কক্সবাজারে সাগরপাড়ের লাবণী পয়েন্টে
টানা কয়েক দিনের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকরা ভ্রমণে এসে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দিনের বেলায় আনন্দ আর হৈ-হুল্লোয় সাগর তীরে মেতে উঠলেও সন্ধ্যা ও রাতে হোটেল রেস্তোরা মালিকরা গলা কাটা ব্যবসার ফাঁদে ফেলছে ওই ভ্রমণ পিপাসুদের।
জানা যায়, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের বিচ কর্মীরা কাজ করলেও হোটেল রেস্তোরা মালিকরা কিছুই মানছেনা। এবার পর্যটক আসলে তাদের অর্ধেকমূল্যে থাকা ও খাবারের সুযোগ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন হোটেল-রেস্তোরার মালিকরা। কিন্তু পর্যটকের ঢল নামায় এক শ্রেণির লোভী মালিক তাদের প্রতিশ্রুতি নিজেরাই ভেঙে ফেলেছে।
সাগরপাড়ের লাবণী পয়েন্টে আবাসিক হোটেল অভিসারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ পেয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট উপস্থিত হয়ে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে। পর্যটকদের ঢল নেমেছে দেখে রেস্তোরা মালিকরা গলাকাটা বাণিজ্য শুরু করে দিয়েছে। ভাত ছাড়া সাগরের কোরাল (নকল কোরাল) প্রতিপিসের দাম নিচ্ছে আড়াই’শ থেকে তিন’শ টাকা। খাবার টেবিলে বসে রূপচাঁদার অর্ডার করলেতো কোনো কথাই নেই, শিশু-কিশোরের বিলও মাথাপিচু পাঁচ’শ টাকার নিচে নেই। সরকারিভাবে ২২দিন সাগরে নৌকা না নামার নিষেধাঙ্গার বিষয়কে কেন্দ্র করে রেস্তোরা মালিকরা বড় গলায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। তাই মাছের আকালের কথা বলে পর্যটকদের কাছ থেকে চড়া মূল্য হাতিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে, আবাসিক হোটেল মালিকরা কথা দিয়েছিলেন শতকরা ৬০ ভাগ কমে রুম ভাড়া দেয়া হবে। কিন্তু গুটি কয়েক হোটেল ছাড়া সব আবাসিক হোটেল কটেজ মালিকরা পর্যটকদের কাছ থেকে রুম ভাড়া আদায় করছে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। তারপরও টানা ছুটি পেয়ে চাকুরিজীবিরা কক্সবাজারে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন, পাথুরে সৈকত ইনানী, হিমছড়ি, রামু বৌদ্ধ বিহার ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দিরে।
এক পর্যটক দম্পতি বলেন, টানা কয়েক দিনের ছুটিতে কক্সবাজার ছুটে এসেছি। সমুদ্র দেখে অনেক ভালো লাগছে। তবে হোটেল রেস্তোরায় বেশি মূল্য নিয়েছে। যা আমাদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। বাড়ি থেকে বিকাশে টাকা এনে ঢাকায় রওনা দিচ্ছি।
জানা গেছে, টানা কয়েক দিনের ছুটিতে পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বেশির ভাগ হোটেল ও গেস্টহাউস বুকিং হয়েছিল। লাখের অধিক পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে।
হোটেল মালিকরা বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, হোটেল-মোটেলে যে পরিমাণ ধারণক্ষমতা তার চেয়েও লোকসমাগম বেশি হয়েছে। প্রতিটি রুম বুক, তাহলে বেশি টাকা নেয়ার প্রশ্নই উঠেনা।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি পয়েন্টে আমাদের তথ্য কেন্দ্র রয়েছে। পর্যটকরা যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক রয়েছে। পাশাপাশি সমুদ্র গোসল করতে নামা পর্যটকদের জন্য আমাদের বিচকর্মী ও সী লাইফ গার্ড কর্মীরা কাজ করছে। পর্যটকদের হয়রানি রোধে ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছে। বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ।
নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা, তথ্যসেবা, পানীয় জলের ব্যবস্থাসহ নানা সেবামূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে আলাদা ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। আপত্তিকর ঘটনা এড়াতে তারা সবসময় সজাগ রয়েছে।
এমএইচ