সেমিনারে বক্তারা
বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানামুখী বৈরী অভিঘাত সত্তে্বও সুন্দরবন আপন মহিমায় টিকে আছে। এর আয়তনও বাড়ছে। তবে গত ৫০ থেকে ৬০ বছর বা ততোধিক সময়ের তথ্য-উপাত্ত বলছে- সুন্দরবনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন দৃশ্যমান।
লবণাক্ততা বৃদ্ধি সত্তে্বও কোনো কোনো প্রজাতির (গেওয়া, গরানসহ) বৃক্ষ-গুল্মের বৃদ্ধির প্রবণতা আশাব্যঞ্জক অবস্থায় রয়েছে। আবার কোনো কোনো প্রজাতির (সুন্দরীসহ) উপর অনেকটাই বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ শিকারসহ নির্বিচারে সন্নিহিত এলাকার নদী ও খালে চিংড়ির পোনা আহরণে মৎস্য প্রজনন, বিস্তার ও বংশ রক্ষায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন বাড়ছে কিন্তু প্রকৃত অর্থে ইকো-ট্যুরিজম বলতে যা বোঝায় সেটা কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। সুন্দরবনে পর্যটনে গিয়ে লাউড স্পিকার ব্যবহার করায় বন্যপ্রাণী ও পক্ষিকুলের আবাস, প্রজনন ও বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটছে।
খুলনায় সুন্দরবনের উপর যৌথ ও সমন্বিত গবেষণার উদ্যোগ এবং অস্ট্রেলিয়ান গবেষণা সংস্থার সহায়তার অভিলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উপস্থাপিত বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধ ও আলোচনায় এসব বক্তব্য উঠে আসে।
রবিবার (৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সম্মেলন কক্ষে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
এ সময় অস্ট্রেলিয়ান প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. নোরা ডেভো সুন্দরবন নিয়ে গবেষণায় সে দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থার আগ্রহের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০ কোটি টাকার গবেষণা সহায়তা প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে তিনি দৃঢ় আশাবাদী।
অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচার রিসার্চ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সুন্দরবন বন বিভাগ, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য বিভাগ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, জিআইজেডসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সুন্দরবন নিয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে গবেষণা, কার্যক্রম বাস্তবায়ন, উদ্যোগ ও পরিকল্পনা এবং তথ্য-তত্ত্ব তুলে ধরেন। এ আলোচনায় সুন্দরবনের ওপর বৃষ্টিপাত, লবণাক্ততা ও তাপমাত্রার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে বক্তব্য দেন অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচার রিসার্চের প্রতিনিধি প্রফেসর অ্যান ফ্লেমিং, আইইউসিএন (এশিয়া অঞ্চল) এর সাবেক পরিচালক ড. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো. জহির ইকবাল, বাংলাদেশ বন বিভাগের পক্ষে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগ) নির্মল কুমার পাল, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পশ্চিম) ড. আবু নাসের মহসীন হোসেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক মো. রাকিবুল হাসান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পক্ষে পাইকগাছা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. লতিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ মৎস্য বিভাগের পক্ষে সাসটেইনেবল কোস্টাল এ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট (খুলনা বিভাগ) এর উপ-প্রকল্প পরিচালক সরোজ কুমার মিস্ত্রি, জিআইজেড এর পরামর্শক পঞ্চানন কুমার ঢালী, বাংলাদেশ পরিবেশ ও উন্নয়ন সোসাইটি (বেডস) এর প্রধান নির্বাহী মো. মাকসুদুর রহমান।
সেমিনারে দেশের শীর্ষ স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি সংস্থার শিক্ষক, গবেষক, বিজ্ঞানী ও প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ফরেস্ট্রি এ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক চামেলী সাহা।
এসআর