জামিউল ইসলাম জীবন
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার সমর্থকদের হামলায় আহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জামিউল ইসলাম জীবন মারা গেছেন।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি জামিউলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে আইসিইউতে চিৎিসাধীন অবস্থায় জামিউল মারা গেছে। এদিকে মৃত্যুর পরে জামিউলের মরদেহ মর্গে রাখা হয়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে রাজপাড়া থানার মাধ্যমে নিহতের মরদেহ তার পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
জামিউল নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম ফিরোজের ভাতিজা ও ফরহাদ হোসেনের ছেলে। নিহত জামিউল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জীবনের চাচা উপজেলা অওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কলেজ শিক্ষক এস এম ফিরোজ জানান, আইসিইউতে লাইভ সাপোর্টে থাকা আমার ভাতিজা জীবনকে গত বুধবার সকালে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা মৌখিকভাবে জানান, জীবন মারা গেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই তাকে আবারও আইসিইউতে নেওয়া হয় এবং লাইভ সাপোর্ট দেওয়া হয়। পরে আমরা আইসিইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সদুত্তর পাইনি।
তিনি জানান, আমাদের জানানো হয়, সে জীবিত থাকায় তাকে লাইভ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। আরও ৭২ ঘণ্টা লাইভ সাপোর্টে থাকবে। এ ধরনের নাটক শেষে আজ দুপুরে আমার ভাতিজার মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে রাজপাড়া থানার মাধ্যমে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে জেনেছি। তবে ময়না তদন্ত শেষে আবার কোন নাটকের অবতারণা করা হবে তা নিয়ে আশঙ্কা করছি। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের শাস্তি দাবি করছি।
আওয়ামী লীগ নেতা এস এম ফিরোজ জানান, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে নলডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে মসজিদের মাইক চুরির সালিশে পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফেসবুকে লাইভ করে জামিউল। এরই জেরে সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার সমর্থকরা জামিউলকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
এদিকে, গত মঙ্গলবার জীবনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নিহতের পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম। পরদিন পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম কর্মীদেরও জানানো হয় জীবনের মৃত্যুর সংবাদ। জীবনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা চেয়ারম্যান আসাদকে গ্রেফতার ও তার বিচারের দাবীতে নলডাঙ্গা উপজেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
মঙ্গলবার দুপুরেই জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ও তার দুই ভাইসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা দায়েরের পরদিন পুলিশ মামলার আসামি উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের ভাই আলিম আল রাজীকে গ্রেপ্তার করে।
নলডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান জানান, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যেই হোক না কেনো এবং তার রাজনৈতক পরিচয় যাই হোক না কেনো, সেটা জানার দরকার নাই। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির নিশ্চিতের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। জীবন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শোক ও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এমএইচ