ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

রমেক হাসপাতালে হয়রানির হাত থেকে রেহাই পান না চিকিৎসকরাও

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২; আপডেট: ১২:১২, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

রমেক হাসপাতালে হয়রানির হাত থেকে রেহাই পান না চিকিৎসকরাও

রংপুর মেডিকেল কলেজ

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনরা হয়রানি হচ্ছে প্রতিনিয়তই। হয়রানির হাত থেকে রেহাই পান না চিকিৎসকরাও। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখিও হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি আমলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। 

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে রোগীর মৃত্যুর পরও ঘুষ না দিয়ে লাশ নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। লাশ বহনের অ্যাম্বুলেন্সও কর্মচারী সিন্ডিকেটের বেঁধে দেয়া চড়া ভাড়ায় ভাড়া দিতে বাধ্য হন রোগীর স্বজনরা। বকশিস ছাড়া এ হাসপাতালে মেলে না সেবা। 

এবার হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে বকশিস দাবি করছেন চুক্তিভিত্তিক সিন্ডিকেটের কয়েকজন কর্মচারী। কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, সেখানে দেখা যায় তিনজন কর্মচারী এসেছেন ওই কর্মকর্তার কাছ থেকে বকশিস নিতে। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হন রমেক হাসপাতালের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট এ বি এম রাশেদুল আমীর। তিনি বকশিস চাওয়ার এ ঘটনা এবং রোগী হয়রানির প্রতিকার চেয়ে রমেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর গত ১৮ সেপ্টেম্বর রবিবার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই চিকিৎসক।

সেখানে রাশেদুল আমীর অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর তার মা হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তাঁর স্বজনরা। তাদের কাছে জরুরি বিভাগে ভর্তির জন্য ২৫০ টাকা দাবি করা হয়। পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মা পরিচয় জানতে পেরে তারা ৫০ টাকা ভর্তি বাবদ নেন। বাস্তবে হাসপাতালে সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফি ২৫ টাকা এবং সরকারি কর্মকর্তার মা এবং অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসাবে ভর্তি ফি নেয়ার নিয়ম নেই ।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ভর্তি পরবর্তী সিসিইউতে তার অসুস্থ মাকে নেয়া হলে সেখানে জরুরি বিভাগে কর্মরত দু’জন জোরপূর্বক তার ব্যক্তিগত সহকারীর কাছ থেকে ২০০ টাকা বকশিস নেন। এ সময় আমার নাম পরিচয় এবং রোগী সম্পর্কে জানানো হলে তারা বলে ‘যে স্যারের মা হোক আর যেই হোক টাকা দিতে হবে’। 
পরবর্তীতে ওই চিকিৎসক রাতে আসার পর মায়ের শয্যা পাশে অবস্থানকালে সিসিইউতে কর্মরত ওয়ার্ড বয় পরিচয়ধারী মাসুদ তার কাছে সরাসরি টাকা দাবি করে। এ সময় তিনি সেই কথাবার্তার কিছু মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেন।

ডা. রাশেদুল আমীর বলেন, এই ঘটনা আমার কাছে অত্যন্ত মানসিক পীড়াদায়ক। আমি নিজে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা হয়েও যদি হয়রানির শিকার হই, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী ? রমেক হাসপাতালের পরিচালককে ছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য, সিটি মেয়র, রমেক অধ্যক্ষ, জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার বরাবর এ অভিযোগ পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

হাসপাতালে কর্মরত একাধিক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বকশিস না পেলে রোগীর স্বজনদের উপর চড়াও হওয়া থেকে শুরু করে মারধরের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। এখানকার কর্মচারী, দালাল এবং বিভিন্ন পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ানো বকশিস সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের কাছে সবাই যেন জিম্মি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ দায় এড়াতে পারেনা বলে তারা মত প্রকাশ করেন। 

তারা আরও বলেন, হাসপাতালে ভর্তির জন্য নির্ধারিত ফি কাউন্টারের সামনে টাঙানো রয়েছে। কিন্তু, দিনের পর দিন প্রকাশ্য দিবালোকে চার/পাঁচ গুণ বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে। যা কারোরই অজানা নয়। 

এ বিষয়ে জানতে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) পরিচালক ডা. শরীফুল হাসান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগকারী চিকিৎসক এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে ওয়ার্ড বয় মাসুদকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।  


 

এসআর

×