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শী হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী এম হাসান হিমেল বলেন, শাহরিয়ার যখন কলের শানের উপরে পড়েছিল, তখন জোরে শব্দ হয়েছিল। পাশেই আমার রুম ছিল। জানালা দিয়ে দেখেছি পা উপুড় ছিল। চার তলায় কিছু ছেলে ছিল, তারা পড়ে গেছে বলে চিৎকার করছিল। তার কাছে কোনো মোবাইল ছিল না, ঘটনাস্থলেও পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন পাওয়া যায় নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, যেহেতু তার পাশে কেউ ছিল না তাই সে কীভাবে পড়ে গিয়েছে এটা জানা যায়নি। আমাদের কাছে এমন কোনো আলামত আসেনি যা দেখে আমরা বলব যে এটা পরিকল্পিত হত্যা। তবে তার আত্মীয়স্বজন বা সহপাঠীরা যদি তদন্তের জন্য দাবি জানায়, তাহলে আমরা অবশ্যই এটা নিয়ে তদন্ত করব।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত ৮টার দিকে রাবির শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে ৮ নং ওয়ার্ডে তার মৃত্যৃ হয়। এ নিয়ে রাতভর তুলকালাম কাণ্ড ঘটে রামেক হাসপাতালে। এক পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও তদন্ত কমিটি গঠনের পর শুক্রবার থেকে চিকিৎসা সেবায় ফিরেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এসআর