ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

হাত বাড়ালেই মাদক

পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত 

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৮:০১, ১৩ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ১৮:০২, ১৩ অক্টোবর ২০২২

পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত 

মাদক

বাউফলের শহর থেকে গ্রাম, হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক। প্রকাশ্যে চলছে এর বেচা কেনা । আর এই মাদকের অধিকাংশ ক্রেতাই হচ্ছে কিশোর ও যুবক । শতাধিক পয়েন্টে চলছে মাদক বিক্রি ও সেবন । স্বামী, স্ত্রী, ভাই, ছেলে ও মেয়ে জামাইসহ চিহ্নিত কয়েক ব্যক্তি জড়িত এই মাদক ব্যবসার সাথে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের  মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম, সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস, নবারুন সার্ভে ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস, কাগুজিরপুল মল্লিক পাড়া, ইটভাটা এলাকা, উপজেলা পরিষদ চত্বর, এমপির ব্রিজ ও কালিবাড়ি, ধুলিয়া ইউনিয়নের ধুলিয়া লঞ্চঘাট, ধুলিয়া স্কুল, মঠবাড়িয়া চৌরাস্তা, জামাল কাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁদকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কালিশুরী ইউনিয়নের কালিশুরী ব্রিজ এলাকা, পোনাহুরা, বাহেরচর, নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী লঞ্চঘাট, ধানদী বাজার, বাংলা বাজার, মেম্বার বাজার, বড়ডালিমা  এলাকা, কালাইয়া ইউনিয়নের কবরস্থান রোড, মুড়িঘর, খাদ্য গুদাম, কালাইয়া কলেজ ক্যাম্পাস, ডকইয়ার্ড, দাশপাড়া ইউনিয়নের কাঠের পোল, চৌমুহুনী, বোর্ড অফিস, নওমালা ইউনিয়নের বাবুর হাট, নগরের হাট, আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের কাশিপুর বাজার, মাদবপুর ও গোলাবাড়ি,  বগা ইউনিয়নের বগা লঞ্চঘাট, কেশবপুর ইউনিয়নের কেশবপুর বাজার, মমিনপুর বাজার, ভরিপাশা খেয়াঘাট গাঁজা ও ইয়াবার  হটস্পট হিসেবে পরিচিত। এসব স্পটে হরহামেশায় চলে গাঁজা ইয়াবা সেবন ও বিক্রি। 

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রধান চারটি রুট দিয়ে মাদকের চালান আসে। গাঁজার চালানের অন্যতম  হলো ঢাকা-কালাইয়া নৌ রুট। ঢাকা সদরঘাট, ফতুল্লা ও চাঁদপুর থেকে লঞ্চযোগে আসে গাঁজা। এসব চালান শেষ রাতে ধুলিয়া, নিমদী ও কালাইয়া লঞ্চঘাট থেকে চলে যায় বিভিন্ন মাদক স্পটে। 

এছাড়াও সড়ক পথে বরিশাল থেকে ভাতশালা হয়ে কালিশুরীর পথে, দুমকি থেকে বগা ও পটুয়াখালীর লোহালিয়া থেকে বাউফলে মাদকের চালান আসে। মাদকের চালান প্রথমে চলে যায় কারবারিদের হাতে। দ্বিতীয় ধাপে চলে যায় মাদক সেবনকারীদের হাতে। বিভিন্ন কলাকৌশলে চলে মাদকের খুচরা বিক্রি। মোবাইল কল, হোম ডেলিভারি ও হাতে হাতে হয় কেনা-বেচা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাদক সেবী জানায়, প্রতি গাঁজার পোটলা বিক্রি হয় ১শ খেকে দেড়শ  ও প্রতি পিস ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি হয় ২শ থেকে আড়াইশ টাকা করে।  উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবকদের মধ্যে এর চাহিদা বেশি ।

অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, বাউফল উপজেলায় গাঁজা ও মাদক ব্যবসার বেশ কয়েকটি  শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। যার মধ্যে গাঁজার বড় সিন্ডিকেট কালাইয়াতে। এখানে ৪-৫জন খাঁজা ব্যবসায়ী থাকলেও টপে রয়েছেন বন্দরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ায় একটি পরিবার। ওই  পরিবারের সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। স্বামী, স্ত্রী, ভাই, ছেলে ও মেয়ে জামাইসহ একটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের মাধ্যমে চলে বেচা-কেনা। এসিন্ডিকেট কালাইয়ার চাহিদা পূরণ করে পৌর শহর, নাজিরপুর, দাশপাড়া ও চন্দ্রদ্বীপে গাঁজা সরবরাহ করে থাকেন। 

নিজেকে পুলিশের সোর্স পরিচয় ও স্থানীয় একটি মহলকে ম্যানেজ করে চলে তাঁদের মাদক ব্যবসা। কেউ প্রতিবাদ করলে ওই গ্যাং বাহিনীর হামলা শিকার হতে হয়। মাদক ব্যবসা করে গত দুই বছরে ভাগ্য খুলে গেছে এ সিন্ডিকেটের। এক সময় শ্রমিকের কাজ করলেও এখন সে লাখপতি। দিন দিন বাড়ছে অর্থ-সম্পদ। এর পাশে রয়েছে আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ী। কালাইয়া বন্দরের পাশেই বড় ডালিমা খানকা এলাকায় একাধিক মাদকসহ গ্রেফতার এক মাদক ব্যবসায়ীর রয়েছে আরেকটি মাদক সিন্ডিকেট। এদিকে কালিশুরীতে রয়েছে আরও তিনটি মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডেকেট। এসব মাদক সম্রাটদের মদদ দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতারা। 

এদিকে পুলিশ নামে মাত্র মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করলেও রাঘববোয়ালেরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। সচেতন নাগরিকেরা বলেছেন,‘ মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। এগিয়ে আসতে হবে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের। 

এবিষয়ে বাউফল থানা ওসি মোঃ আল-মামুন সাংবাদিকদের বলেন,‘ পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান চলছে। এ অভিযান আরও জোরদার করা হবে।’ 
 
 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×