জেলা পরিষদ নির্বাচন
আসন্ন রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও মাঠে নিশ্চুপ রয়েছেন দুজন। প্রচারেও নেই তাদের কোনো সাড়া। তবে মাঠ সক্রিয় করে রেখেছেন আওয়ামী লীগের মানোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। তিনি কাপ-পিরিচ নিয়ে মাঠ চুষে বেড়াচ্ছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধীতায় নেমেছেন বিদ্রোহী বহিস্কৃত জেলা আ.লীগের নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান আক্তার। তিনি লড়ছেন মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে।
মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে আকতারের পক্ষে কোনো সাড়া না থাকলেও তিনি আছেন মাঠে। তবে প্রতিদিনই শুধু প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করছেন তিনি। সর্বশেষ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে এরইমধ্যে গভীর রাতে পোস্টার সাঁটাতে গিয়ে গ্রাম পুলিশ মারধর ও একজনকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে আকতারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মোহনপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন উপজেলার ধুরইল ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার আব্দুল ওহাব। মামলায় গ্রাম পুলিশ আসাদুল ইসলাম (২২) ও সোহাগ হোসেনকে (২০) মারধর এবং মহব্বতপুর গ্রামের মোতালেব হোসেনকে (৪০) গাড়ি চাপা দিয়ে জখম করার অভিযোগ আনা হয়েছে আকতারের নির্বাচনী এজেন্টের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মামলায় রাতে জোরপূর্বক ইউনিয়ন পরিষদের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশেরও অভিযোগ এনেছেন আব্দুল ওহাব।
জানা গেছে, গত বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউনিয়ন পরিষদে পোস্টার লাগাতে যান বিদ্রোহী প্রার্থী আকতারের লোকজন। এসময় তাদের হাতে মারধরের শিকার হন গ্রাম পুলিশ। খবরে পেয়ে সেখানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উপস্থিত হলে তার উপর চড়াও হন স্বতন্ত্রপ্রার্থী আখতারুজ্জামানের কর্মীরা। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের গণধোলাই দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রেখে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ গিয়ে সাতজনকে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। তবে সকালে স্বতন্ত্র প্রার্থীর আইনজীবীর জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
ধুরইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, গত বুধবার দিবাগত রাতে তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান আকতারের মোটরসাইকেল প্রতীকের পোস্টার সাঁটাতে যান আবু রায়হান ও তার কয়েকজন সহযোগী। এসময় তারা স্থানীয় এমপি আয়েন উদ্দিন ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধ মীর ইকবালকে গালিগালাজ করতে থাকেন। গালাগালির কারণ জানতে চাইলে গ্রাম পুলিশ আসাদুল ইসলামকে তারা মারধর করে। এ ঘটনা জানতে পেরে গ্রামবাসী তাদের ঘিরে রেখে গণধোলাই দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
চেয়ারম্যান বলেন, গ্রামবাসীর রোষানলে পড়ে পালাতে গিয়ে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে তাদের মাইক্রোস চাপা দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর গ্রামবাসী আকতার সমর্থকদের গাড়ি ভাঙচুর করে।
যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান আখতার বলেন, আমার নির্বাচনের প্রধান সমন্বয়কারী এ্যাড. আবু রায়হান মাসুদসহ বেশ কিছু কর্মী দুইটি গাড়ি নিয়ে পোস্ট টানানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদে যায়। সেখানে পোস্টার টানাতে গ্রাম পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।
এদিকে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতারুজ্জামানের নির্বাচনী এজেন্ট আবু রায়হান মাসুদ নির্বাচনী বিধি লংঘন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ে রির্টানিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আ.লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। লিখিত অভিযোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতারুজ্জামানের নির্বাচনী এজেন্ট আবু রায়হান মাসুদ গত ৫ অক্টোবর মোহনপুর থানার ধুরইল ইউনিয়নে প্রবেশ করে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মোটরসাইকেল প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য বলেন। সেই সঙ্গে ভোট না দিলে শহরে প্রবেশ করতে দিবে না বলে হুমকিও প্রদর্শন করেন। এত রাতে দলবদ্ধ হয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখে গ্রাম পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসা করলে আবু রায়হান মাসুদ ও তার লোকজন ওই গ্রাম পুলিশকে মারপিট করে। এ সময় আহত গ্রাম পুলিশের চিৎকারে এলাকাবাসী বের হয়ে আসলে তারা বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে নিয়ে চলে যাওয়ার সময় মোতালেব নামে একজনকে আহত হয়। তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতারুজ্জামান ও তার নির্বাচনী এজেন্ট আবু রায়হান মাসুদ নির্বাচনী বিধি লংঘন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নির্বাচন আইন বহির্ভূত। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রির্টানিং অফিসারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আ.লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধ মীর ইকবাল।
রাজশাহী মহানগর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, দলীয় মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধ মীর ইকবালের পক্ষে জনপ্রতিধি ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। তিনি আচরণবিধি অনুসরণ করে ভোটের প্রচার করছেন। তবে জনপ্রতিনিধিদের সাড়া না পেয়ে নানা অপর্কম করে ভোটের মাঠে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির পায়তার করছেন আ.লীগ থেকে বহিস্কৃত আকতারুজ্জামান।
এমএইচ