ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

১৯ বছর পর হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি 

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর 

প্রকাশিত: ১৮:০০, ১৯ অক্টোবর ২০২২

১৯ বছর পর হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি 

হত্যা মামলার আসামি

মাদারীপুর জেলার শিরখাঁড়া ইউপি নির্বাচনে হেরে গিয়ে তৎকালীন চেয়ারম্যানের ভাই আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারকে প্রকাশ্যে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা মামলায় ৩ জনের ফাঁসি ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। দোষ প্রমাণ না হওয়ায় ৫ আসামীকে খালাস দেয়া হয়। 

বুধবার (১৯অক্টোবর) দুপুরে মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় প্রদান করেন। দীর্ঘ ১৯ বছর পর হলেও মামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাদীর পরিবার। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানান আসামীপক্ষের আইনজীবি। এদিকে দন্ডপ্রাপ্ত সবাই চরমপন্থী দলের সক্রিয় সদস্য বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষ।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৯ অক্টোবর মাদারীপুর সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফর খালাসী তার দলবল নিয়ে তৎকালীন ও বর্তমান চেয়ারম্যান মজিবর রহমান হাওলাদারের ভাই আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার দিনই নিহতের স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৮-১০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। 

২০০৫ সালে তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ১৯ জনের নামে সংম্পৃক্ততা পেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেন ও ৩ জনকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন। পরে আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারসহ ৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। 

দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে বুধবার (১৯অক্টোবর) দুপুরে মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক লায়লাতুল ফেরদৌস মামলার আসামী মাহজারুল ইসলাম মঞ্জু, মাছিম শেখ ও জসিম শেখকে (তিনজন) মৃত্যুদন্ড এবং হোসেন হাওলাদার, মনজুর আলী, সাইদুর হাওলাদার, সূর্য মাতুব্বর, ফয়েজ শেখ, সুজাল মাতুব্বরকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দেন (৬ জনকে) ও দন্ডপ্রাপ্ত সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। 

এছাড়া দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় আশরাফুল, আমিন সিদ্দিক, নুরুল হক বয়াতী, মহসিন হাওলাদার, সৈয়দ আলীকে (৫ জনকে) খালাস প্রদান করেন।

মামলার বাদী সেলিনা বেগম বলেন, ‘রায়ের প্রতি আমরা সবাই সন্তুষ্ট। সরকারের কাছে একটাই চাওয়া দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হোক।’

নিহত আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের বড় মেয়ে শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমরা নায্য বিচার পেয়েছি। উচ্চ আদালতেও যেন এই রায় বলবৎ থাকে। বাবার আদর ছোটবেলা থেকেই পাইনি। এই রায়ের মাধ্যমে অপরাধীরা ভবিষ্যতে এমন অন্যায়-অপরাধ করতে সাহস পাবে না।’

মাদারীপুর আদালতের পিপি এ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান সিং জানান, আসামীপক্ষ ভয়ভীতি দেখানোতে সাক্ষীরা আদালতে আসতে বিলম্ব করায় মামলা দীর্ঘদিন পরে রায় হয়েছে। দন্ডপ্রাপ্তরা সবাই চরমপন্থী দলের সদস্য। তারা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতেই প্রকাশ্য দিবালোকে এই হত্যাকান্ড চালায়।

এদিকে রায়ে নায্য বিচার পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে যাবার কথা জানান আসামীপক্ষের আইনজীবি এ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়া।

উল্লেখ্য, মামলার এজাহারে থাকা আসামীদের মধ্যে লুৎফর খালাসী ও তার দুই ভাই ওবায়দুর খালাসী ও খায়রুল খালাসীসহ ৫ জন আইশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে বন্দুকযুদ্ধে বিভিন্ন সময় নিহত হন। এছাড়া জাকারিয়া অপু, শামীম হোসেন, নুরুউদ্দিন মাতুব্বরসহ ৪ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। হত্যাকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততা থাকলেও রায়ের আগেই মৃত্যু হওয়ায় তাদেরও অব্যাহিত দেন আদালত।

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×