রাস্তায় ইট ফেলে সাংবাদিক ও শিক্ষকের পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে
ভোলায় বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টুয়ান্টিফোরের সাংবাদিক জুন্নু রায়হানসহ তার পরিবার গত ৪ দিন ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এতে করে সাংবাদিক জুন্নু রায়হান ও তার স্ত্রী একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তার কর্মস্থালেও যেতে পারছেনা। এক ধরনের গৃহবন্ধি হয়ে অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
পরিস্থিতি এমন যে গত বৃহস্পতিবার সকালে তার এক মাত্র পুত্র সন্তান চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র স্কুল থেকে ফিরে বাসার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে গত ৪ দিন আজ রবিবার পর্যন্ত ওই শিশুটি বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকা মা বাবার কাছে যেতে পারেনি। এ ঘটনাটি ঘটে ভোলা শহরের গাজীপুর রোডে এর জজ কোর্টের সামনে।
অভিযোগ রয়েছে, তার বাসার প্রায় ৩৫ বছরের চলাচলের রাস্তা পাশ্ববর্তী প্রতিপক্ষরা ইট রেখে বন্ধ করে দেয়ায় এ পরিস্থিতি হয়েছে। এ ব্যাপারে ভোলা থানা পুলিশ হাটাচলার ওই রাস্তা উন্মুক্ত করতে নিদের্শ দিলেও তা মানা হয়নি। এ ঘটনায় ভোলার পেশাদার সাংবাদিকরা নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত ওই সাংবাদিক পরিবারকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে তার হাটার রাস্তা উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবী জানান।
সাংবাদিক ও কলেজ শিক্ষক জুন্নু রায়হান জানান, তার প্রতিবেশী মোকাম্মেল হক ঝন্টুর বড় ভাইয়ের কাছ থেকে ১৯৮৭ সালে তারা ৭ শতাংশ জমি কিনে নির্বিঘ্নে বসবাস করেছে। এমনকি বাসার সামনে দিয়ে চলাচলের পথ যৌথ ভাবে প্রায় ২৫ বছর সকলেই ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু ২০২০ সালে ঝন্টু গং তাদের পৈতৃক জমি ভাগ করার সময় বাড়ির এজমালি পথের জন্য কোন জমি না রেখেই তাদের ভাইবোনদের মধ্যে সমুদয় জমি ভাগ বাটোয়ারা করা হয়। এজমালি পথ রাখার জন্য জুন্নু রায়হান ওই সময় ভোলা পৌর সভার শালিস বোর্ডের সভাপতি ও কাউন্সিলরকে শাহে আলম অনুরোধ করেন। তিনি চেষ্টাও করেন। কিন্তু ঝন্টু গং এজমালি পথ রাখতে রাজি হন নি। পরে জুন্নু রায়হানের বাড়ির মধ্য দিয়ে ৮ ফুটের একটি পথ নিতে চায়। এতে করে জুন্নু রায়হানের বাড়ির এক শতাংশ জমি চলে যাবে। ওই প্রস্তাবে জুন্নু রায়হান রাজি হয়নি। পরে পৌরসভার প্যানেল মেয়র সালাউদ্দিন লিংকনসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক যাতায়াতের জন্য ৪ ফুটের পথ রেখে অর্থাৎ প্রায় আধা শতাংশ জমি ছেড়ে দিয়ে জুন্নু রায়হান তার বাড়ির বাউন্ডারি দেওয়ালে তুলেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঝন্টু গং যাতায়াতের পথে দেওয়াল তুলে তাকে প্রথম অবরুদ্ধ করে রাখে। এমনিক আদালতে দেওয়ানি ২৯৮/২১ নং মামলা করেন । র্দীঘ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর গত প্রায় ৩ মাস আগে পৌর মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান নিজে উপস্থিত থেকে ওই দেওয়াল ভাঙ্গার ব্যবস্থা করে সকলের চলাচলের পথ উন্মুক্ত করে দেন।
কিন্তু গত ১৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার আবার ওই চলাচলের রাস্তায় ইট স্তুপ করে রেখে পথ আটকে দেয়। এদিকে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিলে সেখানে যাতে কাজ করতে না পারে সেজন্য ভোলা এডিএম কোর্টে আবেদন করা হয়। আদালত পুলিশকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশনা দেয় এবং ইট সরিয়ে ফেলার জন্য নির্দেশ দেন ও পুলিশ তাদের নোটিশ দেন।
কিন্তু প্রতিপক্ষ সেখানে ইটের স্তুপ না সরিয়ে পথ বন্ধ করে রেখেছে । পুলিশ ইট সরিয়ে চলাচলের পথ উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বললেও ঝুন্টু গং তা অমান্য করে। এর ফলে সাংবাদিক জুন্নু রায়হান যেমন তার কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। তেমনি তার স্ত্রীও স্কুলে যেতে পারছেন না।
সাংবাদিক জুন্নু রায়হান জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে তার এক মাত্র পুত্র সন্তান চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র স্কুলে যায়। স্কুল শেষে ফিরে দেখেন বাসার পথ বন্ধ। যে কারণে গত ৪ দিন ওই শিশু বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকা মা বাবার কাছে যেতে পারছে না। ওই শিশুটিকে তার আত্বীয়ের বাসায় দিন কাটাতে হচ্ছে। এমন অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ওই সাংবাদিক পরিবারটি।
এদিকে ঝুন্টু গং পক্ষ বলেছে, আমাদের জমি দিয়ে অন্য কাউকে হাটতে দিবো না। আমাদের পথ আমরা বন্ধ করেছি। আমরা জুন্নু রায়হানদেরকে ৮ ফুটের রাস্তার জমি ছাড়তে বেলেছি। সে ৪ ফুট ছাড়ছে। এতে রাস্তা হয় না। সে ৮ ফুট না ছাড়লে আমাদের জমি দিয়ে তাকে কোন পথ দেয়া হবে না। অপর দিকে ঝন্টুর ছোট বোন রুমা জানান, তার পৈত্রিক জমি ৫ শতাংশ পাওয়ার কথা থাকলেও তাকে দেয়া হয়েছে প্রায় সোয়া ৪ শতাংশ। তার প্রাপ্ত জমি ভাই বোন কেউ বুঝ দেয় না। তার পুরো জমি তাকে বুঝিয়ে দিলে তার জমির সামনে দিয়ে তখন হাঁটা চলার জমি কতোটুকু ছাড়বে তখন সিদ্ধান্ত নিবেন। এ অবস্থায় সাংবাদিক জুন্নু রায়হানের পরিবার ঝুন্টু গং দের কাছ থেকে জমি কিনে এখন চরম বিপাকে পড়েছে।
এ ব্যাপারে ভোলা মডেল থানার ওসি শাহিন ফকির জানান, আদালতের নির্দেশ অনুসারে পুলিশ ১৪৪/১৪৫ জারি করছে। শান্তিশৃংখলার জন্য নোটিশ প্রদান করেছি। কোর্টের দিকনির্দেশনার বাইরে আমাদের কিছু করার নেই।
টিএস